বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্তিতে প্রতিক্রিয়া

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি মুসলমান নারী জাগরণের অন্যতম ছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখায় এ বছর বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন পাঁচজন বিশিষ্ট নারী ব্যক্তিত্ব। এদের মধ্যে দুই জন চট্টগ্রামের, একজন রাঙামাটির। সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের জন্য মুশতারী শফি (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এবং নারী শিক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এবং নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাঙামাটির মঞ্জুলিকা চাকমা। পদক প্রাপ্তির পর তারা দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া।

নারীকে নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে হবে- মুশতারী শফি
আজাদী প্রতিবেদন

সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ রোকেয়া পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখিকা শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নারী শিক্ষা, নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে একথা বলতে পারি না। সেই ৬০’র দশক থেকে বেগম রোকেয়ার পথ অনুসরণ করে সংগ্রাম করে যাচ্ছি, এখনো করছি। মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, সরকারি বিভিন্ন উচ্চ পদে নারীর বিচরণ আমাদের আশাবাদী করে তুলে। পাশাপাশি আমরা হতাশায় নিমজ্জিত হই, যখন দেখি নারীর কাঙ্খিত সেই মুক্তি এখনো অর্জিত হয় নি। ঘরে বাইরে নারী এখনো প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নারীদের বের হতে হবে, সম্মিলিতভাবে জাগতে হবে। নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে হবে। তবেই বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের সার্থকতা আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি রোকেয়া পদক প্রাপ্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি- ড. শিরীণ আখতার
চবি প্রতিনিধি

শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বেগম রোকেয়া পদক গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। অনুভূতি জানিয়ে চবি উপাচার্য দৈনিক আজাদীকে বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের পথপ্রদর্শক। উনবিংশ শতাব্দীতে যখন বাঙালি মুসলমান মেয়েরা নানা নিষেধের গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিল, তখন বেগম রোকেয়া এক আলোকবর্তিকা হয়ে মেয়েদের পথ দেখিয়েছেন। অনেক উঁচু ঘরের সন্তান হয়েও তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার স্কুলের জন্য ছাত্রী যোগাড় করতেন। অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েও তিনি কখনো নিরাশ হননি। তিনি সর্বদা তার চিন্তা, লেখনী ও কর্মের মাধ্যমে নারী জাগরণের স্বপ্ন দেখতেন। আজকে আমরা তার সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ আমাদের দেশে দেখতে পাচ্ছি। আজ স্থল থেকে আকাশপথে সর্বত্রই নারীরা রাজত্ব করছে। তবে এখনো আমাদের অনেক দূর যাওয়া বাকি। এদেশে এখনো নারী নির্যাতিত। এদেশে এখনো কন্যা শিশু রাতের বেলায় নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে না। আমি সবসময় চেষ্টা করি এসব নারীদের নিয়ে কাজ করতে। আমি তাদের কথা ভাবি, তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি। এই রোকেয়া পদক আমার সেই স্বপ্নের পালে নতুন হাওয়া লাগিয়েছে। নারীর জাগরণ তৈরির মাধ্যমেই আমি এই পদকের মূল্য রাখার চেষ্টা করবো।

এ পুরস্কার নারী উন্নয়নে কাজের স্বীকৃতি- মঞ্জুলিকা চাকমা
রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটির পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রথম নারী ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা চাকমা এবার পেলেন বেগম রোকেয়া পদক। গতকাল বুধবার পদক গ্রহণের পর তিনি অনুভূতি জানিয়ে দৈনিক আজাদীকে জানান, রোকেয়া পদক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার এটার গুরুত্ব অনেক। এটি পাওয়ার যোগ্যতা আমার আছে বলে আমি মনে করি না। এই পুরস্কার পাওয়ার জন্য অনেক যোগ্যতা লাগে। তবে এ পুরস্কার পেয়ে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রোকেয়া পদক পেয়েছি। এ পুরস্কার পাওয়া মানে, আমি যে এতদিন কাজ করেছি, নারী সমাজের উন্নয়নে, তার স্বীকৃতি। আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীরা কেন কোন পুরুষরাও ব্যবসা- বাণিজ্যে ছিল না। বলতে গেলে আমাদের পাহাড়ীদের মধ্যে ব্যবসা সম্পর্কে তেমন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এখন পুরুষরা যেমন ব্যবসা করছে এর পাশাপাশি মেয়েরাও ব্যবসা শুরু করেছে। ১৯৬০সালে আমার যখন বয়স ১৩ তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্রী, তখন আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমি অনেক সংগ্রাম করে এসএসসি পাস করেছি। একদিকে সংসার আর সন্তান লালন পালন করা আর অন্যদিকে, শিক্ষকতা অর্থাৎ চাকরি জীবন। তখন থেকে আমি সবকিছুর পাশাপাশি তাঁত থেকে কাপড় বুনতাম। এরপর শিক্ষকতার পাশাপাশি এইচএসসি ও স্নাতক পাস করেছি। অনেক সংগ্রাম করে আমি এতদূর পর্যন্ত এসেছি। নারী উদ্যেক্তা হওয়ার কোন চিন্তা কিন্তু আমার ছিল না। যখন দেখলাম চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা দাঁড় হয়ে গেছে। ব্যবসার জন্য প্রায় সময় ঢাকা এবং দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। এরপর থেকে ব্যবসার জন্য চাকরি করতে যখন সমস্যা হচ্ছিল এরপরই ১৯৭৬ সালে আমি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোনিবেশ করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের চেয়ে ভাসানচরে হাজার গুণ বেশি ভালো আছে রোহিঙ্গারা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬