মাদক মামলায় মিয়ানমার নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড

জামিন জালিয়াতি করে আগেই পালিয়েছে আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১০ জুন, ২০২২ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রথমবারের মতো মাদক মামলার এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিয়ানমার নাগরিক মোঃ আরীফ প্রকাশ আরিফ মৌলভী (২৮) রায়ের আগেই জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন নিয়ে পলাতক হয়ে যান।

রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এক লক্ষ টাকার অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারক। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ক্যাম্প-২, ব্লক ডি’র মৃত আবদুল মোনাফ ও মৃত নমীয়া খাতুনের ছেলে। ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ায় টেলিভিশন উপকেন্দ্রের গেটের সামনে র‌্যাব-৭ এর হোয়াইক্ষ্যং অস্থায়ী ক্যাম্পের সদস্যদের এক অভিযানে ৭ হাজার ৯৯০ পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন মিয়ানমার নাগরিক মোঃ আরীফ প্রকাশ আরিফ মৌলভী (২৮)। এই ঘটনায় সাদেক উল্লাহ (৩২) নামক আরো একজনকে পলাতক দেখিয়ে র‌্যাব-৭ এর কর্মকর্তা এসআই মোঃ শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) উখিয়া থানার এসআই জিয়া উদ্দিন তদন্ত শেষে আরিফ মৌলভীকে একমাত্র অভিযুক্ত আসামি করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগ পত্র) দাখিল করেন। সাদেক উল্লাহ নামক কোনো মানুষের অস্তিত্ব না থাকায় চার্জশিটে এজাহারের পলাতক আসামিকে মামলার দায় হতে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি আদালতে এ অভিযোগপত্র গৃহীত হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, মামলাটি বিচারের জন্য ২০২১ সালের ২১ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণের পর ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামি পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, জব্দ করা আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন যাচাই ও পর্যালোচনা এবং যুক্তি তর্কশেষে বিচারক মাদক পাচারের দায়ে আসামি রোহিঙ্গা মোঃ আরীফ প্রকাশ আরিফ মৌলভীকে দোষী সাব্যস্থ করে মৃত্যুদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকার অর্থদণ্ড প্রদান করেন। আর অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

তিনি জানান, ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা বিচারের রায়ে দেশের বিচার বিভাগে এটি প্রথম মৃত্যুদণ্ড।

বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি রোহিঙ্গা মোঃ আরীফ প্রকাশ আরিফ মৌলভী কারাগারে থাকাবস্থায় তাকে জামিন করানোর জন্য বাইরে একটি শক্তিশালী চক্র ছিলো। যার ফলে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে অনেকবার জামিন চাওয়া হয়েছে। পরে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে বিবিধ ফৌজদারী মিচ মামলা মূলে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন লাভ করেন। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ওই রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারী চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলার ৭ জন সাক্ষী নেওয়ার পর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মহামান্য হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বন্ড সম্পাদন করে কারাগার থেকে বের হয়ে পলাতক হয়ে যান। যা বিচার ব্যবস্থাকে এড়িয়ে মহামান্য হাইকোর্ট ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাথে প্রতারণা ও অবজ্ঞার সামিল বলে উল্লেখ করা হয় আদালতের পর্যবেক্ষণে। পরে ২ জন বন্ড প্রদানকারীকে আদালতে তলব করা হলে তারা ওই রোহিঙ্গা ইয়াবাকারবারীর কোনো জামিনদারদার হননি, জামিননামায় কোনো স্বাক্ষর করেননি এবং এ বিষয়ে তারা কিছুই অবহিত নন বলে আদালতকে জানান। এরপর আদালতে জনৈক আইনজীবী ও ক্লার্কের সহয়তায় জাল জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হলে তারা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদালত তাদের শাস্তি না দিয়ে প্রথমবারের মতো ক্ষমা করে দেন এবং ভবিষ্যতে ভিন্ন কোনো মামলায় ওই আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারীর কোনো অসংগতি দেখা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিবন্ধী ভাতা ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব, বয়স্ক ভাতা বাড়ছে না
পরবর্তী নিবন্ধরেল খাতে বিভিন্ন প্রকল্পে ১৮ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ