মানবসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন

মা ও শিশু হাসপাতালের শোক সভায় ভূমি মন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নচারী মানবতার ফেরিওয়ালা ছিলেন মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন। তিনি ছিলেন প্রচার বিমুখ। এ সমাজ হিতৈষী এবং মানবিকতার পথিকৃৎ মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ছিলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মেগা ডোনার। এ হাসপাতালের উন্নয়নে দীর্ঘদিন যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন তিনি। গোপনে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল ও রোগীর জন্য অনুদান দিয়েছেন।
বিশিষ্ট সমাজসেবক, চট্টগ্রাম চেম্বার ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এবং মেরিনার্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের স্মরণে অনুষ্ঠিত শোক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল বিকেল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উদ্যোগে এ শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ লতিফ, একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ও কিউ এন এস গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল কাইয়ুম খান। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনিবাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর এম তাহের খান। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন।
ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অত্যন্ত সৎ ব্যক্তি ছিলেন মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন। মানবতার জন্য ওনার অবদান অনেক। ওনি নিরবে দান করতেন। সবসময় চেষ্টা করতেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তার জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। স্মৃতিকাতর হয়ে মন্ত্রী বলেন, মরহুম নূর উদ্দিন সাহেব ছিলেন আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু। আমরা দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে একসাথে কাজ করেছি। এক সাথে নানা দেশে ঘুরেছি। সেই সব স্মৃতি আমি ভুলতে পারি না। আমি একজন চরম বন্ধুকে হারিয়েছি। সবাইকে চলে যেতে হয়। কিন্তু এত তিনি তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ভাবিনি।
তিনি বলেন, নূর উদ্দিন সাহেব আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু উনার কীর্তি ও উনার অনুদানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে। উনি আজীবন বেঁচে থাকবেন উনার এইভালো কর্মগুলির মাধ্যমে।
ভূমি মন্ত্রী আরো বলেন, গোপনে দান করতে পছন্দ করতেন সৈয়দ নূর উদ্দিন। যার ফলে উনার এ সকল দান অনুদান সব সময় লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে যেতো। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক ভদ্র লোক। অত্যন্ত অমায়িক ও মার্জিত স্বভাবের লোক ছিলেন তিনি। ছোট বড় সকলের সাথে তিনি অত্যন্ত সুন্দর ব্যবহার করতেন।
এম এ লতিফ এমপি বলেন, দুনিয়ার মোহ ছিল না সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের। সবাই যখন সম্পদ স্তুপ করে এবং আরো পাওয়ার আকাক্সখা করে তখন মানুষের জন্য বিলিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, সফল ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি একজন নিভৃতচারী সমাজসেবক ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মা শিশু হাসপাতালের উন্নয়নে তার একাগ্রতা ও অক্লান্ত পরিশ্রম তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। মা ও শিশু হাসপাতাল ভবনের নাম সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের নামে করারও প্রস্তাব করেন তিনি।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, বাবা-মায়ের দেয়া নাম স্বার্থক করেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন। নূর মানে আলো। নিজে যা উপার্জন করেছেন তা অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সমাজসেবার আলো দিয়ে গেছেন আমাদের। তার অবদান যদি আমরা স্মরণ করি এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করি তাহলেই তাকে সবচেয়ে বেশি সম্মান দেয়া হবে।
এম এ মালেক আরো বলেন, সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের একক অর্থায়নে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সিসিইউ ও এইচডিও ইউনিট শুরু করা হয়। করোনাকালীন চট্টগ্রামসহ সারা দেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার খুব সংকট চলছিল সেই সময় তার উদ্যোগেই মা ও শিুশু হাসপাতালের অত্যাধুনিক আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপিত হয়। এ হাসপাতালের অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাবটিও উনার একক অর্থায়নে স্থাপিত হতে যাচ্ছে। মা ও শিশু হাসপাতাল যতদিন থাকবে ততদিন সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন সাহেবের নাম এখানে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন বলেন, মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উন্নয়নের অন্যতম কান্ডারী। এই মহৎ সমাজসেবী নিরবে দান করতেন বিধায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাকে দান করতেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে যার মাধ্যমে দান করতেন তিনি ছাড়া আর কেউ জানতেন না।
শোক সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীরুল হক, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক আবু হায়দার চৌধুরী আমজাদ, বিজিএমইএ এর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব, বিজিএমইএ এর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, সাবেক কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, আলমগীর পারভেজ, সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের ভাই ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনিবাহী কমিটির জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি সৈয়দ আজিজ নাজিম উদ্দিন এবং সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের মেয়ে আনিকা।
আমীরুল হক বলেন, সৎ ও সততার দৃষ্টান্ত হচ্ছেন সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন। উনি প্রচারের লোভে কোনো দান করেননি। আবু হায়দার চৌধুরী আমজাদ বলেন, সৈয়দ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। আজীবন মনুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া ছিল তার লক্ষ্য। মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, নিরবে নিভৃতে মানবতার জন্য কাজ করে গেছেন এস এম নূর উদ্দিন। এস এম আবু তৈয়ব বলেন, প্রচার প্রচারণা ঢাক ঢোল পিটিয়ে সমাজসেবা করার প্রতিযোগিতার এ যুগে আড়ালে থেকেও সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কতো বেশি করা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের প্রিয় সৈয়দ নূর উদ্দিন ভাই। নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভালো কাজের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন নূর উদ্দিন। মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, নূর উদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত সদালপী। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে তাকে যেন মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়। আলমগীর পারভেজ বলেন, প্রচারবিমুখ ছিলেন সৈয়দ নূর উদ্দিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্পেনে পটিয়ার যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা