বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়

ইউনেস্কোর মূল্যায়ন

| বুধবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার মান বাড়ানোর উপর সরকার জোর দিলেও বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট নয় বলে মূল্যায়ন জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে সংস্থাটির ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট’ তুলে ধরার সময় প্রতিবেদনের পরিচালক ম্যানোস আন্তোনিনিস নিজেদের এই মূল্যায়নের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে অর্থায়ন পর্যাপ্ত নয় ও সমতার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট নয়। সরকারের উচিৎ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য এমন একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর এই প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে মহামারীকালে সরকারি শিক্ষকরা বেতন পেলেও বেসরকারি শিক্ষকরা পেয়েছেন তাদের বেতনের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, শিক্ষকতা পেশাকে আমাদের আরও অনেক বেশি আকর্ষণীয় করার দরকার আছে। এই পেশাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে না পারলে, তারাই এই পেশায় আসবেন, যারা অন্য কোথাও যেতে পারছে না।

ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে’ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার পরিবারগুলোকে শিক্ষার পেছনে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বলে তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে মোট খরচের ৭১ শতাংশের জোগান আসে পরিবারগুলো থেকে, যা শিক্ষা খাতে পরিবারপিছু খরচের বিবেচনায় বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ হার। পাকিস্তানে এই হার ৫৭ শতাংশ, আর নেপালে ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারি সংস্থার স্কুলে তিনগুণ এবং বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে নয়গুণ বেশি ফি পরিবারগুলোকে গুনতে হয় বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ইউনেস্কোর এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকসহ ছয়টি সংস্থা।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়েনি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও নিচের দিকে আছে। তাদের অবস্থা বাংলাদেশ থেকে একটু ভালো হলেও ততটা ভালো নয়।
তবে ভারতের দিল্লির আম আদমি সরকারের শিক্ষা পরিকল্পনা তুলে ধরে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সেখানে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী পাবলিক স্কুলে যায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী পায় না। পুরো সরকারি শিক্ষাকে শিক্ষার্থীবান্ধব করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, অবকাঠামো দেওয়া হয়েছে; মনিটরিং করা হচ্ছে।

বাংলাদেশেও যে সরকারি স্কুলের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ রয়েছে, তা তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, আমাদের প্রাইভেট স্কুলে আসন সংখ্যা ৯ লাখ ২৫ হাজার ৭৮০, যেখানে আবেদন করেছে ২ লাখ ৭৬ হাজার। আর সরকারি স্কুলে, যার মান ততটা উন্নত নয় বলে দাবি করা হয়; সেখানে আসন সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ৯০৭, আবেদন করেছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার। এখানেই বোঝা যায় মানুষের আগ্রহ কোন দিকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রিমিয়ার বিভাগ দাবা লিগে কোয়ালিটি স্পোর্টস শীর্ষে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে তিন বিদেশি