মামলার দু’বছর আগের মৃত ব্যক্তিকে রেখে পিবিআই কর্মকর্তার প্রতিবেদন

আড়াই মাস পর অব্যাহতি চেয়ে আবেদন

হাবীবুর রহমান | রবিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

মামলা দায়েরের প্রায় দু’বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন মোহাম্মদ শাহজাহান নামের নগরীর ষোলশহরের (নিজ বাড়ি সন্দ্বীপ) এক ব্যক্তি। ওই মৃত ব্যক্তি মোহাম্মদ শাহজাহানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি নালিশী মামলায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ওই ১৬ জন আসামি বাদীর স্বাক্ষর ব্যবহার করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। আড়াই মাস পর একই তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সময়, এমনকি তদন্ত চলাকালীনও জীবিত না থাকা মোহাম্মদ শাহজাহানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করেছেন। আগামী ২৩ জুলাই এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট১ এর বেঞ্চ সহকারী নুরে খোদা আজাদীকে বলেন, অব্যাহতি চেয়ে করা পিবিআই কর্মকর্তার আবেদনটি আজকে (গত বৃহস্পতিবার) বিচারক দেখেছেন এবং এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।

আদালত সূত্র জানায়, মোহাম্মদ শাহজাহানকে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে গত ২০ মার্চ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট১ এর আদালতে আবেদনটি করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্ট মেট্রোর পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর। একই আদালতে গত বছরের ২৩ মে মোহাম্মদ শাহজাহানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ বাবুল মিয়া নালিশী মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে তিনি একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর শাহজাহান চৌধুরীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অব্যাহতি চেয়ে পিবিআই কর্মকর্তার করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার প্রায় দু’বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি শাহজাহান চৌধুরী মৃত্যবরণ করেছেন। এতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, নালিশী মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তিনি ১৬ আসামির সঠিক নাম ঠিকানা, বয়স, পেশা, স্বভাব চরিত্র, বর্তমান অবস্থান, এনআইডি কার্ড, মোবাইল নম্বর, পিসি/পিআর যাচাই করে এসসিডির মাধ্যমে জানানোর জন্য সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর অনুসন্ধান স্লিপ প্রেরণ করেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হাওলামতে সন্দ্বীপ থানার এএসআই আল আমিন অনুসন্ধান স্লিপটির অনুসন্ধানভার গ্রহণ করেন। তিনি অনুসন্ধান স্লিপের ঠিকানাগুলোতে গিয়ে যাচাইবাছাই করেন। পরবর্তীতে তিনি তার দাখিলকৃত উপকেস ডায়েরির ১০ নং ক্রমিকে অনুসন্ধান স্লিপে বর্ণিত ১২ নং আসামি মোহাম্মাদ শাহজাহানের নামঠিকানা সঠিক পান এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ শাহজাহানের স্বভাব চরিত্র ভাল নয় মর্মে উল্লেখ করেন। তৎপ্রেক্ষিতে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে ১৬ আসামির মধ্যে মোহাম্মদ শাহজাহানসহ ১৪ বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে বাদীর স্বাক্ষর ব্যবহার করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণ করে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৩৪ ধারা প্রমাণিত হওয়ায় তিনি উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আরো উল্লেখ করেন, প্রতিবেদন দাখিলের পর জানতে পারি মোহাম্মদ শাহজাহান মামলার প্রায় দু’বছর আগে মৃত্যু বরণ করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে তার মৃত্যু সনদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এবং দাফন রেজিস্ট্রেশন সনদপত্রের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হযরত গরীব উল্লাহ শাহ (রহঃ) মাজার মসজিদ ওয়াকফ এস্টেটের অফিস সহকারী বরাবর আবেদন করি। এরই ধারাবাহিকতায় হিসাব রক্ষক মো. দেলোয়ারুল আলমের পাঠানো স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রকাশ পায়, মোহাম্মদ শাহজাহান দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম নগরীর ২নং গেট ষোলশহর এলাকায় বসবাস করছেন এবং তিনি ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন। একই দিনে তাকে হযরত খাজা গরীব উল্লাহ শাহ্‌ (রহ.) মাজার মসজিদ ওয়াকফ এস্টেটের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আজাদীকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা কাজটি সঠিক করেননি। তার গাফিলতি ছিল। যেনতেনভাবে তিনি একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনি সঠিকভাবে তদন্ত করলে আসামি মামলার প্রায় দু’বছর আগে মারা যাওয়ার বিষয়টি উঠে আসত। নিশ্চিতভাবেই এখানে তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি, অবহেলা ছিল। মামলার বাদীর বিষয়ে তিনি বলেন, ২০০ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বাদী মামলাটি দায়ের করেছেন। নিশ্চিত না হয়ে তিনি একজন মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিভাবে মামলা করলেন। তিনিও অন্যায় কাজ করেছেন। এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেছেন, মোহাম্মদ শাহজাহান মারা গেছেন ২০২১ সালের শুরুতে। তার বিরুদ্ধে প্রায় দু’বছর পর মামলা হয়েছে। প্রথমত যিনি মামলা করেছেন তিনি অন্যায় কাজ করেছেন। তিনি মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তার বিষয় আসছে, তার তদন্তে গাফিলতি ছিল। অন্যথায় বাদীর মতো তিনিও অন্যায় করতেন না। তদন্তে মোহাম্মদ শাহজাহানের মৃত্যুর বিষয়টি উঠে আসার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। এতে তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ছিল প্রমাণিত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আবার পেছাল
পরবর্তী নিবন্ধআরও বাড়তে পারে তাপমাত্রা, দাবদাহ এপ্রিলজুড়ে