বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ-সহিংসতায় শেষ হল দ্বিতীয় ধাপের ভোট

৪৬টিতে আ.লীগ ও ৪ টিতে বিএনপির জয়

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, বর্জন এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার শীত ও করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোটগ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারের লাইন। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বেলা চারটা পর্যন্ত চলা ভোটগ্রহণে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি সহিংসতা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৬০ পৌরসভার মধ্যে তিনটিতে অনিয়ম, কাপচুপির ও এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। তবে, রিটার্নিং কর্মকর্তারা বলছেন, ভোট সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ তারা পাননি।
ঘোষিত ফলাফলে ৪৬টিতে আ.লীগ ও ৪ টিতে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের পাঁচজন ও বিএনপির একজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাসদের একজন করে প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের নির্বাচনের ফল স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাসদের একজন করে প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ফল। সংশ্লিষ্ট এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেসরকারিভাবে এসব ফলাফল পাওয়া গেছে।
বিএনপির ভোট বর্জনের বিষয়ে আ.লীগের প্রার্থীরা বলছেন, পরাজয় দেখে হয়ত ভোট বর্জন করেছেন তারা। অন্যদিকে বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, কোথাও কোনো ধানের শীষের এজেন্ট দেখা যায়নি। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে মন্তব্য তার। ভোটার সংখ্যা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করা হয়। আর ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হয়। নারায়ণগঞ্জের তারাবো, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙুরা ও পিরোজপুরে মোট চারটি পৌরসভায় ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। তাই বাকি ৫২টিতে মেয়র পদে ভোট হয়। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশিন। ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে এবং বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। এই ধাপের নির্বাচনে মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিএনপির তিন মেয়র প্রার্থীর ভোট বর্জন :
কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে এনে বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ও বিএনপি প্রার্থী জুলফিকার আলীসহ ১৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের ভোট দিতে না পারায় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক প্রামাণিক। এছাড়া কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নূরুল মিল্লাত ভোট গ্রহণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। জানাযায়, মোংলায় ভোট বর্জনকারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত সমর্থিত দুজনসহ মোট ৯ জন রয়েছেন। এছাড়া ৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীও ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার সকাল ১০টা ৪৫মিনিটে বিএনপির মেয়র প্রার্থী জুলফিকার আলীর মোংলা পৌরসভার মাদ্রাসা রোডের নিজ বাসভবনে প্রার্থীরা এ ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, রাজশাহী আড়ানী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে গত দুদিন ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও সেখানে তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণভা ভোট গ্রহণ হয়েছে।
গতকাল ভোটগ্রহণ শুরুর পর ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক প্রামাণিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর এলাকায় নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের সামনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভবানীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। মেয়র পদে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্‌দ্িবতা করছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী ছাড়া অন্য দুইজন হলেন- স্বতন্ত্র এসএম মামুনুর রশীদ (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) এবং কামাল হোসেন। কামালের প্রতীক নারিকেল গাছ। আর মামুনুর রশীদের প্রতীক জগ। দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহীর তিনটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্য দুটি পৌরসভা হলো- গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এবং বাঘা উপজেলার আড়ানী।
সংঘর্ষ ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ :
মোংলা, রাজশাহীর ভবানিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা ছাড়া কুমিল্লার চান্দিনা ও কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চান্দিনা পৌরসভায় ভোটকেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। এসময় একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও তিনজন। এছাড়া, কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ১০ নং ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার সকালে ভোটগ্রহণের শুরুতেই ওয়ার্ডের মিলপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালানো হয় বলে জানা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাস ও ট্রাক টার্মিনাল হবে?
পরবর্তী নিবন্ধটাকা ভাঙতি না পেয়ে দোকান ভাঙচুর