মূল নকশায় বর্তমান স্থানেই হবে শহীদ মিনার

নির্মাণে সময় বেঁধে দিলেন মেয়র মিউনিসিপ্যাল স্কুলে হবে বিকল্প শহীদ মিনার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বর্তমান শহীদ মিনারের জায়গায় বিদ্যমান ডিজাইনে নির্মাণের পর নতুন শহীদ মিনারের বেদী হবে ২৩ ফুট এবং ৬০ ফুট উঁচু হবে স্তম্ভ।
নতুন করে শহীদ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ২১ ফেব্রুয়ারি ও অন্যান্য জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে একটি বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। সেটি হবে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে। মুসলিম হলের পাশে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ শেষ হলেও স্কুল মাঠের শহীদ মিনারটি স্থায়ীভাবে রেখে দেওয়া হবে।
শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে গতকাল চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল এলাকায় মতবিনিময় সভায় সবার মতামতের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে সভায় ৯ মাসের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেন মেয়র। এছাড়া আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শুরু করার নির্দেশনা দেন। মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ২৩২ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় শহীদ মিনার অংশে মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার এবং প্লাজা নির্মাণ করতে যে নকশা করা হয়েছে, তাতে বর্তমান শহীদ মিনারটির ভিত্তি ভাঙার পাশাপাশি মিনার আরও উঁচুতে স্থাপন করতে হচ্ছে। গত জুনে বিষয়টি সামনে এলে শহীদ মিনার সাময়িকভাবে সরানোর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। পরে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মেয়র। এর প্রেক্ষিতে গতকাল মতবিনিময় করেন।
উল্লেখ্য, পুরো প্রকল্পের আওতায় পাবলিক লাইব্রেরির অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আটতলা অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণ চলছে। সড়কের দুই পাশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের দুই অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট উপর দিয়ে একটি প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এই প্লাজা দিয়ে হেঁটে কমপ্লেক্সের উভয় অংশে চলাচল করা যাবে।
গতকালের সভায় মেয়র বলেন, বাঙালির আবেগ অনুভূতি ও ঐতিহ্যের স্মারক শহীদ মিনার। মূল নকশা ও অবয়ব অনুসারে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার, বিন্যাস ও সমপ্রসারণ কাজ বর্তমান স্থানেই ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কোনো কালক্ষেপণ করতে পারবে না।
শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ চলাকালীন জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালনের জন্য মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনার নির্মাণের অনুমতি দিয়ে মেয়র বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পরও বিকল্প শহীদ মিনার স্থাপনাটিও থেকে যাবে এবং সেইভাবেই এর স্থায়ী রূপ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমি শহীদ মিনারের সংস্কার চাই। মূল নকশা অনুযায়ী বিন্যাস ও সম্প্রসারণ চাই। তবে এটা ভাঙা বা সরিয়ে ফেলতে মন সায় দেয়নি এবং দেবেও না।
মেয়র বলেন, বাস্তবায়নাধীন সাংস্কৃতিক বলয় প্রকল্প চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া-পাওয়ার স্বপ্ন। এই স্বপ্নের শতভাগ পূরণ হলে চট্টগ্রামের শিল্প-সংস্কৃতির চাকা গতিশীল হবে। প্রকল্পটি বহুমাত্রিক নন্দিত স্থাপনাই হবে না, এর সঙ্গে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানান তথ্য-উপাত্ত, উপাদান, নিদর্শন এবং নানা প্রামাণ্য শিল্পিত উপস্থাপনার সংযোজন হবে।
তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের নানামুখী ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের কীর্তিগাথা ধারণ ও স্মরণের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজের সহযোগিতা চাই।
সভায় নাট্য ব্যক্তিত্ব আহমদ ইকবাল হায়দার তার প্রস্তাবনায় বলেন, মুসলিম হলে একটি ডরমিটরি থাকা দরকার। বক্তব্য রাখেন গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী। মতবিনিময়ে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সচিব অভীক ওসমান, চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, চসিক সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহমেদ সাকী, চবি সিনেট সদস্য মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবুসহ চট্টগ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ আমাদের পুরো পরিবার শেষ
পরবর্তী নিবন্ধজামালপুরের ছেলেটি যেভাবে বোমা মিজান