বাড়ছে বনায়ন, উদ্ধার হচ্ছে বনভূমি

সুফল প্রকল্প রাঙ্গুনিয়ায় সাড়ে ১৩ লাখ চারা রোপণ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় ব্যাপক আকারে বনায়ন কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যেই সুফল প্রকল্পের আওতায় ১৩ লাখ ৭৭ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। উপজেলার রাঙ্গুনিয়া, খুরুশিয়া ও ইছামতী রেঞ্জের আওতায় এসব বনায়ন করা হচ্ছে। বনায়নের কাজগুলো করানো হয়েছে স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় নারী-পুরুষদের মাধ্যমে। এতে রাঙ্গুনিয়া জুড়ে বাড়ছে বনায়ন, উদ্ধার হচ্ছে দখল হয়ে যাওয়া বনভূমি। স্বাবলম্বী হচ্ছেন দরিদ্র ও অসহায় নারী-পুরুষ।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বন ও জীবিকা প্রকল্পের (সুফল) আওতায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চারা রোপণের কাজ চলছে। বাগান টেকসই করার জন্য আহসানিয়া মিশন নামে একটি এনজিও সংস্থাও মাঠে কাজ করছে। এছাড়া সুফল প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে বাগানের আশপাশ থেকে হতদরিদ্রদের নিয়ে টেকসই বন-জীবিকার জন্য সমিতি করা হয়। তাদের থেকে বাছাই করে সুবিধাভোগী নির্ণয় করে তাদের নিয়ে সমিতি করা হয়। এ সমিতিকে বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক বরাদ্দ দেয়। সেখান থেকে বন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের ঋণ দেওয়া হয়। প্রতিটি বিটে ১৮ জন করে পাহারা দেবেন। সরকারিভাবে সম্মানি পাবেন প্রতিজন পাহারাদার। খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় সুফল প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে। এরপর চারা উৎপাদন শেষে ২০২১-২২ অর্থ বছরে খুরুশিয়া রেঞ্জের ৪ বিটে ১২২ হেক্টর বনভূমিতে ২ লাখ ৮০ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই রেঞ্জে আরও ১৪৫ হেক্টর বনভূমি সৃজন করা হবে।
রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, এ রেঞ্জের কোদালা, নারিশ্চা, চিরিঙ্গা ও পোমরা বিটে ৩৩৮ হেক্টর জমিতে নানা প্রজাতির ৮ লাখ ৪৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। এখানে লাগানো চারার আশপাশে আগাছা পরিষ্কার করে বাদ যাওয়া স্থানে পুনরায় চারা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ইছামতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কসরুল আমিন বলেন, ইছামতী রেঞ্জের দুটি বিট এলাকায় ৯০ হেক্টর ভূমিতে লাগানো হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার গাছের চারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় উঁচু নিচু পাহাড়ে নানা প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়েছে। এখন চলছে লাগানো চারাগুলোর মধ্যে যেসব চারা নষ্ট কিংবা মারা গেছে সেখানে পুনরায় চারা লাগানো ও আগাছা পরিষ্কারের কর্মযজ্ঞ। ঔষধি ও বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণের কাজ করছেন দরিদ্র নারী ও পুরুষ। রোপণ করা গাছের মধ্যে রয়েছে ড্যাকি জাম, পূতি জাম, কড়ই, ৯ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
নিম, আকাশমণি, গর্জন, কাঠবাদাম, বস বাদাম, লটকন, শিমুল, বহেড়া, গামার, অর্জুন, কৃষ্ণচূড়া, কাজুবাদাম, তুন, রাধাচূড়া, হরীতকী, পলাশ, বৈলাল, তৈলসুর, বধ নারিকেল, পারুল, নার্গেশরি, ছিকরামি, তুলা, রেইনট্রি, লোহা, পিতরাজ, সনালু, মিঝিরি, ছারিয়ানসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
নারিশ্চা বিটে কাজ করা আলমাস খাতুন বলেন, তার বাড়ি উপজেলার পদুয়ার রাজার হাট এলাকায়। তিনি দীর্ঘদিন সুফল প্রকল্পে নার্সারির কাজ করছেন। এ বিটে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন নারী চারা রোপণ ও আনুষঙ্গিক কাজ করছেন। চারা রোপণের কাজে ৬০ থেকে ৭০ জন পুরুষও কাজ করছেন। তারা প্রতিদিন যাতায়াত ভাড়াসহ ৫০০ টাকা করে পান।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বনায়নের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যেন তারা জীবিকার চাহিদা মেটাতে বনের ক্ষতি না করেন এবং বন সংরক্ষণের কাজে বেশি মনোযোগী হন। তিনি বলেন, পাহারাদাররা সমিতির মাধ্যমে বনায়নের ১০ শতাংশ সুবিধাও পাবেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটসহ পতিত জমি ও পাহাড়ে নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। তারই সাহায্যে রাঙ্গুনিয়ায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এই সুফল প্রকল্পটি। এর ফলে বদলে যাচ্ছে এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি। অন্যদিকে এই প্রকল্পের কারণে উপকৃত হচ্ছেন হতদরিদ্ররাও। এটি সরকারের প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংঘর্ষে মুক্তারপুর রণক্ষেত্র
পরবর্তী নিবন্ধ৩ অক্টোবর থেকে বন্ধ হচ্ছে প্রথম ডোজ