বাংলাদেশে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার প্রচলন

শৈবাল বড়ুয়া | শুক্রবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

সাধারণভাবে বাংলাদেশের বাঙালিরা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন। বাংলা ভাষায় প্রধানত: সাধুরীতি এবং চলিত রীতি এই দুইভাবে ভাষা ব্যবহৃত হয়। আমরা সাধারণত চলিত রীতিতে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলি সহজ

 

চলিত রীতি কদাচিৎ ব্যবহৃত হয় প্রাচীনপ্রবীণ কিছু কিছু মানুষের কথোপকথনে কিংবা তাঁদের রচনায়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষিত বাঙালিরা তাদের কর্মস্থলে প্রচলিত শুদ্ধ বাংলায় কথা বললেও স্বগৃহে কিংবা তার স্বীয় অঞ্চলের স্বজনবন্ধুদের সাথে তাঁদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। প্রত্যেক অঞ্চলে বিশেষত পল্লী এলাকার মানুষ তাঁদের নিজ আঞ্চলিক ভাষায় ভাব বিনিময় করে আনন্দ পায়।

এটি অবশ্যই একটি ভালো দিক্‌। কেননা আমরা সবাই বাঙালি হলেও আমার গ্রামাঞ্চলের ভাষা অর্থাৎ শিকড়ের ভাষা ভুলে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে যাপিত জীবনকে কিছুটা অবহেলিত করা হয় বলে আমার ধারণা। এক্ষেত্রে দেখা যায় বাংলাদেশ নামীয় এই ভূখন্ডে জেলা এবং অঞ্চল ভেদে নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক ভাষায় গদ্য, পদ্য, গান রচিত হলেও তা স্বীয় অঞ্চলভুক্ত মানুষ ব্যাতীত অন্যরা অর্থাৎ ওই অঞ্চল বহির্ভূত ব্যাক্তিগণ অন্যদের আঞ্চলিক ভাষার ভাব কিংবা অর্থ বুঝতে পারেন না।

অতি সামপ্রতিক সময়ে শুদ্ধ বাংলার পাশাপাশি অনেকেই নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষায় ছড়াকবিতা গান এমনকি প্রতিবেদন লেখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অঞ্চলের শব্দ সংগ্রহের প্রথম উদ্যোগ নেন ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’। পরবর্তিকালে মুহম্মদ এনামূল হক ১৯৩৫ সালে ‘চট্টগ্রামী বাঙলার রহস্য ভেদ (ভাষাতত্ব)’ নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমি হতে ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (অখন্ড)’ প্রকাশ করেন।

এ ছাড়াও আহমেদ আমিন চৌধুরী ১৯৯৮ সালে ‘চট্টগ্রামী বাংলার শব্দসম্ভার’ গ্রন্থ প্রকাশ করে আঞ্চলিক ভাষা ও ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেন। সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ রফিক ২০০১ সালে ‘চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ এবং কবি ওহীদুল আলম ১৯৮৫ সালে ‘চট্টগ্রামের লোক সাহিত্য’ গ্রন্থে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন।

বিগত ২০১০ সালে মাহবুবুল হাসানএর সম্পাদনায় ‘অ্যাডর্নচট্টগ্রামী বাংলার অভিধান’ প্রকাশ হয়। এভাবেই বাংলাদেশে শুদ্ধ বাংলার সাথে সাথে স্বস্ব অঞ্চলের ভাষাও বিকশিত হচ্ছে। সমপ্রতি চট্টগ্রাম কিংবা অন্যান্য অঞ্চলের ভাষায় ছড়াকবিতা বেশ জন প্রিয়তা অর্জন করছে। এই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় স্বরচিত কবিতা খানি শুদ্ধ বাংলায় অনুবাদ সহ নিচে উদ্ধৃত হলো।

ইদানিং অনেকেই নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষায় মনের ভাবনাকে পাদপ্রদীপের আলোয় আনছেন। এতে শহরনগর, পল্লীর আমজনতা তাঁদের স্বকীয় ভাষায় ছড়া, কবিতা, গল্প ইত্যাদি পড়ে প্রচুর আনন্দ পেয়ে থাকেন। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকার কুট্টি ভাষা এবং নোয়াখালি, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী অঞ্চল সমূহে নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা চালু আছে, যা ভাষাকে সমৃদ্ধ করছে প্রতিনিয়ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেখবো বলে
পরবর্তী নিবন্ধএকুশের বইমেলা ঢাকার অনুকরণ করে কার লাভ