মহানগরে ৫৭ কিশোর গ্যাংয়ে ৩১৬ জন সদস্য

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ১৬ থানার ৪৮ টিম মাঠে

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদকে টার্গেট করে মাঠে সক্রিয় পেশাদার এবং মৌসুমী অপরাধীরা। জনবল সংকটের মধ্যেও তাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সিএমপির ১৬ থানার ৪৮টি টিম মাঠে সক্রিয় আছে। এরই মাঝে ‘উটকো ঝামেলা’ হয়ে দেখা দিয়েছে কিশোর গ্যাং চক্রের অপরাধমূলক কর্মকান্ড। এদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত হওয়ায় ছিনতাই করতে সামান্য বাধা পেলেই হাতে থাকা ধারালো ছুরি এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয় ভিকটিমের শরীরের নানা অংশ। এবার তাই র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) চট্টগ্রামসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।

র‌্যাব৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে কিছু অপসংস্কৃতির প্রভাব ঘটেছে, তার একটি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। অন্যান্য জেলার মতো চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাংয়ের ওপর নজরদারি রাখার পাশাপাশি আমরা অভিযান শুরু করেছি। বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের যারা ধরা পড়ছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে পূর্বেকার মামলা রয়েছে। আমরা সম্প্রতি এমন একজনকে পেয়েছি, যার বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রয়েছে। তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে নৈতিক শিক্ষা আরও জোরদার এবং সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশেএসব বিষয়ে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নগর গোয়েন্দা শাখার তালিকানুযায়ী নগরীর ১৬ থানা জুড়ে ৫০টির বেশি কিশোর গ্যাং গ্রুপে অপরাধীর সংখ্যা ৩১৬ জন। এলাকার মাদক বেচাকেনা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাতে হকার বাণিজ্য, মারামারি, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ তো আছেই রমজান মাসে তারা নেমেছে ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত দুই ডজন খুনের সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। কর্মকর্তারা বলছেন, কিশোর অপরাধ দমন তাদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোর অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে। তার পরও কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কিশোর অপরাধীদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশের কিশোর অপরাধীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। পুলিশের তথ্য বলছে, বর্তমানে সারা দেশে কিশোর অপরাধীদের ১৭৩টি দল সক্রিয় রয়েছে। এসব দলে ২ হাজার ২৯ জন কিশোর রয়েছে। কিশোর অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৭৮০টি মামলা হয়েছে, এসব মামলায় আসামি ৮৯৬ জন। চট্টগ্রাম মহানগরে ৫৭টি গ্যাংয়ে ৩১৬ জন সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিশোর অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০৩টি মামলাও হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারকৃত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জানিয়েছে, রমজানে তারা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে মানিব্যাগ, টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়।

গত ৪ এপ্রিল র‌্যাবের অভিযানে দুটি কিশোর গ্যাংয়ের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে বায়েজিদ ও পাহাড়তলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব৭ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন রয়েছেন একটি গ্যাংয়ের নেতা বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার রিয়াজ উদ্দিন সানি (২৪)। এলাকায় এটি সানি গ্যাং হিসেবে পরিচিত। র‌্যাবের অভিযানে সানিসহ তার গ্যাংয়ের সাতজন গ্রেপ্তার হয়। সানি ২০২০ সালে একটি হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি। সানি আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল। জামিনে এসে সে গ্যাং তৈরি করে। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা দিনেদুপুরে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে থাকে। গ্রেপ্তার রিয়াদ, তানভীর এবং আল রাব্বির নামেও বায়েজিদ বোস্তাামী থানায় চুরি এবং হত্যা মামলা রয়েছে।

অন্যদিকে পাহাড়তলী এলাকা থেকে পিচ্চি সাকিব গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রুপটি পাহাড়তলী থানাধীন সরাইপাড়া এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং ভাড়ায় মারামারি ও টাকার বিনিময়ে জমি দখল করার মতো ঘটনায় জড়িত। এরা মূলত সন্ধ্যার পর একত্রিত হয়ে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিস ছিনতাই করে থাকে। পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন দোকানদারদের কাছে চাঁদা আদায় করে। এদের নামে পাহাড়তলী ও আকবরশাহ থানায় ছিনতাই ও মারামারির মামলা রয়েছে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডট গ্যাং গ্রুপের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব, চট্টগ্রাম। তারা সাতজন চট্টগ্রাম নগরীর স্বনামধন্য স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। কারও বাবা চিকিৎসক, আবার কারও বাবা সরকারি কর্মকর্তা। সবার বয়স ১৬ বছর। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ‘হিরোইজম’ দেখাতে তারা দেড় বছর আগে ‘ডট গ্যাং’ নামে কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। এ পর্যন্ত তারা ১৪ থেকে ১৫টি মারামারিতে অংশ নেয়। র‌্যাব৭ অধিনায়ক জানান, গ্রেপ্তার সাতজন নগরের একটি কোচিং সেন্টারের ছাত্র ছিল। সেখানে তাদের পরিচয়। একসঙ্গে চলাফেরা ও আড্ডা। তাদের আড্ডাতে চকবাজার এলাকার আরেকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ বাধা দেয় এবং কয়েকজনকে মারধর করে। এর প্রতিশোধ নিতে তারা নিজেরা দেড় বছর আগে ‘ডট গ্যাং’ নামের আলাদা গ্যাং গড়ে তোলে। বর্তমানে তাদের গ্রুপে ৪০ জন সদস্য রয়েছে। সবাই তাদের বয়সী। তাদের কাছ থেকে দুটি টিপ ছুরি ও একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে বৈসু উদযাপন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬