বয়সের দৌড়ঝাঁপ

সালসাবিল করিম চৌধুরী | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

বয়স যখন আঠারো ছিল
অনূভুতিগুলো ছিল দারুণ প্রাণবন্ত
ঘন কালো চুলের লাল ফিতায় বাঁধা
দু’খানা বেণী আর নীল রঙের স্কুলের
পোশাক ছিল নিত্যদিনের পঞ্জিকা।
প্রতিদিন একই রঙ, একই বেশভূষা
বিবর্ণ করে তুলেনি একবারও

সেসময়টা আসলেই কেমন যেন ছিল!
নীল রঙ বেদনার রঙ হলেও
এতে আনন্দের ভাষা ছিল।
স্কুলের ঘন্টা,এসেম্বলির জাতীয়
সংগীত যেন নতুনের বার্তা দিত।
শিহরিত হতাম দিন দিন প্রতিদিন।

অনুভূতিগুলো একদম জীবন্ত ছিল,
অল্প আঘাতে ভেঙে চুরমার হত।
মনে হত এই বুঝি সব শেষ।
কেউ ছেড়ে গেলে মনে হতো
আমার মত নিঃস্ব আর দুর্ভাগা
বুঝি আর কেউ নেই।
টিফিনে ফাঁকে সখীদের কাছে
নানা অভিযোগ নিয়ে চোখে
জল গড়াতো কারণে অকারণে।
বাক শূন্য হয়ে যেতাম
কারোর কথার আঘাতে
হাউমাউ করে কাঁদতাম
দাদীর শাড়ির আঁচল ধরে।
ক্লাসে পড়া না পারলে বেত্রাঘাতে
হু হু করে কেঁদে ওঠা
আবেগী মানুষটা বিবেগী
হয়ে গেল একদিন!
অল্প বয়সে মা হওয়া আমার আমিটা
একসময় কোলের নিষ্পাপ শিশুর কান্না
দেখতে দেখতে নিজেই কাঁদতে ভুলে গেলাম।
বয়স যখন ত্রিশ ছুঁইছুঁই
তখন অনুভূতি শূন্য হৃদয় একেবারে।
এখন খুব একটা জ্বালাপোড়া হয় না,
কেউ আপন থেকে পর করে দিলে
অবাক চোখে তাকিয়ে রই না,
খুব বেশি আবেগী হয়ে কাউকে বলি না
যেও না!একটু থামো! দয়া করে থেকে যাও!
বাড়ির দরজাটা খোলা থাকলেও
আজকাল ছন্নছাড়া হওয়ার ভয় থাকে না।
জানালার কোল ঘেঁসে আসা নীম পাতা
ছোঁয়া বাতাস এখন আর বাড়ির অশুভ
তাড়াবে বলে ভাবি না।
প্রচণ্ড কষ্ট পেলে মরে যেতে ইচ্ছে হয় না
কারোর কথার আঘাত হৃদয় পর্যন্ত
পৌঁছাতেই পারে না,
চোখে এখন জোয়ার আসে না।
অভিযোগগুলো এখন নচিকেতার গানের মত-
অতীতটাকে বাক্সে পুরে শিকেই তুলে রাখ!
ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো একটু ভুলে থাক!
ধুলোর শহরে সব অতীত আর কষ্ট এখন ধুলোমাখা।
বয়সের ব্যবধানে একটা এলোমেলো
মানুষকে সময় নামের বাবাটা ঠিকঠাক গুছিয়ে দেয়,
এখন আর ব্যথিত হই না ছেলেমানুষী আবদারে,
কেন জানো? এখন অনুভূতি শূন্য হৃদয়
অবজ্ঞার জ্বালা দিয়ে পরিপূর্ণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণপরিবহনে মহিলাযাত্রীদের প্রতি সম্মান প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধনিরাপদ নৌ-রুট চাই