১৭ অক্টোবর রাতে চকরিয়ায় কেন এসেছিলেন ইকবাল

চকরিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লায় ধর্ম অবমাননায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়িয়ে দেওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান কক্সবাজারে। এর একদিন আগে ১৭ অক্টোবর রাতে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার সবুজ পাহাড়ে তাকে দেখতে পান স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, তখন তার হাতে গামছা মোড়ানো কোরআন শরীফ দেখে অবাক হন তারা। এ সময় স্থানীয়রা তাকে রোহিঙ্গা বা অন্য ধর্মের অনুসারী মনে করে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন। তখন নিজেকে মুসলিম এবং নাম ইকবাল হোসেন বলার পর স্থানীয়রা তাকে কলেমা পড়তে বললে তা পাঠ করেন। তখন স্থানীয়রা বুঝতে পারেন, তিনি মুসলিম।
স্থানীয়রা আরো জানান, প্রশ্নোত্তরে ইকবাল তার বাড়ি কুমিল্লা এবং তিনি কঙবাজার শহরে হোটেলে কাজ করেন বলে দাবি করেন। এ সময় তার হাতে থাকা কোরআন শরীফটি স্থানীয় রমজান আলী মোর্শেদ নিয়ে নেন। এরপর তাকে কঙবাজার শহরের একটি গাড়িতে তুলে দেন।
খুটাখালী সবুজ পাহাড় এলাকার স্থানীয়দের ধারণা, কুমিল্লায় ধর্ম অবমাননার ঘটনার পর নিজেকে বাঁচাতে কঙবাজারে আত্মগোপনে চলে আসেন ইকবাল। কিন্তু কঙবাজার শহরে পৌঁছার আগে ১৭ অক্টোবর রাতে মহাসড়কের চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় নেমে যান। এ সময় মহাসড়কের পাশে দেখতে পান, পাহাড়ের উপর স্থাপনা। ওখানে যেতে পাকা সিঁড়িও রয়েছে। তাই তিনি মনে করেছিলেন, পাহাড়ের উপর কোনো মন্দির রয়েছে। এখানেও তার উত্তেজনা সৃষ্টি করার লক্ষ্য ছিল বলে তাদের ধারণা।
স্থানীয়দের এমন ধারণা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় জানিয়ে ১৮ অক্টোবর চকরিয়া থানায় যোগদান করা ওসি মো. ওসমান গণি আজাদীকে বলেন, কুমিল্লায় ধর্ম অবমাননায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন কঙবাজার শহর থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাবাসাদে বিভিন্ন তথ্য দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার খুটাখালীতে অবস্থান করার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তখন কুমিল্লা থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তদন্ত শুরু করি। অবশেষে চকরিয়ায় ইকবালের অবস্থান করার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হই। ইকবালের কাছ থেকে স্থানীয় রমজান আলী মোর্শেদের উদ্ধারকৃত পবিত্র কোরআন শরীফটিও হেফাজতে নিই। এসব বিষয় কঙবাজার জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি এবং কুমিল্লা জেলা পুলিশকেও জানানো হয়। এ সংক্রান্তে চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।
তিনি বলেন, খুটাখালীর সবুজ পাহাড়ের উপর সিঁড়ি এবং তার উপরে থাকা স্থাপনাকে মন্দির বলে মনে করেছিল ইকবাল। স্থানীয়রা সেই বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে কুমিল্লার ঘটনার কারণে স্থানীয়রা ইকবালের খুটাখালীতে অবস্থান এবং ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াননি। পরে সেই ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টদের বরাবরে পাঠিয়ে দিয়েছি।
খুটাখালীর সবুজ পাহাড়ের বাড়িটির মালিক রমজান আলী মোর্শেদ আজাদীকে বলেন, ১৭ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে আমি বাড়ি ফিরছিলাম। এ সময় বাড়ির গেটের কাছে সিঁড়িতে দেখতে পাই কেউ একজন বসে আছে। তার হাতে রয়েছে গামছা মোড়ানো একটি কোরআন শরীফ। এ সময় চিৎকার দিলে পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসেন। এই অবস্থায় বসে থাকা অপরিচিত ব্যক্তিটি নিজেকে কুমিল্লার ইকবাল বলে পরিচয় দেয়। তার হাতে থাকা কোরআন শরীফটি নিয়ে তাকে কঙবাজার শহরের একটি গাড়িতে তুলে দিই।
উল্লেখ্য, গত ২১ অক্টোবর রাতে কঙবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ইকবাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ। ২২ অক্টোবর তাকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাড়তি মাংস না দেয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যাপক সংঘর্ষ
পরবর্তী নিবন্ধতাহের খান-আজাদ পরিষদের বিপুল বিজয়