মামলায় আটকা চট্টগ্রাম কাস্টমসের ২ হাজার কোটি টাকা

২৩ হাজার মামলা বিচারাধীন ।। আটকা আছে রাজস্ব খাতের ৩০ হাজার কোটি টাকা

হাসান আকবর | বুধবার , ২৯ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

মামলার জালে আটকা পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকাসহ দেশের রাজস্ব খাতের ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২৩ হাজারের বেশি বিচারাধীন রাজস্ব মামলায় উপরোক্ত টাকা আটকে আছে। বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। একই সাথে প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে সরকারের ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতো। এদিকে মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেয়া উদ্যোগও ভেস্তে যেতে বসেছে।

সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য কিনে আনা হয়। এইচএস কোড অনুযায়ী প্রতিটি পণ্যের শুল্কহার নির্ধারিত। কিন্তু অনেক অসাধু ব্যবসায়ী শুল্ক ফাঁকি দেয়ার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নেন। বিভিন্ন সময় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাস করে নিলেও মাঝেমধ্যে ধরা পড়ে। তখন কাস্টমসের সাথে তৈরি হয় বিরোধ। কাস্টমসের মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তার টেবিল থেকে শুরু করে এই বিরোধ উপরের দিকে উঠতে থাকে। কমিশনারের কার্যালয় হয়ে মামলা যায় কাস্টমসের আপিল ট্রাইব্যুনালে। সেখান থেকে জজ কোর্ট হয়ে হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগ হয়ে মামলা নিষ্পত্তি হতে কয়েক বছর লেগে যায়। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক আটকা থাকে। চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপগুলোর প্রায় প্রত্যেকটির সাথে কাস্টমসের বিরোধ রয়েছে। রয়েছে মামলা। প্রতিটি মামলার বিপরীতে আটকে আছে কোটি কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে সরকারের আদায় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাজস্ব মামলা আপিল ট্রাইব্যুনাল, জজ কোর্ট, হাই কোর্ট পার হয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে যায়। প্রচলিত প্রক্রিয়ায় এসব মামলা নিষ্পত্তি করে টাকাগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদায়ের সুযোগ কম। শুধু আমদানি শুল্ক নয়, ভ্যাট নিয়েও মামলা রয়েছে। আয়কর নিয়ে মামলা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে আটকা পড়া রাজস্ব উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। গঠন করে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সেল বা এডিআর। এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত এডিআর বেশি সফল হয়নি। এডিআরের কার্যক্রম অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। দিনে দিনে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলেছেন, শীর্ষস্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রির তথ্য গোপন করে। তারা শুল্ক কিংবা ভ্যাট ফাঁকির চেষ্টা করে। বিষয়টি ধরা পড়লে ঠিকমতো শুল্ক বা ভ্যাট পরিশোধের তাগাদা দিলে শুরু হয় বিরোধ; যা মামলাতে গড়িয়ে বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো তথাকথিত ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য খালাস করে ব্যবসা করতে থাকে। ফলে তাদের ব্যবসা চললেও সরকারের রাজস্ব আটকে থাকে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যবসায়ীর শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। শুল্কের টাকা সরকারকে না দিয়ে ওই টাকা দিয়েই তারা ব্যবসা করেন। রাজস্ব পরিশোধ না করতে তারা নানা কৌশলে মামলা করেন বলে দাবি করেন এনবিআরের একজন কর্মকর্তা।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, শুল্ক পরিশোধ করতে সবার অনীহা। নানাভাবে গোঁজামিল দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। যখন এই অপচেষ্টা ঠেকানোর পদক্ষেপ নেয়া হয় তখন মামলা করা হয়। অনেকেই রিট করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।

তবে মামলা করে সুবিচারের আশায় আছেন জানিয়ে একজন আমদানিকারক বলেন, তারা মনে করে আমরা সব চোর। যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে শুল্ক আদায়ের চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে মামলা করতে হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভ্যারাইটিজ ইউনানি দাওয়াখানার আড়ালে ভেজাল ওষুধ বিক্রি
পরবর্তী নিবন্ধদোকানের সামনে গাড়ি রাখতে নিষেধ করায় সদলবলে হামলা