ভূমি জটিলতা নিরসন, তিনটি প্যাকেজে টেন্ডার শিগগিরই

মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

ভূমি জটিলতা নিরসনের পর অবশেষে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়নে তিনটি প্যাকেজে টেন্ডার আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠতে যাওয়া মাতারবাড়ি বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল হচ্ছে। বাড়ছে জাহাজের আনাগোনা। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নিয়ে ইতোমধ্যে এই বন্দরে ৭৪টি সমুদ্রগামী জাহাজ বার্থিং নিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাট এলাকায় নির্মিত হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের চাহিদা পূরণে এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা দিয়ে গড়ে তোলা হবে মাদারবাড়ি বন্দর। ২০২১ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে বন্দরটি পুরোদমে চালু করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণ নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। বন্দর কর্তৃপক্ষের চাহিদার প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন উক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করার সময় জমির শ্রেণি ‘নাল’ হিসেবে চিহ্নিত করে। সে হিসেবে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য ধরা হয় ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৫ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষ গত বছরের ২ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিকট ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাদের জমিগুলো নাল নয় ‘লবণ মাঠ’ বলে উল্লেখ করে বাড়তি ক্ষতিপূরণ দাবি করে। স্থানীয় কয়েকশ মানুষের বিরোধিতার মুখে মাতারবাড়ি বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ আটকে যায়। আটকে যায় বন্দর উন্নয়নের অন্যান্য কার্যক্রমও।
স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টির সুরাহার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে ভূমিগুলোকে লবণ মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ায় ক্ষতিপূরণ মূল্য ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা বেড়ে যায়। সবমিলে ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ নির্ধারিত হয় ১৬২ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ২৭১ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষ আগে দেয়া অর্থের সাথে গত ১৩ জানুয়ারি বাড়তি অর্থ প্রদান করে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করা হয়েছে। বাকিদেরকেও ক্রমান্বয়ে চেক প্রদান করা হবে।
কঙবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে মাতারবাড়ি বন্দরের প্রয়োজনীয় ভূমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জায়গার জটিলতা শেষ হওয়ার পর বন্দর উন্নয়নে জোর দেয়া হচ্ছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে তিনটি প্যাকেজে টেন্ডার আহ্বানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণ, টার্মিনালের জন্য ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ এবং বন্দরের অপারেশনাল কাজে বিভিন্ন নৌযান সংগ্রহের জন্য টেন্ডার আহ্বানের কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে। মাতারবাড়ি বন্দরে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত ১৪ কিমি লম্বা এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেলটিকে আরো ১০০ মিটার বাড়ানো হবে। ২০২৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই চ্যানেল হয়ে মাতারবাড়ি বন্দরের টার্মিনালে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। অনায়াসে নোঙর করতে পারবে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেনারবাহী মাদার ভ্যাসেল। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল আমদানির জন্য ওই চ্যানেলটিতে ইতোমধ্যে দুটি জেটি নির্মিত হয়েছে। জেটি দুটিতে ইতোমধ্যে ৭৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নানা প্রতিকূলতায় কিছুটা বিলম্ব হলেও ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর পুরোপুরি অপারেশনে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রেতাদের অভিযোগ বেশি দাম বিক্রেতাদের দাবি খরচ বেড়েছে
পরবর্তী নিবন্ধবিদায়ী বছরের সব দুঃখ, গ্লানি সাগরে ভাসিয়ে দিতে চাই