বোঝার উপায় নেই এটি এই সময়ের রেল স্টেশন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৮ মার্চ, ২০২২ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দেখে মনে হবে না কোনো রেল স্টেশন। পুরো স্টেশন এলাকার চারপাশের বিশাল জায়গা রাতারাতি প্রতিযোগিতা করে দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত অবৈধ বস্তি ও দোকান। রাতে দিনে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলে মাদক বিক্রি এবং জুয়ার আসর। স্টেশনের পেছনে এবং দুইপাশে বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত পার্সেল বগি, রেলবিটসহ মূল্যবান সামগ্রী। দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনের পেছনে এবং দুইপাশে ময়লার ভাগাড়।
সরেজমিনে দিন-দুপুরে সন্ত্রাসীদের পাহারায় স্টেশন এলাকায় নিয়মিত বসে জুয়ার আসর। চলে মাদক ব্যবসা। জুয়ার আসরের পাশে গেলে তেড়ে আসে সন্ত্রাসীরা। এই চিত্রটি ষোলশহর রেল স্টেশনের। বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী রেল ব্যবস্থাপনা ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের এই সময়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনের এমন চিত্র ভাবাই যায় না। স্টেশন এলাকাসহ আশপাশের সব খালি জায়গা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রেলের কর্মকর্তা-কমর্সচারীরা রীতিমত প্রতিযোগিতা করে দখলে নিয়ে নিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন শত শত অবৈধ বস্তিঘর এবং দোকান। স্টেশনের সামনে-পিছনে কোথাও খালি জায়গা অবশিষ্ট নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, স্থানীয় সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ীরা রেলের জায়গায় গড়ে তুলেছেন শতাধিক দোকান, কাঁচা বাজারসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বস্তিঘর। প্রতিটি ঘরের ভাড়া ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি দোকানের ভাড়া ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি মাসে অবৈধ দখলদার এবং রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেলের জায়গায় অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা দোকান এবং বস্তি থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা।
সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, ষোলশহর রেল স্টেশনের পেছনে এবং দুইপাশে বছরের পর বছর পড়ে আছে রেলের মূল্যবান পার্সেল বগি, রেল বিটসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি। রেল স্টেশনের পাশ ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে ৫শ’র বেশি অবৈধ বস্তিঘর। স্থানীয় প্রভাবশালী এবং সন্ত্রাসীদের ছাত্রছায়ায় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতদিন চলে জুয়ার আসর। স্টেশনে কর্মরত এক কর্মচারী আজাদীকে জানান, স্টেশনের আশপাশে বস্তিতে মাদক বিক্রি হয়। মাদক সেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকা। স্টেশনের পেছনে স্তূপ হয়ে পড়ে আছে লাখ লাখ টাকার রেলের পার্সেল বগি। স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, প্রতিনিয়ত একটি চক্র রেলের এ সব বগি থেকে যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন এবং রেলওয়ে পুলিশ-আরএনবি কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিমের কাছে উচ্ছেদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে জানান, আমরা আগামী ২০ এবং ২১ মার্চ গোয়ালপাড়াস্থ তুলাতলী বস্তি উচ্ছেদ করবো। এই তুলাতলী বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে আমাদের এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এ জন্য আমরা তুলাতলী বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর ২২ মার্চ সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবো। এরপর ধরবো ষোলশহর রেল স্টেশন। গতবার আমরা ষোলশহর স্টেশনের আশপাশ এলাকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ না পাওয়ায় আর উচ্ছেদ করতে পারিনি। এরপর অবৈধ দখলদাররা একটি রিট করেছে। তবে রিটে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। তাই আমরা অতিদ্রুত তৃতীয় ধাপে উচ্ছেদ করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাপায় নয়, মায়ের দেওয়া বিষে দুই শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপরোয়ানাভুক্ত আসামির সাথে কেক কেটে প্রত্যাহার চকরিয়া থানার ওসি