বিদ্যুতের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে

| বুধবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

পিডিবি গ্রাহক পর্যায়ে আগামী মাস (ফেব্রুয়ারি) থেকে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দৈনিক আজাদীতে গত ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে পিডিবির এই প্রস্তাবের উপর শুনানি শেষে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিডিবি চট্টগ্রামের এক প্রকৌশলী। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের উপর নির্ভর করছে গ্রাহক পর্যায়ে কত শতাংশ বাড়বে। এ ব্যাপারে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের উপর শুনানি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর চূড়ান্ত হবে কত শতাংশ বাড়ছে। এটা প্রথমে ৫ শতাংশও হতে পারে, ১০ শতাংশও হতে পারে আবার ১৫ শতাংশও হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী।

জানা গেছে, পিডিবির প্রস্তাবনার উপর প্রধানমন্ত্রী যত শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দেবেনসেটাই বাড়বে। পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ দশমিক ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১৫ টাকা (১৪ দশমিক ৬৮ টাকা) করার প্রস্তাব দিয়েছে। ইতোমধ্যে পিডিবির এই প্রস্তাবের উপর শুনানিও সম্পন্ন হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী মাস থেকেই তা কার্যকরের প্রস্তাব করা হয়েছে। উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে এ প্রেক্ষাপটে চারটি বিকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এর পাশাপাশি বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির ফলে বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর লোকসান শূন্যে নামাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পিডিবি।

সম্প্রতি চূড়ান্ত করা এ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর বর্তমান গড় ট্যারিফ আট টাকা ২৫ পয়সা। তবে বিদ্যমান বাল্ক (ছয় টাকা ৭০ পয়সা) ট্যারিফে ভারিত গড়ে তারা ৫৫ পয়সা বা ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে। এর সাথে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি করলে তাদের লোকসান আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই লোকসান শূন্যে নামিয়ে আনতে বাল্কের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার ছয় টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। এর সাথে বিতরণ লস, বিতরণ কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় যুক্ত করলে খুচরা মূল্যহার ভারিত গড়ে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা করতে হবে। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর লোকসান শূন্য হবে। এজন্য গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার গড়ে ছয় টাকা ৪৩ পয়সা বা প্রায় ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রস্তাবনায় জানানো হয়েছে, বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধিতে প্রস্তাব কার্যকর করলে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে পাঁচ শতাংশ হারে বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে।

বিদ্যুতের এমন মূল্যবৃদ্ধির খবরে দেশের জনসাধারণ, বিশেষ করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। কারণ বিদ্যুতের দাম এতোটা বাড়ানো শোভনীয় নয়। বিদ্যুতের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। ফলে আরেক দফা বাড়বে দ্রব্যমূল্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। এমনিতে রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের শিল্প খাত। এ অবস্থায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সংকটে পড়বে এ খাত। চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। সেক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে ভোগান্তি দেখা দেবে সর্বস্তরেই। এতে বেড়ে যাবে উৎপাদন খরচ, ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়তে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে। তাই বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, ‘গ্যাসবিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। অন্তত এ বছর বিদ্যুতে সহনীয় পর্যায়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা করে দেয়া যায় কিনা তা যদি সরকার ভেবে দেখে তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারবো। ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে বিদ্যুতের দাম বাড়লে তা সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে। চলতি বছর বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ালে তা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়ক হবে।’ তাঁরা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো মোটেই ঠিক হয়নি। এতে পোশাকশিল্পসহ শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে ব্যাহত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর দায় চাপছে গ্রাহকদের ওপর। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে