বাড়ছে সাইবার ক্রাইম

৬০ ভাগ অপরাধ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ ভুক্তভোগী ১৪ থেকে ২২ বছরের কিশোরী ও তরুণী কোথাও অভিযোগ করে না তাদের বড় একটি অংশ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৯ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল ও সচেতনতার অভাবেই সাইবার ক্রাইমের প্রবণতা বাড়ছে। ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের ফলে প্রতিদিনই ঘটছে নানান অঘটন। নগর গোয়েন্দা শাখাসহ সিএমপির প্রায় সবকটি থানায় এ সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগপত্র জমা পড়েছে।

দুটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তি খাতে নিত্যনতুন সফটওয়্যার আসছে। সাইবার অপরাধীরা সেগুলো ব্যবহার করছে। সাইবার ক্রাইমের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাইবার ক্রাইম নিয়ে গবেষণাকারীরা বলেন, একদল নিজের অজান্তেই সাইবার ক্রাইম করছে। প্রতিহিংসা বা একান্ত কৌতুহলের কারণেই তারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আরেক দল জেনেশুনেই অন্যের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে সাইবার ক্রাইম করছে। সাইবার ক্রাইমের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নারীরা। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এর তথ্যানুযায়ী, সাইবার হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীদের ৮০ ভাগের বয়স ১৪ বছর থেকে ২২ বছর। অপরাধের শিকার হয়ে একটি বড় অংশই অভিযোগ করেন না।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্কে গত দু’বছরে ১৭ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগকারীদের ৭০ ভাগই নারী। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, নারীদের অভিযোগের ৬০ ভাগেরও বেশি ফেসবুককে কেন্দ্র করে। ইন্টারনেট নিয়ে জানাশোনা তুলনামূলক কম থাকা এবং সরল বিশ্বাসের কারণে নারীরা অনলাইনে সহজ শিকারে পরিণত হন বলে মনে করেন সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা। মেয়েরা অপরাধের স্বীকার হলেও কারো সঙ্গে শেয়ার করতে চায় না বিভিন্ন কারণে। যেমন তাদের মধ্যে ভয় কাজ করে, তারা ভাবেএসব বাবা মা বা অন্য কাউকে জানালে তাকে সবাই খারাপ ভাববে, অথবা ভাবে এসব মানুষ জানলে তার ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়েরা এসব বিষয় লুকিয়ে বিপদ থেকে মুক্তি পায় না বরং আরও বেশি বিপদের মধ্যে পড়ে।

এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে ব্ল্যাকমেইলিং করে ব্যক্তিগত বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে দুই যুবককে গত ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের উপ অধিনায়ক মেজর মো. রেজোয়ানুর রহমান আজাদীকে জানান, সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসারের মিথ্যা পরিচয়ে জহির পেকুয়ার এক এনজিও কর্মী তরুণীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে তাকে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করে। তরুণীকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়, না হলে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তরুণী টাকা দিতে দেরি হওয়ায় ছবি ও ভিডিও জহির তার ঘনিষ্ট বন্ধু সরোয়ারের মাধ্যমে তরুণীর চাচাতো ভাইয়ের কাছে পাঠায়। চাচাতো ভাইকে তরুণী ঘটনা খুলে বলার পর তারা র‌্যাবের শরণাপন্ন হন। মেজর রেজোয়ান আরও জানান, গ্রেপ্তার জহির জানিয়েছে, এনজিও কর্মী তরুণীর এক সহকর্মী নারীর সঙ্গেও সে একইভাবে প্রতারণা করে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একইভাবে প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের কথা স্বীকার করেছে।

এর দুদিন আগে ১৪ মার্চ নগরীতে এক গৃহবধূর ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মো. জসিম (৩২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার জানান, ভুক্তভোগী গৃহবধূর সঙ্গে জসিমের মুঠোফোনে পরিচয় হয় এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। জসিম ভিকটিমকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে ভিকটিম তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে জসিম প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলের আশ্রয় নেয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারীদের নামে অর্ধশত ফেইক আইডি খুলে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলার অপরাধে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ইপিজেড এলাকার এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিন। তিনি জানান, অভিযুক্ত আসামি গত ৭/৮ মাস ধরে ফেইক আইডি খুলে নারী ভিকটিমদের পরিচিতি তথ্য, ছবি সংগ্রহ ও ব্যবহার করে ফেসবুকে ব্ল্যাকমেইল করতো। পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত সহায়তায় অভিযুক্তকে শনাক্ত করে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সাইবার ইউনিটের একটি টিম গ্রেপ্তার করে।

১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অভিযানে নগরীর একটি স্কুলছাত্রীর ছবিসহ অশ্লীল ফেসবুক পোস্ট করার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া নামে ফেসবুক আইডি খুলে ভিকটিমের মায়ের মোবাইল নম্বর উল্লেখ পূর্বক কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ভাষায় ক্যাপশন সহকারে পোস্ট দিয়ে মানহানির অভিযোগে অভিযুক্ত ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদৃষ্টি চট্টগ্রাম-৮ আসনে
পরবর্তী নিবন্ধআরবান টেরেস : এক ছাদের নিচে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচটি ফুড কোর্ট