ফিফা র্যাকিং এ বাংলাদেশের অবস্থান একবারে তলানিতে। আন্তজার্তিক অঙ্গনে ও বলার মত তেমন কোন সাফল্য নেই। কিন্তু বিশ্বকাপ উন্মাদনার মাত্রা বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশকে ছাড়িয়ে যাবে! বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হওয়ার পূর্বেই এদেশে শুরু হয় এই উন্মাদনা। বেশিরভাগ বাড়ির ছাদে পতপত করে উড়তে থাকে প্রিয় দলের পতাকা। সমর্থকদের মধ্যে প্রিয় দলের জার্সি কেনার ধুম পড়ে যায়। ঘরের দেয়ালে শোভা পায় প্রিয় দলের পোস্টার কিংবা খেলোয়াড়ের ছবি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়ান্ট স্কিনে একসাথে হাজার হাজার লোকের খেলা দেখার আয়োজন করা হয়। গ্রামের মানুষ ও মাসব্যাপী প্রাণভরে উপভোগ করে বিশ্ব ফুটবলের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইকে। খেলা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বাজি ধরা, প্রিয় দলের জয়লাভে ভুড়িভোজের আয়োজন কিংবা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল বের করা এদেশে স্বাভাবিক বিষয়। খেলা চলাকালীন সময়ে নারী, পুরুষ, ছেলে, বুড়ো সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। সমর্থিত দলের জয়লাভের আনন্দে কিংবা পরাজয়ের বেদনায় অনেকের চোখের ঘুম হাওয়া হয়ে যায়! প্রধান কয়েকটি দলের সমর্থকদের মধ্যে খেলা নিয়ে উত্তেজনা অনেক সময় হাতাহাতি এমনকি রক্তারক্তিতে গড়ায়। খেলার প্রতি ভালোবাসা অনেক সময় পাগলামোতে পৌঁছায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পতাকা টানানো কিংবা সমর্থন দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেবার মত ঘটনাও অতীতে এদেশে দেখা গেছে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশ না হয়েও এ ধরনের উন্মাদনা বিশ্ব মিডিয়াতে স্থান পাওয়ায় বাংলাদেশ আলাদাভাবে সমগ্র বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। এতে বুঝা যায় ফুটবল এদেশের মানুষের প্রাণের খেলা, সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। দুঃখজনক হলেও সত্যি ফুটবলের প্রতি মানুষের এই আবেগ ও ভালোবাসাকে পুঁজি করেও এদেশের ফুটবল তেমন একটা অগ্রসর হয়নি।
আর কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২ তম আসর। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে আলোচনা কিংবা উন্মাদনা কিছুটা হলেও কম। এর কারণ হিসেবে অনেকেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও যুদ্ধ পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন। মানুষ মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। তাই উৎসাহ – উদ্দীপনায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। এছাড়াও সারাবিশ্বে ফুটবল বিশ্বকাপের উত্তাপ কম থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে আয়োজক দেশ হিসেবে কাতার ও ফিফার ঢিলেঢালা প্রচারণাকে। মানুষের প্রত্যাশা শেষ মুহূর্তে এসে হয়তো সবকিছুর মধ্যে চিরচেনা সেই গতি ফিরে আসবে। ফুটবল জ্বরে কাঁপবে সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এবারের আসর হয়ত মর্যাদা পেয়ে যাবে বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম আসর হিসেবে। তাই প্রস্তুতি নিন বিশ্বকাপ ফুটবলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। প্রিয় দলের সাফল্যের স্বপ্ন বুনতে থাকুন। বাঙালি ফুটবল পাগল জাতি। কখনো বিশ্বকাপে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। কোটি বাঙালির স্বপ্ন প্রিয় বাংলাদেশ হয়তো কোন একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঠ মাতাবে !