বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদের শেষ শেকড়টিও উপড়ে ফেলা চাই

| সোমবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

খবরটা শুনে কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে সাধারণ মানুষের মনে। সেটা হলো : নব্য জেএমবির মতো জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সমমনারা ফিরছে নতুন সংগঠনের মাধ্যমে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, অধিকাংশ ‘জঙ্গি সংগঠন’ নিষিদ্ধ হওয়ায় ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে এ সংগঠনের শুরু ২০১৭ সালে। তবে ২০১৯ সালে এর নামকরণ হয়। ২০১৭ সাল থেকেই তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে এই নতুন মঞ্চে টানার চেষ্টা শুরু হয়। তাদের পরিকল্পনায় কতজন তরুণ উদ্বুদ্ধ হয়ে এ প্লাটফর্মে ভিড়েছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি। ঘরছাড়া তরুণদের ভোলার চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সমপ্রতি দেশের কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে কথিত ‘হিজরত’ করে ঘর ছেড়েছে অর্ধশতাধিক তরুণ। যাদের মোটিভেশনসহ স্বশস্ত্র সংগ্রামের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দিচ্ছে জেএমবি, নব্য জেএমবি, হিজবুত তাহরীরসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন থেকে আসা নেতৃস্থানীয়রা। এ বিষয়ে আরো ভয়াবহ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে আজাদীতে। গত ২২ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদের বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে দেশে ইতোপূর্বে পার্বত্য অঞ্চলের কথা কখনও আলোচনায় আসেনি। সমপ্রতি দেশজুড়ে আলোচিত নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সাথে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সস্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া সাত তরুণ ও তিন প্রশিক্ষণ দাতাসহ ১০ জনকে আটক করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, ২০২১ সালেই পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সস্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বমের সাথে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার আমিরের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের দুজনের মধ্যে চুক্তি হয়, কেএনএফ পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেবে। চুক্তি অনুযায়ী জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতি মাসে কেএনএফকে ৩ লাখ টাকা এবং কেএনএফের সকল সদস্যের খাবার খরচ বহন করবে জঙ্গি সংগঠনটির অর্থদাতারা। জঙ্গিদের অর্থায়নকারী বেশ কয়েকজনের নামও পাওয়া গেছে। খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

বলা বাহুল্য, এ দেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাসে হলি আর্টিজানের হামলা ছিল নজিরবিহীন ও ভয়ঙ্কর। জঙ্গিরা তাদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা জানান দেওয়ার জন্যই এ হামলা চালায়। এর আগে এত বড় মাপের জঙ্গি হামলা কখনও হয়নি। এ হামলার আগে অর্থাৎ পুরো ২০১৫ সাল এবং ২০১৬ সালের প্রথম কয়েক মাসে বিভিন্ন ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, বাংলাদেশে যেকোনো সময় বড় মাপের একটি জঙ্গি হামলা হতে পারে। ২০১৫ সালে একের পর এক লেখক, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার সময় নিরাপত্তা-বিশ্লেষকরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন যে, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তারই ইঙ্গিতস্বরূপ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাবেলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট গ্রুপ সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। তখন থেকে অনেকেই আঁচ করছিলেন যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরা হুমকির মুখে। কিন্তু তাদের সেই ভয়াল থাবা থেকে দেশকে মুক্ত এবং বিদেশি নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা সরকার।

ইতিহাসের ভয়াবহ এ হামলায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ খুলে দিয়েছে। জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের নক্সা নতুন করে সাজায় বাংলাদেশের পুলিশ। জঙ্গিবাদবিরোধী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং অভিযান পরিচালনার জন্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়। এর পাশাপাশি পুলিশ সদর দফতরে একটি আলাদা গোয়েন্দা শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাদের কাজ জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে নজরদারি করা।

‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের নব্য জঙ্গি সংগঠনও কুপোকাৎ হবে- সেই প্রত্যাশা আমাদের। তবে শেষ জঙ্গিটিও নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদের শেষ শেকড়-বাকড়টিও উপড়ে ফেলা চাই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভৌগোলিকসহ নানা কারণে জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে টার্গেট করেছে, কিন্তু সনকারের জিরো টলারেন্স ও এই দেশের শান্তিপূর্ণ মানুষের জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের কারণে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হয়নি।

দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদের গোড়াপত্তন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে