বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী

ফারজানা আজিম | বুধবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ

২০২১সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে এবং এর মধ্যে দিয়েই মুজিব বর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি ঘটবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যাতে মহান বিজয় দিবস তথা সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব কে ব্যাহত করতে না পারে সে জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিজয় দিবস বাংলাদেশের বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয় প্রতিবছর। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি বাহিনীর। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ঘটে। সারাদেশে উড়েছিল বিজয়ের পতাকা এসেছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মহেন্দ্রক্ষণ।
সেই থেকে প্রতিবছর আমরা ১৬ই ডিসেম্বর দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করি এবং এই দিনকে সরকারিভাবে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। নয় মাসের যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনাতে অনেক হারাতে হয়েছে বাংলাদেশকে । লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার মাঠ ঘাট। শহীদের রক্ত কি বৃথা হয়েছে? নাকি যে আকাঙ্‌ক্ষা নিয়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল লাখো মানুষ তাদের সব আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে? এক কথায় কোনো প্রশ্নের উত্তরই দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি জাঁকজমক ভাবে, কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী তে এসে অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও কি আমরা স্বাধীন হয়েছি? ১৯৭১সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ছিল অনেক যা অনেকখানি পূর্ণ হয়নি। সেখানে উদার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা নিশ্চয়ই আসবে, অবাধ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল তা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যোগফলের ভাষা এবং সংস্কৃতিকে সব জায়গায় অগ্রাধিকার দেওয়ার সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গটিও খুব বড় হয়ে উঠবে অবশ্যই। এতসব অপ্রাপ্তিকে সঙ্গে নিয়েই করোনাকালে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী শুভলগ্নে বাংলাদেশ। এদেশে বিশ্ব ব্যাংক তাকিয়ে দেখে পদ্মা সেতু। দুর্নীতিতে ধারাবাহিকতা বা আরও বাড়বাড়ন্তের মাঝেও একটি বিষয়ে অন্তত খুব গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ। অর্থনীতি অনেক সূচক একাত্তরের শত্রুপক্ষ পাকিস্তানের চেয়ে তো বটেই এমনকি মিত্রদেশ ভারতের চেয়েও অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। ১৬ ই ডিসেম্বর –আজ বাঙালি জাতির গৌরব এর দিন, বিশ্ব মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকা স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে তাদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে আজ।
আসুন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল সামপ্রদায়িক, সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করি। কারণ ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই বড় কঠিন।’
সবশেষে গায়ক হায়দার হোসেনের গানের লাইনগুলো বারবার মনে পড়ছে :‘কি দেখার কথা কি দেখছি, / কি শোনার কথা কি শুনছি, / কি ভাবার কথা কি ভাবছি, / কি বলার কথা কি বলছি /স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি।’ স্বাধীনতা কি আজ বন্দী শুধু আনুষ্ঠানিকতায়?

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীনতা, মানবতার জয়গান
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে