ভিআইপি রোডের ‘কান্না’

আগ্রাবাদ থেকে কাঠগড় যান চলাচলের অযোগ্য বেহাল হওয়ার কারণ অনেক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ভিআইপি রোড খ্যাত বিমানবন্দর সড়কের আগ্রাবাদ থেকে কাঠগড় পর্যন্ত এলাকা যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশই ভরে গেছে খানাখন্দে। বড় বড় গর্ত পুরো রাস্তা জুড়ে। বর্ষণ ও নালার পানিতে একাকার হয়ে যাওয়া রাস্তাটি দিয়ে যান চলাচলতো দূরের কথা, পায়ে হাঁটার অবস্থাও নেই। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শহরের একমাত্র প্রধান সড়কটির বেহাল দশা নগরবাসীর জন্য প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠছে। সিডিএ বলেছে, কোন ধরনের ড্রেন না থাকায় রাস্তাটিতে সবসময়ই পানি থাকে। বাসা বাড়ির পানির সাথে উল্টো জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় রাস্তাটি। এতে রাস্তাটির অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে উঠছে।
নগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা আনতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। পাঁচটি ভাগে ভাগ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরীর প্রধান সড়কটির মাঝের বিশ ফুটেরও বেশি অংশ ঘিরে ফেলা হয়েছে। নগর পুলিশ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ পরিচালনার সময় ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে কমপক্ষে বিশ ফুট করে রাস্তা গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার জন্য সিডিএকে অনুরোধ করে। এরই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে দুই লেন করে মোট চার লেনের গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়। পুলিশের নির্দেশনায় শহরের অত্যন্ত ব্যস্ত রাস্তাটির বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণ করা হলেও বেহাল দশার কারণে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। রাস্তাটির আগ্রাবাদ থেকে শুরু করে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত বেহাল দশা। তবে ইপিজেড থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার অস্থিত্বই বিপন্ন হয়ে গেছে। ধানক্ষেতের মতো হয়ে উঠা রাস্তাটিতে যান চলাচল অসম্ভব হয়ে উঠছে।
গতকাল কাঠগড় এলাকার সমাজকর্মী ওয়াহিদ হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বহুদিন ধরে বেহাল অবস্থা চলছে আমাদের এলাকার রাস্তায়। এটি এখন আর রাস্তা নেই, খাল হয়ে গেছে। মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রেও রাস্তাটি বড় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, দৈনিক আজাদীসহ বিভিন্ন গণমাধমে অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভোগের অবসান হয়নি।
বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শাকিলা সুলতানা গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। দুইদিন আগে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা রাস্তাটি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় সিদ্ধান্ত হয়েছে- নালা দখল করে থাকা ওয়াসার সংযোগ পাইপগুলো অপসারণ করা হবে। রাস্তার খারাপ হয়ে যাওয়া অংশে আরসিসি করে দেয়া হবে।
অপর একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, রাস্তাটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, জলে কাদায় গর্তে বিপন্ন হওয়া সড়কে আটকে যাওয়া কিংবা নষ্ট হওয়া গাড়ি প্রতিদিনই পুলিশকে ঠেলতে হয়।
এ বিষয়ে সিডিএর এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত গত বিশ বছরে কোন ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। এতে রাস্তাটিতে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ সিস্টেমই নেই। মানুষের বাসা বাড়ি এবং অফিসের ব্যবহার্য পানি সরাসরি চলে আসে রাস্তায়। আবার উল্টো জোয়ারের পানিতেও সকাল বিকেল প্লাবিত হয় রাস্তাটি। রাস্তার পাশে একেবারে সরু একটি ড্রেন থাকলেও ওয়াসার পাইপ লাইনে সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে রাস্তা থেকে পানি সরার কোন পথই নেই। ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, দফায় দফায় মেকাডম দিয়েও রাস্তাটি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ড্রেন নির্মাণ না করা পর্যন্ত রাস্তার এ বেহাল দশা থাকবে। তিনি এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ড্রেন নির্মাণের কোন কাজ না থাকলেও এখন আমরা ড্রেন নির্মাণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করে পানি সরার ব্যবস্থা করা হলে রাস্তাটির অবস্থার উন্নতি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সংক্রমণ ২ শতাংশের নিচে
পরবর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেকের ৩০ বছরের সাজা