নাপায় নয়, মায়ের দেওয়া বিষে দুই শিশুর মৃত্যু

আদালতে জবানবন্দি

| শুক্রবার , ১৮ মার্চ, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ওষুধ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার এক সপ্তাহের মাথায় পুলিশের তদন্তে ঘটনা মোড় নিয়েছে অন্যদিকে। দুই শিশুসন্তানকে ‘মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে’ হত্যার দায় স্বীকার করে তাদের মা লিমা বেগম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপী গতকাল তার জবানবন্দি নেন। শিশু দুটির মা লিমা বেগমকে গত বুধবার রাতে উপজেলার দুর্গাপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, শিশুদের বাবা ওই গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাঈল হোসেন ওরফে সুজন খান বাদী হয়ে তার স্ত্রী লিমা এবং তার কথিত প্রেমিক সফিউল্লার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলাতেই লিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, লিমা আশুগঞ্জের একটি চালকলে কাজ করেন। সেখানে আরেক শ্রমিক সফিউল্লার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে দুই শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিনকে হত্যা করেন লিমা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেটা তিনি স্বীকার করেছেন।
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, শুরু থেকেই লিমাকে সন্দেহ হয়। ঘটনার দিন সফিউল্লাহর সঙ্গে ১৫ বার ফোনে কথা বলেন লিমা। ফোনকলের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা। সফিউল্লাহ বিষমাখা মিষ্টি এনে দেন। সেই মিষ্টি লিমা তার দুই সন্তানকে খাওয়ান। পরে তাদের মৃত্যু হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন লিমা।
গত ১০ মার্চ রাতে সাত বছর বয়সী ইয়াসিন খান এবং ৫ বছর বয়সী মোরসালিন খানের মৃত্যুর পর তাদের মা দাবি করেন, ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তার দুই ছেলে। লিমা বেগম সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, দুই ছেলের জ্বর হওয়ায় সেদিন বিকালে বাড়ির পাশের একটি ফার্মেসি থেকে তারা ‘নাপা সিরাপ’ এনে খাওয়ান। তারপর দুই ছেলেরই বমি শুরু হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে, এরপর জেলা সদর হাসাপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ‘প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে’ বাড়িতে আনার পথে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। আর বাড়িতে নিয়ে আসার পর রাতে মোরসালিন মারা যায় বলে পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনটি কমিটি করে। সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বেঙ্মিকো ফার্মাসিউটিক্যালসের এই প্যারাসিটামল সিরাপের তিন ব্যাচের নমুনা পরীক্ষা করে ‘ক্ষতিকর কিছু মেলেনি’। মামলার আরেক আসামি সফিউল্লাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅব্যাহতি চান দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি
পরবর্তী নিবন্ধবোঝার উপায় নেই এটি এই সময়ের রেল স্টেশন