কাগজ, কালিসহ প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে দেশের প্রকাশনা শিল্প। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, গত কয়েক মাসে বইয়ের জন্য ব্যবহার্য কাগজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কালির দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। বইয়ের বাঁধাইয়ের বোর্ডের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। ফলে বেড়ে যাবে বই প্রকাশনার সামগ্রিক খরচ। এ পরিস্থিতিতে বইয়ের দাম বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না তাদের। আবার বইয়ের দাম বাড়লে পাঠক বই কেনা থেকে দূরে থাকবে।
অতি সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাগজসহ মুদ্রণ উপকরণের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন। ‘কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কাগজের অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের পুরো প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এছাড়া প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের বাজারও অস্থির। প্রকাশকদের দাবি, মানুষের বই কেনার প্রবণতা বাড়েনি, বইয়ের মূল্য বাড়লে এই কম সংখ্যক পাঠকও হারাতে হতে পারে। বর্তমান বাজারমূল্যে ছাপাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রকাশকরা বলছেন, আগামী গ্রন্থমেলায় বইয়ের দাম বৃদ্ধি পাবে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ। এ কারণে বইয়ের প্রকাশ কম হবে। বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় স্বভাবতই বিক্রিও কম হবে। এটি শুধু প্রকাশকদের জন্যই একটি দুঃসংবাদ নয়, সামগ্রিকভাবে দুঃসংবাদ পাঠক, লেখক তথা সৃজনশীল জগতের প্রত্যেক মানুষের জন্য। তাছাড়া প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে যাবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ের দামও। এর প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর। সেটিও একটি দুঃসংবাদ বটে। এ আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে প্রকাশনা শিল্পের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ করা উচিত সংশ্লিষ্টদের।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সামপ্রতিক সময়ে মুদ্রণ ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মুদ্রণ উপকরণ যেমন– কাগজ, কালি, বোর্ড, ফিল্ম, কেমিক্যাল, প্লেট ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এই পেশার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
জাতীয় মুদ্রণ ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও এক বিবৃতিতে কাগজসহ সব মুদ্রণ উপকরণের দাম কমানোর জন্য সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মুদ্রণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ পেশা ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ ব্যবসায়ীর পক্ষে বর্তমানে ব্যবসা পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে উঠেছে, যা একদিকে জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জাতীয় মুদ্রণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে এসব মুদ্রণ উপকরণের দাম হ্রাসসহ ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল করার জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার মধ্যে এমনিতেই শিক্ষার অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্যের বা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি যেভাবে আলোচনায় আসে, শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ার বিষয় সেভাবে আলোচনায় আসে না। আশঙ্কা রয়েছে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়লে চলমান শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। মানুষের খরচের বোঝা আরও ভারী হয়ে যাবে। নিম্নবিত্ত মানুষেরা পড়াশোনা চালাতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। এমনকি পড়াশোনা বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারেন অনেক পরিবার। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিকে শিক্ষার্থীদের অসুবিধাটা অনুধাবন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কীভাবে কাগজের দাম কমানো যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। অভিযোগ আছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গত কয়েক মাসে চারবার কাগজের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাইরে থেকে কাগজ আমদানির শুল্ক কমানোর দাবি করেছেন প্রকাশকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বই প্রকাশনার ক্ষেত্রেই নয়, দেশের সামগ্রিক মুদ্রণ শিল্পের স্বার্থেই সরকারের উচিত এ শিল্পের সব উপকরণের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা করা। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন, সরকারকে তা করতে হবে।