বিদ্যুৎ অপচয় রোধে নাগরিক সচেতনতা জরুরি

| বুধবার , ২০ জুলাই, ২০২২ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংসহ আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর সঙ্গে দোকানপাট শপিংমল রাত ৮টার মধ্যে বন্ধসহ বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। চলমান জ্বালানি-সংকট পরিস্থিতি বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ইউরোপের প্রতিটি দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেউ কেউ জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলোও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এখন একটা সংকটময় সময় পার করছে গোটা বিশ্ব। এর মূল কারণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

সাশ্রয়ের কোনো বিকল্প ছিল কি না, এমন প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, এখন এসব সিদ্ধান্ত না নিলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে। ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি খরচ পড়ছে ৪০ টাকা। অথচ পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয় সাড়ে পাঁচ টাকা। এলএনজি কিনতে ইউনিটপ্রতি খরচ পড়বে ৩৯ টাকা। গ্রাহকের কাছে এক ইউনিট গ্যাস বিক্রি করে গড়ে পাওয়া যায় সাড়ে ৯ টাকা। দাম স্থিতিশীল রেখে সরকারি ভর্তুকি সাশ্রয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। আপাতত জ্বালানির দাম বাড়ানোর চিন্তা নেই সরকারের।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সারাদেশে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। তবে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে শিল্পকারখানা লোডশেডিংয়ের বাইরে থাকবে। বিতরণ কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের তালিকা দিতে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ মনে করছে, সন্ধ্যার পর সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করে ৯৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যাবে।

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ২০ শতাংশ ডিজেলের ব্যবহার কমানোর চিন্তা করছে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে ১০ শতাংশ ডিজেল সাশ্রয় করা যাবে। বাকি ৯০ শতাংশ ব্যবহার করা হয় পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে। এসব খাত থেকে ১০ শতাংশ ব্যবহার কমাতে হবে।

আসলে বিদ্যুৎ অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। বিদ্যুৎ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। তার কোনো বিভ্রাট বা লোডশেডিং মানুষের কাছে অসহ্য। অথচ সেই পরিস্থিতি এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চলছে বিদ্যুতের ভয়াবহ হাহাকার। এই ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এখন সাধারণ মানুষ। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। আমাদের দেশে লোডশেডিং নতুন কিছু নয়, এটি একসময় ছিল নিত্য ঘটনা। কিন্তু বর্তমান সরকারের ব্যাপক সাফল্যে মানুষ লোডশেডিংয়ের দুর্গতির কথা ভুলে গিয়েছিল। দেশের মানুষের জন্য অন্যতম সুসংবাদ ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ার পর লোডশেডিংয়ের বিদায় নেওয়া। অনেকের কাছে তা ছিল দুঃসহ স্মৃতির মতো। বলা বাহুল্য, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ২০৪১ সালের মধ্যে তা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে তোলার টার্গেট রয়েছে সরকারের। এ অবস্থায় সেই লোডশেডিং যন্ত্রণা আবার ফিরেছে। আজ সেই দুর্গতি আবার মানুষের ঘাড়ে এসে সওয়ার।

বিদ্যুৎ নিয়ে আমাদের এখন চিন্তা করার সময় এসেছে। অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগের বিষয় নয় এটি। আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, সরকার এই সমস্যার সমাধান করতে সাধ্যাতীত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার অগ্রাধিকারে গুরুত্ব দিচ্ছে বিষয়টিতে। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাশ্রয়ী হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। জনগণকে গাড়িতে অহেতুক ঘোরাঘুরি না করতে, বেশি তেল না পোড়ানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এবার নতুন করে নির্দেশনা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের সাশ্রয়ী নীতিকৌশল অবলম্বন করে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে বিদ্যুতের সংকট অতটা হবে না। এখন সবারই উচিত বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করা। এটা ঠিক যে আমরা নিজেদের অজান্তে প্রতিদিনই অনেক বেশি বিদ্যুৎ অপচয় করে ফেলি। একই সঙ্গে দিনকে দিন বাড়তে থাকা প্রযুক্তির পরিমাণ তো আছেই। তাই বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময় তা অপচয় হচ্ছে কি না সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া মানে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে দেশকে এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করা। আমাদের সবাইকে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে