ভালো কাজ করলে মিলবে খাবার

ভালো কাজের হোটেল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে হোটেল বা রেস্টুরেন্টের অভাব নেই। বিভিন্ন অলিগলিতে গড়ে উঠছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ। ক্রেতা ও ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে সেসব রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন খাবারের আকর্ষণীয় প্যাকেজেরও কোনো কমতি নেই। ডিসকাউন্ট বা অফারের কারণে সেসব প্যাকেজের প্রতি মানুষের আগ্রহও ব্যাপক।

তারই ভিড়ে এমনও একটি হোটেল আছে যেখানে খেতে গেলে পকেট থেকে কোনো টাকা খরচ হবে না। নাম ‘ভালো কাজের হোটেল’। প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সেই হোটেলে এক বেলা খাবার খেতে গেলে দিনে শুধুমাত্র একটি ভালো কাজ করলেই চলবে। তবে আপনি যদি দিনে কোনো ভালো কাজ নাও করে থাকেন, আপনাকে খালি মুখে সে হোটেল থেকে ফিরে আসতে হবে না। আপনি সেখানে খাবার পাবেন। শর্ত একটাইপরের দিন আপনাকে অবশ্যই দুইটি ভালো কাজ করতে হবে। একটি ভালো কাজ, বদলে দিতে পারে একটি সমাজ। একটি ভালো কাজ করার সদিচ্ছা দশটি খারাপ কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। তেমন একটি উদ্যোগ ‘ভালো কাজের হোটেল’। এ এক অদ্ভুত হোটেল! চট্টগ্রামে পরোপকারি মানবিক একদল তরুণের ভিন্নধর্মী এ কার্যক্রম নজর কাড়ছে সবার। প্রতি শুক্রবার খোলা থাকে এ হোটেল। এখানে খেতে টাকা লাগেনা, যেকোনো একটি ভালো কাজ করলেই খাওয়া যায় পেট ভরে। পথশিশু, ছিন্নমূল, অসহায়, ভবঘুরে মানুষগুলি আসছে, বসছে এবং পেট ভরে খেয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র একটি ভালো কাজ করার কথা বলেই।

আট দশটা হোটেলের মত এখানে চেয়ার, টেবিল কিংবা বিলের আওয়াজ নেই, ওয়েটার বা ক্যাশ কাউন্টারও নেই। নির্দিষ্ট সময়ে একটি খাবারভর্তি গাড়ি এসে থামে। সেই গাড়ি থেকে নামে স্বেচ্ছাসেবকেরা। কাগজকলম হাতে সমবেতদের উদ্দেশে তাদের জানতে চাওয়ার থাকে এ রকম : ‘আপনার নাম কী?’ ‘আপনি কি আজ কোনো ভালো কাজ করেছেন?’। তারপর খেতে আসা মানুষেরা জানায় তাদের দিনের ভালো কাজটা। এরপরই সেই ব্যক্তির কাছে তুলে দেওয়া হয় খাবার। এভাবেই চলে অসহায়দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ। নেই মাথার উপর ছাদও। খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে বসেই দিব্যি আহার সেরে নেন হোটেলে আসা অতিথিরা। মূলত দিন আনা দিন খাওয়া দুস্থ, অসহায় ও শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করতেই এ হোটেলের যাত্রা শুরু।

ক্ষুধার যন্ত্রণার কারণে সারা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই খারাপ পথ বেছে নেয়এ বিশ্বাস থেকে, ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের সংগঠন ভালো কাজের বিনিময়ে খাদ্য বিতরণের উদ্যোগ নেয়। ক্ষুধা ও অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে দুস্থ মানুষের সেবা করে আসছে। ঢাকায় সংগঠনটি এ কার্যক্রমে আশাপ্রদ সাড়া পায়। এরপর তারা চট্টগ্রামে শুরু করে তাদের কার্যক্রম। তবে এখনো প্রতিদিন খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না তাদের, প্রতি শুক্রবার তারা আড়াইশ থেকে তিনশ মানুষের আহারের বন্দোবস্ত করে রাত সাতটা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে।

এ হোটেলে খেতে আসা মিরাজ নামে একজন জানান, তিনি সকালে একজন বৃদ্ধকে রাস্তা পার হতে সাহায্য করেছেন। অপু নামের আরেক ব্যক্তি জানান, এ উদ্যোগের কথা শোনার পর থেকে তিনি প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করার চেষ্টা করছেন।

ভালো কাজের হোটেলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আরিফুর রহমান। এ উদ্যোগের পেছনে তার অনুপ্রেরণা নাট্যব্যক্তিত্ব জাহিদ হাসান। ছোটবেলায় তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘সবুজ ছায়া’ নামের নাটকে অভিনেতা জাহিদ হাসানকে দেখেছেন প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করতে। সেই ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি ও তার কিছু বন্ধু ২০০৯ সালে ৫ ডিসেম্বর ঢাকা রেলস্টেশনে ভালো কাজের হোটেল চালু করেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র ঈদ, সরকারি ছুটিগুলোতে পথশিশু, এতিমখানা ও ভবঘুরেদের একবেলা খাওয়ানো হত। ২০১৯ সালে এসে সপ্তাহে একদিন, করোনাকাল থেকে প্রতিদিন খাওয়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়। এ হোটেল পরিচালনার জন্য প্রায় দেড় হাজার সদস্য প্রতিদিন ১০ টাকা জমা দেন। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে এ হোটেলের সাড়ে ৪ লাখ টাকার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরাও ভালো কাজের হোটেলের জন্য অর্থ অনুদান দিয়ে থাকেন।

ঢাকায় এ হোটেলের ৫টি শাখা আছে। ঢাকার পর চট্টগ্রামের পুরাতন রেলস্টেশনে প্রথম ভালো কাজের হোটেলের শাখা চালু হয়। পরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পাশে সেটি স্থানান্তরিত হয়। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খাবার বিতরণের এ কাজ চলে। প্রায় আড়াই হাজার সদস্য ওই শাখার সঙ্গে যুক্ত আছে। তারা প্রত্যেকে হোটেল পরিচালনার জন্য মাসে ৩০০ টাকা জমা করেন। নিবন্ধনের মাধ্যমে সহজেই যে কেউ এই উদ্যোগের অংশ হতে পারে। এ উদ্যোগের রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০ টাকা। ৩ মেনুতে খাবার দেয়া হয়। একবার সাদাভাত, সবজি, ডিম। পরের বার ডিমখিচুড়ি। তারপরের বার দেয়া হয় চিকেন বিরিয়িানি। এভাবে প্রতি সপ্তাহে রাউন্ড ঘোরানো হয়।

এ কাজে জড়িতরা চান, এ দেশকে সুন্দর রাখতে চাই। দেশ থেকে খারাপ কাজগুলো বিতাড়িত করা তাদের লক্ষ্য। আবার কাউকে যেন খাবারের কষ্টে থাকতে না হয়। তারা চান অসহায় মানুষের পাতে ভাত উঠুক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় বাস-ডাম্পার মুখোমুখি সংঘর্ষ শ্রমিক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে ১০৩ ফুট কেক কাটলেন মনজুর আলম