ভোজ্যতেলে দিশেহারা মানুষ

আন্তর্জাতিক দাম বাড়তি নাকি সিন্ডিকেট প্রয়োজন নিয়মিত বাজার মনিটরিং

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ভোজ্যতেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ ভোক্তারা। দীর্ঘ সময় ধরে উত্তপ্ত ভোজ্যতেলের বাজার। এর মধ্যে গত সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিনের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন কিনতে ভোক্তাদের ব্যয় করতে হচ্ছে ১৬০ টাকা। খুচরার পাশাপাশী পাইকারি বাজারেও গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ১৫০ টাকা।
খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো বুকিং দর ওঠানামা করছে। তাই সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দাম স্থির থাকছে না। তেলের বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এখানে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দাম এমনিতে কমে যাবে। বর্তমান বাজারে এস আলম গ্রুপ ও সিটি গ্রুপের ভোজ্যতেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মূলত দুই শিল্প গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, বরাবরের মতো বাজার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা তেলসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কারসাজির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৮৮০ টাকায়। ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৩০ টাকায়। অন্যদিকে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫ হাজার ২৮০ টাকায়। বর্তমানে মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৪৩০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটি বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজারদর যদি বেড়ে যায় তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়। এই সুযোগে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জাহানারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আবু বক্কর আজাদীকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো চাঙা সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার। এক বছরের ব্যবধানে পাম তেলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া সয়াবিনের দাম বেড়েছে দেড় গুণের বেশি। বর্তমানে পাম তেলের সরবরাহ সংকট রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমাদের দেশে পাম তেল আসে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। করোনাকালীন সৃষ্ট জটিলতার কারণে দেশ দুটিতে প্রত্যাশিত উৎপাদন হয়নি। আবার সয়াবিন আমদানি হয় ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেখানে ঘাটতি ছিল।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ আজাদীকে বলেন, ভোজ্যতেলের বুকিংদর দিন দিন বেড়েছে; যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। চট্টগ্রামের বাজারে সিটি গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের পণ্যই বেশি বেচাকেনা হয়। বলা যায়, এই দুই শিল্প গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। তেলের বাজার বাড়লে সিন্ডিকেট কারসাজির প্রশ্নটি ওঠে। এটি মোটেও সত্য নয়। কারণ বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের বাজার চাঙা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের এক তেল ব্যবসায়ী বলেন, তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সরকার মিলগেটে তেলের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। বর্তমানে সয়াবিনের তেমন সংকট নেই বলে শুনেছি। কিন্তু দফায় দফায় দাম বাড়ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, তেলের বাজার দিন দিন নিয়ন্ত্রণ হয়ে পড়ছে। এমনিতে দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার সবসময় ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটেন। ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেভাবে তদারকি হওয়া দরকার সেটা হচ্ছে না। প্রশাসন মাঝে মাঝে আকস্মিক অভিযানে বের হয়ে কিছু জরিমানা করে। প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুজুকি সুইফটের নতুন মডেল বাজারে আনল উত্তরা মোটর্স
পরবর্তী নিবন্ধক্যাম্পের পাশে পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আস্তানা