বাবার খুশি

জোবায়ের রাজু | বুধবার , ১৫ জুন, ২০২২ at ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ

হকার এখনো নিয়মিত শানদের বাসায় পত্রিকা দিয়ে যান রোজ সকালে। বাবার মৃত্যুর পর সে ভেবেছে তাদের বাসায় আর পত্রিকা রাখা হবে না। কারণ পত্রিকা একমাত্র বাবাই পড়তেন। সেই বাবা করোনাতে মারা যাওয়ার পর শান ভেবেছে তাদের বাসায় আর পত্রিকা আসবেনা। কিন্তু রেখা চৌধুরী স্বামীর সব কাজকর্মকে এখনো সমানভাবে সম্মান করেন বলে পত্রিকাটা এখনো রাখার পক্ষে আছেন বলে রোজদিন বাসায় পত্রিকা আসে।
শানের বাবা আমিনুল হক ‘দৈনিক খোঁজখবর’ পত্রিকাটি নিয়মিত রাখতেন বাসায়। ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষটি পত্রিকার পাতায় নিজেকে সমর্পণ রাখতে পারতেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবগুলো নিউজ তিনি পাঠ করতেন। পত্রিকায় প্রতি শুক্রবারে একটা শিশুতোষ পাতা আছে ‘ছোটদের পাতা’ নামে, যেখানে বাচ্চাদের লেখা বিভিন্ন গল্প, কবিতা, ছড়া ছাপা হয়। বাবা শানকে অনেকদিন বলেছেন ছড়া লিখে পাঠানোর জন্য। কিন্তু শান ছড়া পড়তে ভালোবাসলেও কখনো লিখতে পারতো না। ছেলের ব্যর্থতার কথা শুনে আমিনুল হক বলতেন- ‘চেষ্টা করলে লিখতে পারবে। চেষ্টার বিকল্প কিছু নেই।’ তারপরও ছড়া লেখার দুঃসাহস হতে পারতো না শানের।
আজ দৈনিক খোঁজখবর পত্রিকার শিশুতোষ পাতাটিতে বাবা দিবসের লেখা চেয়ে সম্পাদক একটি ঘোষণা দিয়েছেন। বাবাকে নিয়ে নানান স্মৃতিচারণমূলক লেখার ঘোষণা। ঘোষণাটি চোখে পড়ল শানের। বাবাকে নিয়ে তার অসংখ্য স্মৃতি আছে। তাই সে ভাবল ওইসব স্মৃতি সংক্ষেপে লিখে সে পত্রিকায় লিখে দেওয়া ঠিকানায় পাঠাবে।
রাতেই শান কাজটি সমাধা করে ফেলল। করোনাকালে বাবা কিভাবে হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে মারা গিয়েছিল, সব বর্ণনা করে লিখল। লেখা শেষে তার পূর্ণঠিকানা ও বাসার টেলিফোন নাম্বার লিখে দিয়ে পরদিন পোস্ট অফিসে গিয়ে পাঠিয়ে দিল।
ঠিক ছয়দিন পর দুপুরে বাসায় টেলিফোন এলে শান টেলিফোন ধরে। ওপার থেকে বলিষ্ঠ এক কণ্ঠস্বর কানে আসে- ‘এটা কি শানদের বাসা? আমি দৈনিক খোঁজখবর পত্রিকার শিশুতোষ পাতার বিভাগীয় সম্পাদক সেলিম খন্দকার।’ শান চিনতে পারে। ওই পাতায় এই নামটি নিয়মিত ছাপা হয়। সে চিন্তাও করতে পারেনি সম্পাদক তাকে ফোন করবেন। সালাম দিয়ে শান বলল, ‘আমিই শান বলছি।’ ওপার থেকে সেলিম খন্দকার শানের গদ্য লেখার হাতের সুনাম ও বাবার করোনভ মহামারির মৃত্যু নিয়ে খুব দুঃখ প্রকাশ করেন। বাবার স্মৃতির বর্ণনামূলক লেখাটি সম্পাদকের ভীষণ মন ছুঁয়েছে এবং লেখাটি পরের সংখ্যার জন্য মনোনীত হয়েছে বলে শানকে জানানো হয়। সম্পাদকের কথা শুনে শান খুশি হয়েছে বটে, তবে বাবার জন্য খারাপও লাগছে। জীবদ্দশায় বাবা তাকে অনেক অনুরোধ করেও লেখাতে পারেননি। অথচ আজ সে সেই বাবাকে নিয়েই লিখেছে এবং লেখাটি পাবলিশ হবে, কিন্তু বাবা দেখতে পারলেন না।
ওপার থেকে সম্পাদক শানকে নিয়মিত তাদের পত্রিকাতে লেখা দেওয়ার অনুরোধ জানালে শান তাকে লেখা দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করল। দুজনের কথা বলা শেষ হওয়ার আগে সম্পাদক শানকে তাদের পত্রিকা অফিসে ঘুরে যাবার আহ্বান করলেন৷ এমন একটি ফোন আসবে, শান ভাবতেই পারেনি। আজ বাবা বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধএলো ঋতুরানী বর্ষা