আরও বাড়তে পারে তাপমাত্রা, দাবদাহ এপ্রিলজুড়ে

হিটস্ট্রোকে দুজনের মৃত্যু

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

দেশজুড়ে কয়েকদিন ধরে চলা গরমের তীব্রতার মধ্যে তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুই জেলায় এখন চলছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকাল শনিবার যশোরে থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বলছিলাম তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে। আজকে সেটা ছাড়িয়ে গেছে। সামনে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। তাপপ্রবাহ এপ্রিল জুড়ে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরের মাসেও গরম থাকবে, তবে কী পরিস্থিতি হবে সামনে বোঝা যাবে। খবর বিডিনিউজের।

আগে থেকেই তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছিল দেশের অনেক এলাকা। এর মধ্যে গতকাল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আর ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়ে চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে।

দেশজুড়ে এমন খরতাপ পরিস্থিতিতে দেশের সব স্কুলকলেজ সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নিজেদের অধিভুক্ত কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাসের বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাবনা শহরে এবং গাজীপুরের কোনাবাড়িতে তীব্র গরমের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যুর কারণ হিটস্ট্রোক বলে চিকিৎসকদের ধারণা।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে চার দিন ধরে টানা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়; তবে তা ৪২ ডিগ্রি হয়নি। এদিন চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। তার আগে ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ১৯৬০ সালে ঢাকায় পারদ উঠেছিল রেকর্ড ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ২৪২৫ এপ্রিলের দিকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমে আসলেও এ মাসজুড়েই বিরাজ করবে তাপপ্রবাহ। তখন অতি তীব্র থেকে তীব্র, তীব্র থেকে মাঝারি এমন থাকবে, তবে তাপপ্রবাহ যে চলে যাবে তা না। এ মাসে বড় পরিসরে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনাও নেই। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে, যেমন সিলেটের দুয়েক জায়গায় সামান্য গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি।

বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

গত বছর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ১৯৯৫ এবং ২০০২ সালেও সমান তাপমাত্রা উঠেছিল, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নজির।

দেশের ৪৩ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিভাগের বাকি অংশ, রাজশাহী ও পাবনা জেলা এবং ঢাকা বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কঙবাজার, চাঁদপুর, রাঙামাটি; রাজশাহী বিভাগের বাকি ছয় জেলা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

এপ্রিল বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস। এ মাসে গরমের পাশাপাশি কালবৈশাখীরও দাপট থাকে বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমামলার দু’বছর আগের মৃত ব্যক্তিকে রেখে পিবিআই কর্মকর্তার প্রতিবেদন
পরবর্তী নিবন্ধরশিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি, খাতুনগঞ্জের দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা