গণপরিবহনে মহিলাযাত্রীদের প্রতি সম্মান প্রসঙ্গে

রতন কুমার তুরী | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরে অসংখ্য চাকরিজীবী মহিলা শহরের ছোট বড় বাসগুলোতে যাতায়াত করতে বাধ্য হয় কারণ তাদের চাকরির মজুরির সাথে সঙ্গতি রেখেই তারা অপেক্ষাকৃত কমমূল্যের লোকালবাসে যাতায়াত করে এতে তারা পরিবারের জন্য কিছু অর্থ বাঁচায়, কিন্তু এই এসব চাকরিজীবী মহিলারা শহরের বাস কন্ট্রাক্টারদের হাতে সন্ধ্যার পর কী পরিমান যে হয়রানি হয় তা ভূক্তভোগীরা ছাড়া কেউ জানেনা। মূলতঃ বাস কন্ট্রাক্টাকদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত এবং ক্ষেত্র বিশেষে সন্ধ্যার পর কেউ কেউ নেশাগ্রস্থ থাকার কারণে এরা মা-বোনদের ইজ্জত সম্পর্কে এদের মাথায় ধারণা থাকে না। ফলে অনেকেই মহিলা যাত্রীদের সাথে ঠুনকো বিষয় নিয়েও অশোভন আচরণ করে বসে। এসমস্ত বিষয় নিয়ে চালককে বললেও কিছু চালক কন্ট্রাক্টারকে ধমক দিয়ে বিষয়গুলোর সমাধান দেয়ার চেষ্টা করলেও বেশিরভাগ চালকই বলেন আপনি প্রাইভেট গাড়িতে করে চলে যান, এটা লোকাল বাস এখানে শরীরে হাত লাগবেই।
প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার পর হাতেগোনা কিছু সংখ্যক ছাড়া বাংলাদেশে মহিলাদের তেমন চাকুরী করতে দেখা যায়নি ফলে সেসময় বাসগুলোতেও মহিলা যাত্রী ছিল নিতান্তই কম। কিন্তু ৮০ এবং ৯০-এর দশকে এদেশে গার্মেন্টস সেক্টরের সুবাদে চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের ব্যাপক জাগরণ ঘটে এবং এই নারী জাগরণের ফলে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়। প্রথম দিকে গার্মেন্টস কর্মীদেরও গাড়িতে, পথেঘাটে ব্যাপক ইভটিজিং-এর শিকার হতে হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে প্রায় প্রতিটি গার্মেন্টস তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলায় এবং গার্মেন্টস সমূহে প্রসাশনের কড়া নজরদারি থাকায় এখন আর তেমন পরিস্থিতি নেই। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় নারী স্বাধীনতার সবচেয়ে স্বণার্লী সময়ে এসেও বর্তমানে বেশকিছু বাসে বিকৃত রুচির বাস হেলপারদের দ্বারা মহিলা যাত্রীদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা প্রত্যাশা করবো বাস মালিকরা তাদের বাস সমূহে এমন চালক এবং হেলপার নিয়োগ দেবেন যারা নেশাগ্রস্ত নয় এবং বাসে মহিলা যাত্রীদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা করবে। বাস চালক এবং হেলপারদের মনে রাখতে হবে যে তার বাসের প্রতিটি মহিলা যাত্রী তার বোন, মা, চাচী, খালাদের মত। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র চালক এবং হেলপারদের সুন্দর এবং পবিত্র মনমানসিকতাই পারে একজন মহিলা যাত্রীর যাত্রাকে সুন্দর করতে এক্ষেত্রে চালক এবং হেলপারদের ব্যবহার অবশ্যই শোভন হতে হবে
প্রয়োজনবোধে এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে। তাই আমরা প্রত্যাশা করবো বাসে মহিলাযাত্রী ওঠানো এবং নামানোর ব্যাপারে চালক ও হেলপাররা যথেষ্ট যত্নবান হবেন, তাছাড়া বাসের ভেতর মহিলাযাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তা সর্বোচ্চ দরদ দিয়ে দেখবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাইনরিশ রোরার: নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী
পরবর্তী নিবন্ধবয়সের দৌড়ঝাঁপ