প্রখ্যাত লোক গবেষক আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে-‘‘ সুদীর্ঘকাল নদীবেষ্ঠিত প্রকৃতিক মুখোমুখি বসে আছে যে জন, সে জনচিত্ত-নদীর আবেগ উদ্বেলিত ধারা এদেশের অসংখ্য ভাব সংগীতে, বাউল-মুর্শিদী-মারফতি-ভাটিয়ালী গানে, নানা রূপে, রঙ্গে ঢেউ তুলেছে। বাঙালি সহজ-সরল বা সাধাসিধে বলেই তারা মনের ভাবও প্রকাশ করে সাদা-মাটা কথায়। গীতির মধ্য দিয়ে চিরকালই বাঙালি তার সকল চিন্তাধারাকে প্রকাশ করেছে। সুতরাং বিচিত্র লোকসংগীতের পরিচয়েই বাঙালি জাতির সামগ্রিক পরিচয়।” বাঙালি জাতির এই আত্ম পরিচয়ের উৎস সন্ধানে লোকায়ত সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলা ভাষার যোগসূত্র এবং এর উৎকর্ষ অমর একুশের ভাবনায় কতটা প্রাসঙ্গিক তা ভেবে দেখার বিষয়। বাঙালি মানস গঠনে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে প্রকৃতির। বিশেষ করে বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে প্রবাহিত অসংখ্য নদ-নদীর ধারা ও বাংলার উর্বর মাটির রসসঞ্জীবনী ধারা বাঙালির মনে যে প্রাণরস যুগিয়েছে তাতে বাঙালি মন খুলে মনের কথা বলতে পারে খুব সহজেই- ‘‘আরে মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে/আমি আর বইতে পারলাম না/ আমি জনম ভরে বাইলাম বৈঠা রে/নৌকা ভাইট্যায় বয় আর উজায় না।”
অর্থাৎ দ্বিধাহীনভাবে গানের মাধ্যমে প্রাণের আকুতি প্রকাশ-এটাই বাঙালির হাজার বছরের মজ্জাগত রীতি। এই রীতিতে মাটির মানুষের প্রাণের ছোঁয়া, হৃদয়ের আকুতির প্রকাশ সংগীতের রূপ লাভ করেছে মূলত মাটি ও প্রকৃতি থেকে উৎসারিত হয়ে। বাংলা পল্লী প্রধান অঞ্চল। কৃষকের সাথে গাড়িয়াল, মাঝি-মাল্লা, ফকির-দরবেশ আউল-বাউল, বৈরাগী-বৌষ্টমী সকলের জীবন ও আবেগ গ্রাম বাংলার জীবনকে কেন্দ্র করে। সমালোচকের মতে ‘যে রঙ খেলে বেড়ায় কামদেবের গেলে, যে গান ভেসে বেড়ায় বসন্তের বাতাসে, যে সোহাগ কেঁপে ওঠে বিহাগ বেলার বাঁশিতে,সেই সমস্তই যেন একযোগে ফুটে উঠে গ্রাম বাংলার ছবিতে।’ আর এই ছবি তৈরী করেছে অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষের মৌখিক গানের ধারা। এই মৌখিক গানের ধারাকে অবলম্বন করে শ্রুতি ও স্মৃতি নির্ভর বহমান ধারা লোকসঙ্গীত।
মোস্তাফা জামান আব্বাসীর মতে-‘‘ লোকের মুখে মুখে যে গান ঘুরে বেড়ায়, যার লিখিত রূপ নেই, যা বংশপরস্পরায় গীত হয়ে আসছে, গীতিকার ও সুরকারের পরিচয় যেখানে অবলুপ্ত, যার গায়কিতে আছে এমন একটি বিশেষরূপ যা তার নিজস্ব, তাকেই লোকসঙ্গীত বলে।” বাংলার লোকসঙ্গীত তথা গানের ঐতিহ্য প্রায় এক হাজার বছরের পুরাতন, চর্যাপদের কাল থেকে এর শুরু। বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য রচিত সাধনতত্বের সঙ্গীত এই পদগুলোর মধ্যেই বাংলার লোকজীবনের নানা উপাদান আমরা খুঁজে পাই। সেই যুগের মানুষের বাহন ছিল নৌকা। নৌকা, নদী, কড়ি, পারাপার, জীবনমরণ, নৌকার খুঁটি, বৈঠা, শিকার প্রভৃতি নাম ইত্যাদি পদ গুলোতে উঠে এসেছে। তার সাথে জীবনযাপন, হাঁড়ি পাতিল, আধ্যাত্মিকতা, ব্যাধ, হরিন শিকার, পরিবেশ, কর্মজীবন, প্রেমলীলা, অলংকার, ক্রীড়া, কৌতুক, রাত্রিযাপন, পানাহার, অভাব, অসহায়ত্ব প্রভৃতি বিচিত্র বিষয় পদাকর্তাদের পদাবলীতে উঠে এসেছে। এর পরের স্তর হল কীর্তন ( ঈশ্বরের নাম, গুণ ও লীলাবিষয়ক গান নামকীর্তন ও লীলাকীর্তন), পদাবলী (বৈষ্ণব কবিদের রচিত পদসমষ্ঠি, রাধাকৃষ্ণ পদাবলী, গৌরপদাবলী, ভজন পদাবলী এবং রাগাত্মিকা পদাবলী), পালাকীর্তন ( শ্রী কৃষ্ণের নৌকা বিলাস, মান, বিরহ এবং নিমাই সন্ন্যাস প্রভৃতি পালাগান), নগরকীর্তন (নগর প্রদক্ষিন করে যে কীর্তন, নগরসংকীর্তন ও বলে) ও নামকীর্তন (কৃষ্ণের নামে যে গান রচিত ও গীত)। ধর্মকে অবলম্বন করে যেমন বিকশিত হয়ে উঠেছে বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির এক বিশাল ধারা, তেমনি বাংলার পথে প্রান্তরে নানা অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের কাঠামোয় তৈরী হয় লোকসঙ্গীত। যেগুলো সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি ভাষার বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তেমনি একটি লোকগান ভাটিয়ালি ( শব্দটি ভাটি বা ভাটা শব্দ থেকে এসেছে)। খোলা আকাশের নীচে ‘ভাইটাল’ নদীর স্রোতে মন্তরগতিতে মাঝি পাল তুলে নৌকার হাল ধরে বসে। আর মুক্ত গলায় গান ধরে-আমার কালা পাখি যায়গো উড়ে/ভালবাসার শিকল ছিঁড়ে/আহা কি করবেগো প্রাণসখি/শুন্যপিঞ্জর যত্ন করে/ভালবাসার শিকল ছিঁড়ে।
ভাওয়াইয়া ( ভাব থেকে ভাওয়াইয়া শব্দের উৎপত্তি); বিরহ, বেদনা, বিচ্ছেদ এই গানের ধর্ম। গায়নরীতিতে একপ্রকার ভাঙ্গা বা ভাঁজের বৈশিষ্ট্য থাকে। মৈষাল, গাড়োয়ান ও মাহুত প্রভৃতি এ গানের গায়ক চরিত্র), ঝুমুর (সাঁওতালদের মাধ্যমে এ গান বাংলা গানের জগতে আসে। দাড়শালিয়া ঝুমুর, টোনারের ঝুমুর, খেমটি ঝুমুর, কাঠিনাচের ঝুমুর, পাতা নাচের ঝুমুর প্রভৃতি ঝুমুর গান বাংলায় প্রচলিত আছে), জারি (কারবালাযুদ্ধের বিষাদময় ঘটনাকে একজন মুল গায়ক ও অন্যান্য গায়কেরা ধুয়া তুলে গেয়ে থাকে।), সারি (ধানকাটা, পাঠকাটা ও ছাদপেটার সময় একত্রে ছন্দবদ্ধোভাবে গাওয়া হয়), মারফতি ( মারফত অর্থ গোপন তত্ত্ব, এক ধরণের অধ্যত্মগীত), মুর্শিদী (গুরু অর্থাৎ ওস্তাদকেই মুর্শিদ বলে, গুরুর প্রতি ভক্তি জানিয়ে গান), বাউল ( লোকসঙ্গীতের একটি প্রাচীন ধারা, মনের মানুষ খুঁজতে গিয়ে সমাজের প্রচলিত নিয়ম এখানে মানা হয় না, বৈষ্ণবীয় ভক্তিবাদ ও ইসলাম ধর্মের সুফিমতের ভক্তিভাবের সংমিশ্রন দেখা যায় এতে), চটকাগান (চটুল শব্দ থেকে চটকা শব্দের উৎপত্তি,ছন্দপ্রধান গান), ধামাইল (কৃষ্ণ বা গৌরাঙ্গলীলার লৌকিকরূপ এ গানের বিষয়) দেহতত্ত্ব (দেহ থেকে আত্মা চলে গেলে দেহ মূল্যহীন হয়ে পড়ে-এই প্রকার তত্ত্বমূলক গান), আনুষ্ঠানিক গীত ( বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে রচিত লোকগীত), হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মের বিষয় নিয়ে যে লোকসঙ্গীত রচিত হয়) ও কর্মগীত ( যেমন ঃ ‘‘চলরে মাঠে চল, ও ভাই ধান কাটিতে চল, মনের সুখে তুই লারে আনি আগ্রাণী ফসল)। বারমাসী গানে বৈদেশী বন্ধুর জন্য আকুল রমনী গানের মাধ্যমে তা প্রকাশ করছে-‘‘ আইলা না আইলা না বন্ধুরে/রইয়াছো বিদেশ/তোমার লাইগা বন্ধু সোনার/যৌবন করলাম শেষ রে।”
মেয়েলী গীত বিশেষ করে বিবাহ অনুষ্ঠানে, ধান ভানতে, চিড়া কুটতে, মুসলিম পরিবারের ছেলেদের খতনা উপলক্ষে মেয়েরা গেয়ে থাকে ( যেমন: কন্যার মা রন্ধন করে পশ্চিম দুয়ার ঘরে। খেরকি দুয়ারে ফালাইছি পানি জাল্যা ব্যাটার গায়েতে)।মাইজভান্ডারী গান-‘‘ দেখে যারে মাইজভান্ডারী দেখে যারে/দেখে যারে মাইজভান্ডারী হইতাছে নূরের খেলা/নূরে বাবা বসাইছে প্রেমের খেলা/খাজা বাবা বসাইছে মেলা।“ চট্টগ্রামে নানা বৈচিত্রময় লোকগান-‘‘ ছোড ছোড টেউ তুলিয়ারে, ছোড ছোড টেউ তুলি/লুসাই পাহাড় উরতুন নামিয়ারে যারগোই কর্ণফুলী। অথবা কইলজার ভিতর বাঁধি লাইখুম তোঁয়ারে ও ননাইরে, শিনার ভিতর বাঁধি লাইখুম তোয়ারে।”
এরকম ধর্মীয় ও আঞ্চলিক পরিবেশগত বৈচিত্র্যময় লোকগানের মধ্যেই প্রোথিত আছে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শিকড়, যার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার ইতিহাস রচিত হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘‘ উপকরনের বিরলতা, জীবনযাত্রার সরলতাই আমাদের দেশের প্রতিভা।” তিনি আরও বলছেন-‘‘আত্মসৃষ্টির সেই জগৎ যদি হারিয়ে থাকি, তবে সবই হারিয়েছি।” এ কারণেই আমাদের বাংলাভাষাকে রক্ষা করতে গেলে যুগ যুগ ধরে রচিত, গীত বাঙালির লেকায়ত গান গুলোর দিকেই প্রথমে আমাদের চোখ ফেরাতে হবে। অমর একুশ আমাদের এই শিকড়ের কাছেই টেনে নিয়ে যায়। একুশকে হৃদয় ধারণ করলে শিকড়সন্ধানী হতে হবে আমাদের শিক্ষিত সমাজকেই। কারণ প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে কবিগুরুর ভাষায়-‘‘ জীবনের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা।” আমাদের সেই আশ্রয়স্থল আমি মনে করি আমাদের লোকায়ত বাংলার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। একবিংশ শতাব্দীর তথ্য বিপ্লবের এই যুগে আমরা তা ভুলতে বসেছি। জীবনশিল্পী রবীন্দ্রনাথের কথায় পুনরোক্তি করছি-‘‘ আমরা যতই বি.এ, এম.এ পাস করিতেছি, রাশি রাশি বই গিলিতেছি, বুদ্ধিবৃত্তিটা তেমন বেশ বলিষ্ট এবং পরিপক্ক হইতেছেনা। তেমন মুঠা করিয়া কিছুই ধরিতে পারিতেছি না, তেমন আদ্যোপান্ত কিছু গড়িতে পারিতেছিনা, তেমন জোরের সহিত কিছু দাঁড় করাইতে পারিতেছিনা। আমাদের মতামত, কথাবার্তা এবং আচার অনুষ্ঠান ঠিক সাবালকের মতো নহে। সেই জন্য আমরা অত্যুক্তি, আড়ম্বর এবং আস্ফালনের দ্বারা আমাদের মানসিক দৈন্য ঢাকিবার চেষ্টা করি” এবং ‘‘ আমরা বাল্য হইতে কৈশোর এবং কৈশোর হইতে প্রবেশ করি কেবল কতকগুলো কথার ভেলা টানিয়া। সরস্বতীর সাম্রাজ্যে কেবলমাত্র মজুরি করিয়া সারি, পৃষ্টের মেরুদন্ড বাঁকিয়া যায় এবং মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীন বিকাশ হয়না।“
মনে রাখতে হবে বাংলা সংস্কৃতির সৃষ্টি ও বিকাশের মূলে রয়েছে তার অফুরন্ত প্রাণ-প্রাচুর্য এবং তার প্রকৃতির অবারিত দান। আর্যাবর্তের উন্নত সংস্কৃতির সঙ্গে যার নিবিড় যোগ-বন্ধন থাকা সত্ত্বেও তা তার স্বতন্ত্র প্রাণ রসের সফল অভিব্যক্তিতে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। ‘ আপনাতে আপনি বিকশিত’ অবিভক্ত ভারতীয় প্রাণ-গঙ্গা যেমন বাংলাদেশের কোমল মৃত্তিকা স্পর্শ করে পদ্মা ও ভাগীরথী নাম গ্রহণ করেছে, তেমনি ভারতীয় উপমহাদেশের নানা সাংস্কৃতিক ধারা বাঙালি মনীষার বিশিষ্টতা এবং হৃদয়াভিব্যক্তির অন্যন্যতায় স্বতন্ত্র বাঙালি সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কাজেই অষ্ট্রিক-দ্রাবিড় গোষ্ঠীই নয়, এখানে আর্য এবং ‘শক-হূন দল, পাঠান, মোগল এক দেহে হল লীন। এখানে এসেছে ‘প্রবল ইংরেজ’। বাঙালি কাউকেই দূরে সরিয়ে রাখেনি, সে সকলকেই গ্রহণ করেছে। সকলের সংস্কৃতির তিল তিল সোনা সংগ্রহ করে সে রচনা করেছে অনবদ্য তিলোত্তমা মূর্তি। এখানেই বাঙালি সংস্কৃতির অনন্যতা। দীর্ঘ উপনিবেশকালের মধ্যে থেকেও বাঙালি সংস্কৃতি স্বাতন্ত্র্যের অন্যতায় পৃথক, স্বতন্ত্র। ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় কারণে ভৌগলিক বিভক্তি ঘটলেও সংস্কৃতিগত বা হৃদয়গত কোন বিভক্তি বাঙালির ঘটেনি। পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের শাসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত হলে পশ্চিমারা বুঝতে পারে বাঙালীর সংস্কৃতিগত ঐক্যের শিকড় এতটাই গভীরে প্রেথিত যে ইচ্ছা করলেও একে উপড়ে ফেলা যাবে না বা এর উপর পাকিস্তানী সংস্কৃতির আগ্রাসন চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সংস্কৃতিগত চেতনাকে যদি পরিবর্তন করা না যায় তাহলে শুধু ধর্ম দিয়ে বাঙালিকে দীর্ঘদিন শাসনে রাখা যাবে না তাই পাকিস্তানীরা প্রথম আঘাত করল বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান বাহক বাংলা ভাষার উপর। অ, আ, ক, খ-আমাদের এই দুঃখিনী বর্ণমালাগুলোকে মুছে দিতে চেয়েছিল উর্দুর রাষ্ট্রীয় আধিপত্যের মাধ্যমে। তাদের অপচেষ্টা সফল হয়নি। সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বারসহ অগণিত বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রসেনানী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রেষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও কারাবরণ করতে হয়েছিল মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে সোচ্ছার প্রতিবাদী হওয়ার জন্য। সেই সংগ্রামী ইতিহাস আমাদের সবার জানা। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটায়, সেই চেতনায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিকে নিয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে। ত্রিশলক্ষ শহীদের বুকের তাজা রক্ত ও দুইলক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্র জন্ম লাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম এক দেশ ‘ বাংলাদেশ’। বাংলা-বাঙালি বাংলাদেশ তিনটিই অভিন্নসূত্রে গাঁথা। যে সূত্র তৈরী হয়েছে বাঙালির সংস্কৃতির নানারূপ ও নানাবৈচিত্র্যতার মেলবন্ধনে। মহান শহীদ দিবসে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আত্মত্যাগকারী মহান শহীদদের। জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই শহীদদের প্রতি আমাদের রক্তঋণ শোধ হবে। কারণ সংস্কৃতির লালন-পালন এবং বিকাশে ভাষা চর্চিত হয়। ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যথার্থই বলেছেন, আমরা বঙ্গবাসী। আমাদের কথাবার্ত্তা, ভয়, ভালবাসার, চিন্তা, কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। দুঃখের বিষয় জ্যমিতির স্বতঃসিদ্ধের এই সোজা কথাটিকে আমাদের মধ্যে এক এক সম্প্রদায়কে বুঝাইয়া দিলেও জোর করিয়া বুঝিতে চাহেন না।”
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক; উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়;