বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

চারদিকে বাঙালির বিজয় পতাকা উড়ছে। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন-চীনের পাকিস্তান রক্ষার কূটনৈতিক সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। একাত্তরের রক্তঝরা ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের চলমান যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রাশিয়া তৃতীয়বারের মতো ভেটো দেয়। রাশিয়ার ভেটোতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ হয়ে না গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন আরও দেরি হতো। ১৯৭১ সালের এই দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ চায় না, তবে যুদ্ধ বাধলে সে তাতে জড়িয়ে পড়বে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বললেও এই দিনই ২৪ ঘণ্টা থেমে থাকার পর বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর।
এদিকে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে ঢাকা দখলের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বাংলাদেশ নামক দেশের অভ্যুত্থান ঠেকাতে না পেরে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব ও মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের নিয়ে ঘৃণ্য ও বর্বর ষড়যন্ত্র চালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকে। চালাতে থাকে শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে নিষ্ঠুর ও নির্মম কায়দায় হত্যাযজ্ঞ। তবুও বিজয়ের প্রায় দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায় বীর বাঙালি।
যুদ্ধ জয়ের নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখে মিত্রবাহিনী যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে। কারণ তারা জানমালের ক্ষতি কম করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের দিকে নিয়ে যায়। ঢাকা দখল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। বালীগঞ্জে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিও থেকে ঘনঘন সংবাদ বুলেটিন পরিবেশন করা হয়। আজ থেকে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হতে চলেছে এই সংবাদে প্রতিটি বাঙালি উদ্বেলিত। শরণার্থী শিবিরগুলোতে স্বাধীন দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছে। স্বাধীন মানুষের মনে ঘরে ফেরার আনন্দ আর নতুন জীবনের প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিচারক, সরকারি কর্মকর্তারাও রাজপথে
পরবর্তী নিবন্ধঅভিমানী এক মা ও উজ্জ্বল পুলিশ