মনবৈচিত্র্য

শামীমা সুমি | রবিবার , ৬ মার্চ, ২০২২ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

ইগো কি?—– অনেক সংজ্ঞাই আছে তবে প্রখ্যাত “রায়ান হলিডের” মতে ‘নিজের বড়ত্বের প্রতি অস্বাভাবিক বিশ্বাস যার সাথে মিশে থাকে অহংকার এবং আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা’
নিজের প্রতি অস্বাভাবিক উঁচু ধারণা একজন মানুষকে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ও তার সাফল্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, দুঃখের বিষয় হলো মানুষটি এই বিষয়টি ধর্তব্যের মধ্যে আনে না।
ইগোর মরণ ছোবল : কেউ যদি তার জীবনে অন্য কারো তুলনায় এগিয়ে যায় বা থাকে, হতে পারে দেখতে সুন্দর, বেশি স্মার্ট, ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া , ব্যবসায় বা চাকুরীতে বেশি সফল। আর এই ব্যাপারটা নিয়ে তার মনে হিংসা বা দাম্ভিকতা বৃদ্ধি পায় বুঝতে হবে তার মধ্যে ইগো প্রবলেম প্রবল। তবে এই সমস্যা যাদের আছে এটাকে হিংসা বা ঈর্ষা বলাই ভালো। কারণ হিংসা ইগোর একটা অংশ মাত্র, ইগোর ব্যাপ্তি বা সীমা আরো বেশি। ইগো এমন মরণ বিষ যা একটা মানুষের জীবনের সমস্ত অর্জন ধ্বংস করে তার জীবন নরক করে দিতে পারে। তাই ইগো কি তা জানা এবং তার থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তিগত পারিবারিক ও পেশাগত জীবনের জন্য খুব জরুরী।
আমরা সবাই জানি ইগো একটা খারাপ জিনিষ অনেকটা মনের গোপন শয়তানের মতো যা তাকে নিজের যতটুকু আছে তার থেকেও কয়েকগুণ বড় ভাবতে শেখায় অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করতে শেখায়। এবং তা আমাদের সবার মাঝে কমবেশি আছেই। আর তাই এটাকে চিনে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের নিজেরই। ইগোধারী মানুষের কমন ডায়গল ” কি যোগ্যতা আছে আমার সাথে কথা বলার বা আমার পাশে দাঁড়ানোর।” আপনার মাঝে বড় হবার সম্ভাবনা আছে নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে নিজ যোগ্যতা বলে আপনি বড় হবেন এটা হলো – আত্মবিশ্বাস। আর ইগো আপনি বড় হবার আগেই আপনাকে বড় ভাবতে শিখিয়ে আপনার নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেবে। আর এই ভাবনাটা আপনার সকল সম্ভাবনার দ্বার একে একে রুদ্ধ করতে থাকবে,আর এটাই স্বাভাবিক বদভাবনাটাই আপনাকে বড় করে দিয়েছে আপনার কষ্ট করে অর্জন ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যাবে, ইগোধারী মানুষ “মিথ্যে অহংকার নিয়ে বেঁচে থাকে। এরা কখনো ভুল স্বীকার করবে না, আপনি ভুল ধরিয়ে দিলে উল্টো আপনার উপর রেগে যাবে। যদি সে নিজের ভুলটা বুঝতেও পারে তবুও সে স্বীকার করবে না সেটা শুধু আপনার কাছে নয় নিজের মনের আদালতেও স্বীকার করবে না।এদেরকে কখনোই যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবেন না, যদি সে বোঝেও যুক্তিটা কিন্ত মানবে না,এরা ভাবে তার কোন খুঁত নেই সেটা কর্মে হোক বা অন্য যেকোন বিষয়ে এদের এককথায় বলা হয় ‘দুই লাইন বেশি বোঝা মানুষ’।
ইগো আসলে একধরনের মানসিক প্যারালাইসিস, আপনাকে শোয়া থেকে বিশ্বাস করায় আপনি আকাশে উড়ছেন, ইগো মানুষকে বিশ্বাস করায় সে সবচেয়ে সেরা এবং সব জানে। এককথায় আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু এই ইগো।
এই ইগোর সংক্রমণ: এই ইগোর সংক্রমণ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ান।
★বিনীত হতে শিখুন, ★জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখুন, ★অন্যের মতামতকে মূল্যায়ন করুন, ★কাউকে ছোট করে না দেখার মানসিকতা, ★নিজের কাজের উপর বিশ্বাসী হোন, ★মনে রাখুন জগতে শেখার কোন শেষ নেই, ★সাফল্য ও ব্যর্থতা গ্রহনের মানসিকতা তৈরি করুন।
অন্যের প্রতি সহনশীল হোন অন্যকে মূল্যায়ন করুন, আত্মবিশ্বাসী হোম অহংকারী নয়, নিজের ভুলকে ভুল বলে জানুন, সরি বলতে শিখুন, সাফল্য ও ব্যর্থতাকে মন থেকে গ্রহণ করুক। আপনার ভালোগুণগুলোকে যদি ইগো নামের ঘুণপোকাতে খায় তবে আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন। কথায় বলে না, “লাখ টাকার বাগান খেলো দুই টাকার ছাগলে”, খেয়াল রাখুন আপনার সাথে যেনো এমন না হয়।
লেখক : কবি-গল্পকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুন্দরবন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধজয় বাংলা ও দৈনিক আজাদী