বিচারক, সরকারি কর্মকর্তারাও রাজপথে

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদ

| রবিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

আজাদী প্রতিবেদন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে এবার রাস্তায় নেমেছেন চট্টগ্রামের বিচারকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও। গতকাল শনিবার সকালে নগরের দামপাড়ায় জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন বিচারকরা। এ সময় বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রায় ১০০ বিচারক উপস্থিত ছিলেন। পরে মিছিল নিয়ে বিচারকেরা এম এম আলী রোডে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যান। সেখানে সরকারি অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন তারা। তাছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ মানববন্ধন, কেউ বিক্ষোভ মিছিল, কেউ মৌন মিছিল করেন। পরে সবাই শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে সমবেত হন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর ও ভাস্কর্য বিরোধিতায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই অস্তিত্বের দুটি নাম। জাতির পিতার ওপর আঘাত মানে বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত, সংবিধানের ওপর আঘাত। এটি গভীর ষড়যন্ত্রের নমুনা। ভাস্কর্য বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না। রাস্তায় নামলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা চাই না, এই ধরনের ইস্যু নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনো প্রতিবাদে হাজির হই। আমাদের কাজ সেবা দেওয়া। সেই কাজটি আমরা করতে চাই। যদি আপনারা সেই কাজটি করতে বাধা দেন, অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেন, তাহলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে থাকবে না। যদি এই দেশে থাকতে চান-তাহলে এই দেশের নীতি আদর্শকে সম্মান করতে হবে। দেশের অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করছে তাদের সকলের অতীত খুঁজে দেখেন, তাদের কী ভূমিকা ছিল। এই ঘৃণ্য শত্রুদের বাঙালি জাতি বার বার পরাজিত করেছে, আগামীতেও করবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছরে যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি-সেই সময়ে পরাজিত শক্তি আবারও সাহস করছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আঘাত করার। যারা বাংলাদেশ চায়নি, যারা ১৯৭১ সালে পাক হানাদারদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, আজকেও সেই তারাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের ভূমিকা ও মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের পূর্বপুরুষরা যে মানসিকতার ছিল, এখন তাদের ছেলে-নাতিরাও সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ-তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হানা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে অসম্মান করা মানে দেশ ও সার্বভৌমত্বকে অসম্মান করা। সংবিধানকে অসম্মান করা। আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান’। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতিতে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে আমরা দেশের সব নাগরিককে অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি যারা হীন স্বার্থে দেশবিরোধী চক্রান্তে জড়িত তাদের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। দুষ্কৃতিকারী, চক্রান্তকারীদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. নায়েবুল ইসলাম ফটিক প্রমুখ।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে দামপাড়া পুনাক ভবনের সামনে বিচারকদের মানববন্ধন ও সমাবেশে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমাইল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে আজ সারা বাংলাদেশ বিক্ষুব্ধ। বিচারকগণও বাংলাদেশের নাগরিক। এই প্রতিবাদ তারই অংশ। বিচারকরা বিচার করবে, সাথে প্রতিবাদও করবে। নাগরিক হিসেবে বিচারকেরও দায়িত্ব আছে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হওয়ার।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের ১০০ বিচারক আজকের(গতকাল) প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছেন। তারা দেশ ও জাতিকে জানাতে চাইছেন যে, বিচারকরা শুধু বিচার নয়, প্রতিবাদও করতে জানে। জাতির জনকের প্রশ্নে বিচারকদের কাছে কোনো আপস নেই। সংবিধান জাতির জনকের সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য বিচারকদের দায়িত্ব দিয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন, মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক আবু সাঈদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বক্তব্য দেন। শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন বিচারকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসামি মারা যাওয়ার এক যুগ পর অধিকতর তদন্তে দুদক
পরবর্তী নিবন্ধবিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ