বিনম্র শ্রদ্ধায় কামিনীকুমার ঘোষ

রূপম চক্রবর্ত্তী | শনিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সমাজে কিছু আলোকিত মানুষ রয়েছেন যারা দেশের জন্য কাজ করেন। দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। তাদের কাছে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। মানুষকে ভালোবাসতে পারলেই তারা আনন্দ লাভ করেন। আমৃত্যু যিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন এই রকম একজন মানুষ হচ্ছে সাতকানিয়া উপজেলার কামিনীকুমার ঘোষ। যিনি রায় সাহেব নামে পরিচিত, একজন বাঙালি সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা, চট্টগ্রামের শিক্ষা বিস্তারে যার অবদান চির স্মরণীয়।
বাংলা উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি কামিনীকুমার ঘোষ ১৮৮৮ সালের ১লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৬ সালে এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯০৮ এ উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯১০ সালে গণিতে অনার্স পাশ করেন। ১৯১২ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইন বিষয়ে বৃত্তিসহ উত্তীর্ণ হন। ১৯১৩ সালে কলকাতা থেকে ফিরে তিনি তার চাচা বঙ্গচন্দ্র ঘোষের সাথে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। তিনি বিয়ে করেছিলেন বাঁশখালী উপজেলার পালেগ্রাম চৌধুরীবাড়ির কন্যা শৈলবালাকে। তিনি ১১ সন্তানের জনক ছিলেন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি এলাকার শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার এই শূন্যতা অনুধাবন করে তিনি উদ্যোগ নেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার। তিনি শুরু করেন এস বি ঘোষ ইনস্টিটিউট (উচ্চবিদ্যালয়) এবং এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি হাসপাতাল। সাতকানিয়া-বাঁশখালী এডুকেশন সোসাইটি গঠন করে তিনি গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯২৯ সালে সঙ্গীদের সহযোগিতায় তিনি স্থাপন করেছিলেন আমিলাইষ-কাঞ্চনা বঙ্গচন্দ্র ঘোষ নামে একটি ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয়। পরে এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতকানিয়া কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন কামিনীকুমার। যা এখন চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
কামিনীকুমার ঘোষ এর বিভিন্ন সমাজসেবামূলক ও শিক্ষা প্রসারণমূলক কর্মকান্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় সাহেব খেতাবে ভূষিত করেন। তিনি ২৮ বছর চট্টগ্রামের জেলা পরিষদের সদস্য এবং সাত বছর সভাপতি ছিলেন। দেশপ্রেমিক এই মহান ব্যক্তিকে পাকিস্তানি হায়েনারা বাঁচতে দেয়নি। ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল শনিবার বেলা ১২টায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী দোহাজারী ক্যাম্প থেকে কাঞ্চনায় আক্রমণ চালায়। কাঞ্চনা গ্রামের অনেক বাড়িয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেক হিন্দু রমণীর ইজ্জত নষ্ট করেছিল। অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল। জনশ্রুতি আছে বাড়ির লোকজন বৃদ্ধ কামিনীকুমারকে বাড়ির শৌচাগারে লুকিয়ে রাখে, পরবর্তীতে কামিনীকুমার শৌচাগার থেকে বেরিয়ে ঘরে যাওয়ার পথে এক রাজাকার তাকে সনাক্ত করে এবং হানাদার বাহিনী গুলি করে তাকে হত্যা করে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বিনম্র শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমনে নেওয়া ও মেনে নেওয়া
পরবর্তী নিবন্ধআমেরিকা-কানাডার পথে