বাস ও ট্রাক টার্মিনাল হবে?

নতুন মেয়রের সামনে চ্যালেঞ্জ ৫

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

নগরে প্রতিদিন বাড়ছে গণপরিবহনের চাপ। পাশাপাশি দেশের ৬১টি জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার বাস নগরে প্রবেশ করে। এছাড়া বন্দরকেন্দ্রিক আরো ৮ থেকে ১০ হাজারের বেশি ট্রাক, লরি, ট্রেইলার ও কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি আসা-যাওয়া করে।
বিপুল সংখ্যক গাড়ির চাপ থাকা সত্ত্বেও নগরে স্থায়ী বাস ও ট্রাক টার্মিনালের অভাব আছে। বর্তমানে শহরে মাত্র দুটি বাস ও একটি স্থায়ী টার্মিনাল আছে। পরিকল্পিত বাস-ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় সড়কে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা। যেখানে-সেখানে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে গাড়িগুলো। ফলে বাড়ছে যানজট। শহরের প্রবেশমুখ এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে নগরবাসীর কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন শ্রমিক, মালিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল থেকে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাবি আছে। সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পও গ্রহণ করে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেটি আটকে আছে। এদিকে সিএমপি থেকে চিঠি দিয়েও চসিককে টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয় বিভিন্ন সময়। এ অবস্থায় ঘনিয়ে আসছে চসিক নির্বাচন। নগরবাসীর প্রশ্ন, নতুন মেয়র বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণে চ্যালেঞ্জ নেবেন? আটকে থাকা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে উদ্যোগ নেবেন?
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে সিটি কর্পোরেশন কুলগাঁওয়ে টার্মিনাল নির্মাণে ১ হাজার ২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর অনুমোদিত প্রকল্পটি আটকে আছে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায়। এদিকে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নগরে বাস-ট্রাক টার্মিনালে সহযোগিতা চেয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে, বিশেষ করে ভাটিয়ারী এলাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন। এর আগে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর চসিক প্রশাসক ও সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ যৌথ বৈঠক করেন। এতে পরিবহন সেক্টরের উন্নয়নের স্বার্থে নগরে পৃথক পৃথক বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণে একমত হয়েছেন দুজনই। তারা মনে করেন, দুটি টার্মিনাল নির্মাণ সময়ের দাবি। তবে সবচেয়ে বেশি দরকার টার্মিনালের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিএমপি থেকে চসিককে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল গাড়ি রাখার সুষ্ঠু পরিবেশ নাই। তাই সকল বাস নতুন ব্রিজ এলাকাজুড়ে পার্কিং করার ফলে সেখানে যানজট হচ্ছে। ওই চিঠিতে অলংকার মোড় অথবা সিটি গেট সংলগ্ন সুবিধাজনক স্থানে ঢাকামুখী ও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আগত বাসের জন্য টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। এছাড়া বন্দরের টোল রোডের পাশে, বন্দর সংলগ্ন স্থান ও স্টিল মিল ৭ নং সল্টগোলা খালি জায়গার যেকোনো একটিতে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি, লং-ভেহিকেল ও প্রাইমমুভারের জন্য টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। নির্মাণাধীন চাক্তাই খালের উপর সংযোগ সেতু এলাকার পূর্ব দক্ষিণাংশে দ্বিতীয় শাহ আমানত সেতুর গোড়ায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের পরিত্যক্ত জায়গায় দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী নিকটবর্তী উপজেলার বিভিন্ন রুটের মিনিবাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে নগরে বহদ্দারহাট ও কদমতলী এলাকায় দুটি স্থায়ী বাস টার্মিনাল ও নিমতলায় স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল আছে।
নগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে জানা গেছে, টার্মিনাল সংকটের কারণে বাস-ট্রাক চালকগণ নিয়মের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা-উপজেলাসহ শহরের অভ্যন্তরীণ যাত্রী ওঠানামা করছে। রাস্তার উপর পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য ভারী গাড়িতে মালামাল লোড ও ডেলিভারিসহ যানবাহন মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাস-ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহন অপেক্ষমাণ সময়ে টার্মিনালের অভাবে রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকে। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে হলে বাস-ট্রাক টার্মিনালের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামের বর্ধিত নগর ও জনসংখ্যার বিষয়টি বিবেচনায় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করব। শহরে চট্টগ্রাম বন্দর, ইপিজেড, কর্ণফুলী, কেইপিজেড, ইকোনমিক জোনগুলোর পণ্য ওঠানামা এবং দূরপাল্লার পরিবহনে বিপুল সংখ্যক ভারী যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করছে। রয়েছে গণপরিবহনের ব্যাপক চাপ। টার্মিনাল না থাকলে শৃঙ্খলা আসবে না।
তিনি বলেন, কুলগাঁওয়ে বাস টার্মিনাল হবে। তা এখনো সম্ভাব্যতা যাচাই, জমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে আছে। শহরকে ছিমছাম, যানজটমুক্ত রাখার জন্য বড় আকারের অন্তত তিনটি বাস টার্মিনাল থাকা উচিত। যেগুলো হবে রাজধানী, দক্ষিণ এবং উত্তর চট্টগ্রাম থেকে আসা পরিবহনের জন্য। আমাদেরকে আধুনিক, যুগোপযোগী, বাস্তবভিত্তিক, বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টার্মিনালগুলোতে আগমন এবং বহির্গমনের জন্যে সুবিশাল স্পেসসহ একসাথে কয়েকশ গাড়ি রাখার জায়গা, আধুনিক সুবিধাসহ যাত্রীদের অপেক্ষালয়, বিশ্রামাগার, গণশৌচাগার, নামাজের স্থান, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ময়লা আবর্জনার ডাম্পিং স্থান থাকা উচিত। নির্বাচিত হলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেব।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, অপরিকল্পিত জায়গায় বাস-ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই পরিকল্পিতভাবে কর্ণফুলী ব্রিজের ওপারে এবং সিটি গেট এলাকায় টার্মিনাল করা গেলে শহরে চাপ কমবে। এ বিষয়ে আমার পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, কীভাবে যানজট নিরসন এবং বাস-টার্মিনালগুলো পরিকল্পিতভাবে সাজানো যায় এঙপার্টদের কাছ থেকে তার পরামর্শ নিয়ে সে আলোকে পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করব। টার্মিনাল নির্মাণে কর্পোরেশনের যে প্রকল্পটি আটকে আছে তা আরো দ্রুত কীভাবে শেষ করা যায় সে জন্য কাজ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ-সহিংসতায় শেষ হল দ্বিতীয় ধাপের ভোট