বৌদ্ধ-মায়ের কালজয়ী সন্তান হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী

দেবপ্রিয় বড়ুয়া | শনিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

এইমাত্র কলকাতা থেকে বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার বরাতে খবর পেলাম শতাব্দীর এপার বাংলা-ওপার বাংলার বৌদ্ধ মায়ের বরেণ্য কৃতী সন্তান, বেঙ্গল বুড্ডিস্ট এসোসিয়েশনের মাননীয় সভাপতি, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদক আমাদের সকলের প্রিয় বন্ধু- হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী শুক্রবার ভোর ৭.৩৫ মি. চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলকাতার স্থানীয় নাইটিংগেল হাসপাতালে লোকান্তরিত হন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪। তাঁর সুবিশাল বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন। আমরা তাঁর হাসপাতাল ভর্তি অবধি নিবিড়ভাবে স্বাস্থ্যের খবর রাখছিলাম। ভোরে উঠে ফোন দিলাম ধরেন না। আগের দিন বলছিল ‘অবস্থা খুব খারাপ। আমি কথা বলতে পারছি না।’ সকালে খবর পেলাম পৃথিবীর সব মায়া ত্যাগ করে আমাদের সবাইকে একরাশ শোকসাগরে ভাসিয়ে সাহিত্যের বরপুত্র ‘মরণকে তুঁহু মম শ্যাম সমান বলে’ চলে গেলেন। (অনিচ্ছা বতঃ সঙ্খারা…)। হেমেন্ধুদা ১০ দিন ধরে আপ্রাণ যুদ্ধ করেছেন মৃত্যুর সাথে। তারপর তাঁর দরাজ কন্ঠে বললেন- ‘মন মাঝি তোর বৈঠানেরে আমি আর বাইতে পারলাম না!’ আমি চললাম সেই অনন্তধামে যেখান থেকে কেউ ফেরে না।
আহা বন্ধু! কতো কথা তারে ছিল বলিতে! কোন কথা বলা হলো না ললিতে। শোকে হতো বিহ্বল আমরা। চোখের জলে স্ট্যাটাস লিখতে হবে ভাবি নি। আমরা বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের এ অকৃত্রিম বন্ধু- হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরীর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর চিত্ত-চ্যুতি প্রবাহের ঊর্ধ্বগতি কামনায় পুণ্যদান দিচ্ছি। হে বন্ধু! তোমার সবচেয়ে প্রিয়তম কবিগুরুকে আশ্রয় করে অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করছি-‘আজিকে হয়েছে শ্রান্তি; জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি; সব গেছে চুকে। রাত্রি-দিন ধুকধুক, তরঙ্গিত দুঃখ-সুখ, থামিয়াছে বুকে। যা কিছু ভালো-মন্দ, যা কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, কিছু আর নাই। বলো শান্তি, বলো শান্তি, নিঃশেষে হয়ে যাক ছাই।’
কতো কথা, কতো স্মৃতি হেমেন্দুদা মনে ভিড় করছে। তোমার সতীর্থরা, প্রিয়জনেরা, আত্মীয়-স্বজনেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও বৃথা হলো। তুমি মরণসাগর পারে দাঁড়িয়ে একাই যুদ্ধ করলে কিন্তু হেরে গেলে। মুহূর্তেই ছবি হয়ে গেলে বন্ধু। আমরাও একদিন তোমার মতো ছবি হবো। তারই প্রতীক্ষায় তাকিয়ে রইলাম। তোমার জন্য আমাদের প্রার্থনা ব্যর্থ হয়ে গেলো। এখানে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ দান করেছে তোমার প্রিয়জনেরা তা তুমি জানো না। সেজন্য তথাগত বলছেন- “পিয়তে জায়তো সোকো, পিয়তে জায়তো ভয়।” ‘সব্বে সঙ্খারা আনিচ্চাতি, সব্বে সঙ্খারা দুঃখাতি, সব্বে ধম্মা অনাত্তাতি।’ আজ সেটাই অমোঘ সত্য হয়ে ধরা দিলো। বৌদ্ধ সমাজ আজ বুঝবে তোমার মতো কি রত্ন তারা হারিয়েছে। তুমি নবতর বেশে, উন্নততর জীবন নিয়ে জম্বুদ্বীপের অন্য কোন বৌদ্ধ শ্রেষ্ঠর ঘরে আবার ফিরে এসো বন্ধু। তোমার অপেক্ষায় আমরা। নাহয় অন্যলোকে দেবালয়ে দেখা হবে হে প্রিয় বন্ধু আমার। অন্তিম জীবনের লহো আমার শেষ প্রণাম। ‘মৃত্যুরে কে রুধিতে পারে! আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে; তার নিমন্ত্রণ, লোকে লোকে নব নব পূর্বাচলে, আলোকে আলোকে!’ সেই আলোকে আলোকে তিরোহিত হলেন আমাদের এ উজ্জ্বল নক্ষত্র।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসুন, মাদকমুক্ত উন্নত সমাজ গঠনে ব্রতী হই
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষাবিদ আবদুল মোতালেব ও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা অধ্যায়