বাড়তি মাংস না দেয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যাপক সংঘর্ষ

বর-কনের বাবা-মাসহ আহত ১০

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়তি মাংস না দেয়াকে কেন্দ্র করে বর-কনেপক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে বর, কনের বাবা-মাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার মৌলভীর দোকান এলাকায় নিরিবিলি কমিউনিটি সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে সাতকানিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ঘটনার পর থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কনে পক্ষের লোকজন কমিউনিটি সেন্টারে বসে থাকার পর পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে মীমাংসার পর বরপক্ষ কনেকে ঘরে নিয়ে যায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব কাজীর পাড়ার মো. কালু মিয়ার পুত্র মো. শাহজাহান এবং নোয়াখালীর সূবর্ণচরের চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা (বর্তমানে চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভার হাছনদন্ডী এলাকার বাসিন্দা) জসীম উদ্দিন ফারুকের মেয়ে মুক্তা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান চলাকালে বরপক্ষের কয়েকজন লোককে খাবারে অতিরিক্ত মাংস না দেয়াকে কেন্দ্র কনেপক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালায় বরপক্ষ। খবর পেয়ে বর মো. শাহজাহান সাধারণ পোশাকে কমিউনিটি সেন্টারে ছুঁটে এসে কনেপক্ষের লোক এবং কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ লোকজনের উপর হামলা চালায়। পরে বর ও কনেপক্ষের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ হয়। এতে বর মো. শাহজাহান (৩০), কনের বাবা জসীম উদ্দিন ফারুক (৫৬), মা রাশেদা বেগম (৪৭) মামা মো. বাবুল (৪৩), চাচা মো. আলাউদ্দিন (৫২), বরের আত্মীয় মো. মানিক (২৮), মো. রফিক (৩০) ও স্থানীয় যুবক মো. হুমায়ুন (১৯) সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়।
অনুষ্ঠানে বাবুর্চির বয় আবুল কাশেম জানান, শুরু থেকে কোন সমস্যা হয়নি। দেড়টার দিকে আমার দায়িত্বাধীন টেবিলে খেতে বসা বরযাত্রীদেরকে চিংড়ি, খাসি ও গরুর মাংসসহ সব খাবার দিয়েছি। একটু পরে কয়েকজন মিলে অতিরিক্ত মাংস দিতে বলেন। তাদের কথা মতো আমি পুনরায় গরুর মাংস এনে দিই। কয়েক মিনিট যেতে না যেতে আবারো মাংস আনতে বলেন। তখন আমি তাদেরকে জানায় তিনবার মাংস দেয়ার সুযোগ নাই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে কনেপক্ষের লোকজনকে গালি দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে কনের বাবা এসে তাদের চাহিদা মতো মাংস দিতে বলেন এবং বুঝিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন বরযাত্রী মিলে কনের বাবাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা চলে যাওয়ার পর পুনরায় খাবার দেয়া শুরু করি। এরই মধ্যে কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে বিয়ের বর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে কনে পক্ষের লোকজনকে মারধর শুরু করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
কনের চাচা মো. আলাউদ্দিন জানান, বিয়েতে ৩০০ জন বরযাত্রী খাওয়ানোর কথা ছিল। কিন্তু দুইটার মধ্যে তারা ৪৫০ জনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেছে। তবুও আমরা কিছু বলিনি। তৃতীয়বারের মতো মাংস না দেয়ায় তারা এমন কাণ্ডটি ঘটিয়েছে।
বরের বাবা মো. কালু মিয়া জানান, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়েছে। তবুও আমরা পুলিশ এবং চেয়ারম্যানদের মধ্যস্থতায় কনেকে নিয়ে এসেছি।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বরপক্ষের কয়েকজন লোক তাদের চাহিদা মতো মাংস না পেয়ে কনেপক্ষের উপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে বর তার বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে কনেপক্ষের উপর পুনরায় হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বর, কনের বাবা-মাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ, ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোসাদ হোসেন চৌধুরী, চন্দনাইশের সাতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আহমদুর রহমান ডিলার ও কালিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদ বর ও কনেপক্ষের লোকজনের সাথে বৈঠক করে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। এরপর বরপক্ষের লোকজন কনেকে ঘরে তুলে নেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ উপজেলায় শনাক্ত হয়নি একজনও
পরবর্তী নিবন্ধ১৭ অক্টোবর রাতে চকরিয়ায় কেন এসেছিলেন ইকবাল