ভিটামিন ডি খেলে কি সত্যি করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যায়?

| মঙ্গলবার , ৬ এপ্রিল, ২০২১ at ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবী জুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সাথে সাথেই পাল্লা দিয়ে ছড়িয়েছে এ নিয়ে নানা রকম ভুয়া তথ্য। কিছু ভুয়া তথ্য আছে যা একেবারে সরাসরি ভুল বা মিথ্যা। কিন্তু কিছু মিসইনফরমেশন আছে- যা তৈরি হয় খানিকটা সত্য এমন কিছু ধারণার ওপর ভিত্তি করে। এ ধরনের ভুয়া তথ্যের মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন। খবর বিবিসি বাংলার।
ভিটামিন ডি কেন : কোভিড-১৯এর চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত বহু রকম উপায় বাতলানো হয়েছে। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, আইভারমেকটিন, ভিটামিন-ডি এগুলোর প্রতিটি নিয়েই গবেষণা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রক্রিয়ায় এটা স্বাভাবিক ঘটনা যে- প্রথমে মনে করা হয়, অমুক রোগের চিকিৎসায় অমুক ওষুধ কার্যকর হতে পারে- কিন্তু আরো গবেষণার পর দেখা যায়- তা নয়। কিন্তু অনলাইনে ব্যাপারটা ভিন্ন চেহারা নেয়। অনেক প্রাথমিক গবেষণা বা নিম্ন-মানের গবেষণার ফলও প্রেক্ষাপট-বিবর্জিতভাবে ইন্টারনেটে শেয়ার হয়। এগুলো সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি, এবং তার পর তা ব্যবহৃত হয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের কাজে। ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগ অনেককে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে পরামর্শ দিচ্ছে। ভিটামিন ডি-কে কোভিড চিকিৎসা বা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন মনে করার সপক্ষে কিছু কারণ অবশ্যই আছে। কারণ, ভিটামিন ডি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় একটা ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাজ্যে এখন শীতকালে সবাইকে ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে সুপারিশ করা হয়। যাদের দেহে এই ভিটামিনের ঘাটতি আছে – তাদের সারা বছর ধরেই এটা খেতে বলা হয়। কিন্তু, উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ডি খেলে কোন রোগ প্রতিরোধ করা বা তার চিকিৎসা সম্ভব – আজ পর্যন্ত কোনো গবেষণাতেই যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতীয়মান হয়নি। অবশ্য তার মানে এ-ও নয় যে ভবিষ্যত কোনো গবেষণায় এর কোনো পরিবর্তন হবে না। এমন হতে পারে যে ভিটামিন ডি কম থাকাটাই এই জনগোষ্ঠীর করেনাভাইরাস সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির কারণ। অথবা এর পেছনে কোন পরিবেশ বা স্বাস্থ্যগত কারণও থাকতে পারে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূতদের সারা বছর ধরে ভিটামিন ডি খেতে বলা হয়। কিন্তু ভিটামিন-ডির ঘাটতির সাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা শুধু যথাযথ গবেষণার পরই বলা সম্ভব। বর্তমানে কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে এরকম একটি জরিপ চলছে। বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপের প্রতি সমপ্রতি অনেকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এতে আভাস দেয়া হয়, ভিটামিন-ডি নেবার ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি হবার প্রয়োজন ৮০ শতাংশ কমে গেছে, এবং কোভিডে মৃত্যু কমেছে ৬০ শতাংশ। অনলাইনে এ জরিপটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়। স্পেনের একজন জরুরি সেবা সংক্রান্ত ডাক্তার অরোরা বালুজা বার্সেলোনার জরিপটি রিভিউ করেছিলেন। তিনি বলছেন, ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকা যেসব কোভিড রোগী মারা যায়, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু শুধু ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট দিয়ে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা সব সময়ই ব্যর্থ হয়েছে। অনলাইনে অনেকেই ভিটামিন-ডির সাথে রোগ প্রতিরোধক্ষমতার সম্পর্ককে একটি ডাক্তারি পরামর্শ হিসেবে ধরে নিয়েছেন। অনলাইনে কিছু ফোরামে অনেকে আবার এটাকে বহুদূর পর্যন্ত নিয়ে গেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ হাজার রুপি দিয়ে ভ্যাকসিন কিনতে পাকিস্তানিদের হুড়োহুড়ি
পরবর্তী নিবন্ধনারীকণ্ঠে ডাক দিয়ে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ