বাঁধভাঙা ঈদ আনন্দ

দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর পর্যটন কেন্দ্র বেশি ভিড় পতেঙ্গা সৈকতে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৭ মে, ২০২২ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

কর্মমুখর নগর জীবনে দু’দন্ড ফুরসৎ পাওয়া দুষ্কর। জীবন যুদ্ধে বছরের পুরো সময়টাই চলে যায় সংসারের চাহিদা মিটাতে। তাতেও সুখ নেই। পরিবারের সদস্যরা ভীষণ প্রত্যাশা করেন, ঈদের ছুটির ক’টি দিন একান্তে কোথাও বেড়িয়ে আসতে। কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মিলন হওয়ার কোনো লক্ষণতো নেই এ জীবনে! তাই দূরে কোথাও নয়, সাধারণ মানুষ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে নীল জলরাশির বুকে খুঁজেছেন সুখের ঠিকানা। কেউ গেছেন ফয়’স লেক কিংবা চিড়িয়াখানায়। গত দুই বছরে চারটি ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে মহামারীর কারণে। এ বছর সেই অবস্থা নেই। তাই ঈদ আনন্দ যেন বাঁধ ভেঙেছিল। চট্টগ্রামে এবার সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম ঘটেছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। এখানে ছিল লোকে লোকারণ্য। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কোনো প্রকার প্রবেশ মূল্যের প্রয়োজন হয় না। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত সমুদ্র সৈকত তাই ছুটির দিনগুলোতে ছিল দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত। বিশেষ করে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে এসেছিলেন দূরদূরান্তের মানুষ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন পর্যটকরা। সৈকত পাড়ের দোকানগুলোতে বিক্রি জমজমাট। কেউ কিনছেন চুড়ি ফিতা, কেউ কিনে দিচ্ছেন। কেউ চোখ মুখ লাল করে চটপটি খাচ্ছেন, আবার কেউ তা দেখেই সুখ খুঁজছেন। বেশির ভাগ মানুষই সমুদ্রের সঙ্গে মিতালি পাতার দৃশ্য ফ্রেমে বন্দী করেছেন ক্যামেরা আর মুঠোফোনে। যাদের সেই সুযোগ ছিল না তাদের জন্য ছিল বিকল্প ব্যবস্থা। ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীরা দারুণ ব্যস্ত ছিলেন পর্যটকদের ফরমায়েশ অনুযায়ী ছবি তোলা ও ১০ মিনিটের মধ্যে সরবরাহের কাজে।

নগরীর নাসিরাবাদ এলাকা থেকে ফয়জুর রহমান তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সমুদ্র সৈকতে আসার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি আজাদীকে বলেন, সচরাচর পরিবারের সবাইকে একসাথে পাওয়া যায় না। ঈদ উপলক্ষে সবাই এসেছেন বাসায়। এই সুযোগে আজ সবাই মিলে সৈকতে ঘুরতে এলাম।

জয়নগর এলাকা থেকে সৈকতে বেড়াতে এসেছেন শারমিন, সুমি ও ঝুমি। তারা জানালেন, এখানে এলে মনটাই ভাল হয়ে যায়। সমুদ্র সৈকত ও নেভালে ঘুরে না বেড়ালে ঈদের আনন্দ যেন অপূর্ণ থেকে যায়। তাদের মতো আরও শত শত তরুণতরুণী আর নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।

অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই, বসের হুকুম তামিলের বাধ্যবাধকতা নেই, যানজটের যন্ত্রণা নেই, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা নুন আনতে পান্তা ফুরনোর ভয় নেই; এমন কয়েকটি দিন কাটাতে যেকোনো উৎসবেই বিনোদন প্রিয় মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকে ফয়’স লেকস্থ কনকর্ড এ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও সী ওয়ার্ল্ডে। এবারো তাই এ বিনোদন স্পটটি সেজেছিল বর্ণীল আলোকসজ্জায়। অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁইয়ে নীলাকাশ যেন নুইয়ে পড়ে এখানে। লেকের স্বচ্ছ জলরাশির বুক চিরে স্পিডবোটে দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই কনকর্ড সী ওয়ার্ল্ডের দেখা মিলবে। এ যেন সম্পূর্ণ আলাদা এক জগত।

পাশাপাশি ফয়’স লেক চিড়িয়াখানাও উৎসব প্রিয় মানুষের পদচারণা থেকে বাদ পড়েনি। চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানাটি স্বল্প পরিসরে হলেও এখানে না এলে ঈদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায় অনেকের কাছে। ফয়’স লেকের ওয়াটার কিংডমের জলোৎসবে আনন্দে মেতেছিল তরুণ তরুণীসহ সব বয়সী মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত বন্দরনগরীর অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটন স্পট ওয়ার সিমেট্রিতে ঘুরতে দেখা গেছে অনেককে। কেউ এসেছিলেন সবান্ধব, কেউ সপরিবারে।

ঈদের ছুটিতে দীর্ঘদিনের পুরনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে এমএ আজিজ আউটার স্টেডিয়াম, সিআরবি ও ডিসি হিল এলাকায় খোশ গল্পে মেতেছিল অনেক তরুণতরুণী। অনেককে আবার ফুটপাতে আড্ডা দিতেও দেখা গেছে।

এ ঈদে যারা কোনো দিন জাহাজে কিংবা স্টিমারে চড়েনি তারা স্বল্প পরিসরে সমুদ্র বিহারে অন্যরকম এক আনন্দ উপভোগ করতে প্রয়াসী হয়েছেন। শিশুপার্কগুলোতেও ছিল লোক সমাগম। তবে শিশুদের চেয়ে বড়দের ভিড়টাই ছিল দেখার মতো। হয়তো এ আনন্দময় মুহূর্তে তাঁরাও ফিরে গিয়েছিলেন প্রিয় শৈশবে।

নগরীর বাইরে আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতও ঈদ উপলক্ষে বাহারি সাজে সেজেছে। এছাড়া বাঁশখালী ও সীতাকুণ্ডের ইকোপার্ক, রাউজানের রাবার বাগান, মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্টসহ বিভিন্ন বিনোদন স্পটে স্থানীয় ও অস্থানীয় বিনোদন পিয়াসীদের বেশ উপস্থিতি ছিল। দৃষ্টিনন্দন কর্ণফুলী সেতু দেখতেও অসংখ্য সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ ভিড় করে। এছাড়া পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি আর কঙবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকের আনাগোনায় মুখর এখনো। কঙবাজারে ইতোমধ্যেই মানুষের ঢল নেমেছে। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতটি। পর্যটকের মধ্যে শুধু দেশের মানুষই নয়, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিদেশিও আছেন। ঈদ শেষ হলেও তার আনন্দের রেশ মিলাতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে নিশ্চিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে ড্রেজার ও বালি জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধএসিডে ঝলসে গেছে তরুণী প্রেমিক গ্রেপ্তার