বাসা-বাড়ি থেকে নেয়া হবে পানির নমুনা

ইপিজেড পতেঙ্গা হালিশহরে পানিবাহিত রোগ বিআইটিআইডিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি আজ আসছে আইইডিসিআর’র রিসার্চ টিম

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৯ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদসহ সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে ফের দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের (ডায়রিয়া-কলেরা) প্রকোপ। গতকাল পর্যন্ত এ সব এলাকার দেড় শতাধিক রোগী এই ডায়রিয়া-কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসিয়াস এন্ড ডিজিজেস) ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গতকাল বিকেলে বিআইটিআইডিতে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) ডা. ইমতিয়াজ হোসেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের খোঁজ-খবর নেন তিনি। এ সময় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, বিআইটিআইডির উপ-পরিচালক ডা. বখতেয়ার আলম, বিআইটিআইডি’র ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মামুনুর রশীদ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ওয়াজেদ চৌধুরী অভি সাথে ছিলেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ভর্তি থাকা রোগীদের খোঁজ-খবর নেন। অনেক রোগীর সাথে কথাও বলেছেন। ঢাকায় গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মহাপরিচালককে তিনি এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দেবেন।
আসছে আইইডিসিআর’র রিসার্চ টিম : প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদসহ সমূদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি রিসার্চ টিম আজ (শুক্রবার) চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আইইডিসিআর থেকে রিসার্চ টিমের দুজন আসবেন। আর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধিসহ চট্টগ্রাম থেকে দুজন এ টিমে যুক্ত হবেন। সবমিলিয়ে চার সদস্যের এ টিম রোগীদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে ব্যবহারের ও খাওয়ার পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করবেন। যা ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এ সব তথ্য জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, শুক্রবার সকালে আইইডিসিআরের টিম আসার কথা রয়েছে। তারা প্রথমে বিআইটিআইডি হাসপাতালে যাবেন। সেখানে রোগীদের সাথে কথা বলবেন। রোগীদের বাসা-বাড়ির ঠিকানা নেবেন। পরে বাসা-বাড়ি গিয়ে পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করবেন।
রোগীর সংখ্যা কমছে : হাসপাতালে রোগী আসার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমে আসছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন (১৫ আগষ্ট) ৬৯ জন, দ্বিতীয় দিন ৫৫ জন এবং ৩য় দিন ৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর সর্বশেষ ১২ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছে ২৩ জন রোগী। যদিও ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। গতকাল রাত ৮টায় সবমিলিয়ে ৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানান বিআইটিআইডি’র ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মামুনুর রশীদ। নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা বিবেচনায় রোগী আসার হার কিছুটা কমছে বলে জানান তিনি।
কলেরার জীবাণু প্রাপ্তির হার বাড়ছে : ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্য থেকে প্রথম দিন ২০ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২০ জনের মাঝে ৭ জনের শরীরে ভিবরিও কলেরির (কলেরার) জীবাণুুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। শতকরা হিসেবে যা ৩৫ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় দিন সংগ্রহ করা ১৮ জনের নমুনায় কলেরার এই জীবাণু মিলেছে ১০ জনের শরীরে। শতকরা হিসেবে যা ৫৫ শতাংশের বেশি। হিসেবে দেখা যায়, দুই দিনে মোট ৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭ জনের শরীরে ভিবরিও কলেরির (কলেরার) জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের প্রায় ৪৫ শতাংশের শরীরে কলেরার জীবাণুর অস্তিত্ব মিলেছে। ডা. মামনুর রশীদ বলেন, এই জীবাণু সাধারণত লবণাক্ত পানিতে অবস্থান করে। ভিবরিও কলেরির জীবাণু যুক্ত ওই পানি যে কোনো ভাবে এ সব এলাকার মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। যা পানিবাহিত এ রোগে আক্রান্তের কারণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউঠানে মুরগীকে খাবার দিচ্ছিলেন, হঠাৎ দায়ের কোপ পড়ল ঘাড়ে
পরবর্তী নিবন্ধচার বিষয়ে এফসিপিএস কোর্স চালুর অনুমোদন পেল চমেক