বাংলাদেশ-ভারতে চা খেতে খেতে নির্বাচন হবে না : সিইসি আউয়াল

শপথগ্রহণ কাল

| শনিবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ১০:২৬ অপরাহ্ণ

সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার(সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, “নিউজিল্যান্ড হলে ‘চা খেতে খেতে নির্বাচন হয়ে যাবে’ কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতে সেটা হবে না। এখনও পরিবেশ স্ট্যাবল হয়ে উঠেনি।”

তিনি বলেছেন, “সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব দায় নির্বাচন কমিশনের নয়।” এসময় তিনি সব দলের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে কাজ করবেন বলে জানান।

আজ শনিবার(২৬ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুল আউয়ালকে নিয়োগ দেন। তার নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।

সংবিধানে বর্ণিত আইনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রথম সিইসি হচ্ছেন হাবিবুল আউয়াল যার নেতৃত্বে গঠন করে দেওয়া হয়েছে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নিয়োগের প্রজ্ঞাপনের পর সাংবাদিকরা হাবিবুল আউয়ালের ইস্কাটনের বাসায় যান। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা না পান তবে তাকে নিয়েও ‘ইমেজ সংকট’ হতে পারে।

অতীতের দু’টি নির্বাচন কমিশনের ইমেজ সংকট আছে, সেটা কাটাতে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইমেজ সংকট আমাকে নিয়েও হতে পারে। আমি রাজনৈতিক নেতৃত্বের দলগুলোর সহযোগিতা না পাই, নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূল না হলে আপনারা আমাকে দায়ী করবেন। আমাদের চেয়ে অনেক বড় হচ্ছে রাজনৈতিক দায়িত্ব। তারা যদি মনে করে নির্বাচন কমিশন সুন্দর নির্বাচন করিয়ে দেবে, তাহলে ভুল-ভ্রমাত্মক ধারণা হবে। তাদেরকে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তারা আমার কাছে সহযোগিতা চায়, আমিও সহযোগিতা চাই।”

হাবিবুল আউয়াল বলেন, “জোরের সাথে বলব- সব দোষ নির্বাচন কমিশনকে দিলে আমি গ্রহণ করব না। রাজনৈতিক দলগুলোর রোল আছে, পুলিশ, আনসার, র‌্যাবকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি ওদের কমান্ড করব না। আমি এসপিকে বদলি করতে পারব না। আমি কমান্ড করলে কেউ রাইফেল নিয়ে দৌড়াবে না।

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের মধ্যে কারচুপি চিরকালই হয়েছে কম-বেশি। এই জিনিসটা যাতে কম হয়, মানুষের যাতে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে সেটা যদি আপেক্ষিকভাবে, ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সফলতা। কিন্তু অ্যাবসোলিউট সেন্সে আমি এখনও বিশ্বাস করি না সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে আসবেন বা আসতে পারবেন। অতীতে ১০০-২০০ বছরে নির্বাচনে সেটা দেখা যায়নি। কিন্তু নির্বাচনে যখন সকলে আনন্দের সঙ্গে অংশ গ্রহণ করে… কিছু এদিক-সেদিক হতে পারে। অনেকে বলেন, সরকারি দল চাপ প্রয়োগ করেন। এটা ঠিক নয়। যারা সরকারি দলে থাকেন তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে। যদি জাতীয় পার্টি থাকত, বিএনপি থাকত। এটাকে অব নেগেটিভলি নিলে হবে না।”

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে তাদের বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে নতুন সিইসি বলেন, “বিএনপি’র বক্তব্য শুনে একটু হতাশ হচ্ছি, উনারা নির্বাচন করবেন না। কিন্তু আমি বলব, নির্বাচনে আসেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।”

‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ইসিকে তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটাও আমি বলব অ্যাবসলিউট সেন্সে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে… এজন্য পক্ষ-প্রতিপক্ষ শক্তিকে কাছাকাছি শক্তির হতে হয়। যারা অপজিশনে থাকবেন তাদের আরও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ আপেক্ষিকভাবে ভালো হবে।”

ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনে কিছু বিষয় কষ্ট দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেমন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী পার্টি যেটা বলে, ওরা ওরা মারামারি করছে। এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের এগুলো দেখতে হবে।”

আগের দুই কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সেই জায়গায় ইমেজ কতটুকু রাখতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা দিন শেষে বলতে পারব। কতটা দায়িত্ব পালন করতে পারব তার ওপর নির্ভর করবে। অতীতে কোন কমিশন কী করেছে সেটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আমি মনে করি সেটা নিয়ে বলার বিষয়ে আমি যোগ্য নই।”

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নতুন ইসির কাজ কী হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা এখনই বলতে পারব না। তবে এটা সহজ কাজ নয়। সমন্বিতভাবে সকলে মিলে কাজ করব। আমার কাছে লাঠি নেই, বন্দুক নেই।

তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন চারজন। তারা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।

সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আজ শনিবার এ পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আগামীকাল রোববার(২৭ ফেব্রুয়ারি)।

বিকেল সাড়ে চারটায় রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে ভুয়া গোয়েন্দা গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধখুলশীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ