বন্দর ও সিএমপির ক্লিয়ারেন্সে কাজে গতি

আগ্রাবাদে শুরু সল্টগোলা ক্রসিং-বন্দর অংশে কাজ আগামী সপ্তাহে ।। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নগর পুলিশের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প নতুন করে গতি পেয়েছে। গত সপ্তাহে দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের পর আগ্রাবাদ এলাকায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বন্দর এলাকায় আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু হবে। ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনায় নির্মাণে কিছু ঝামেলাও কমেছে। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ সম্পন্ন হলে মহানগরীর যান চলাচলে গতি আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিপুল সংখ্যক মানুষ এবং গাড়ির চাপে নগরীর যান চলাচল বেহাল। এই সংকট কাটাতে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বহদ্দারহাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভারে যাতায়াত করা যাবে। পথে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফ্লাইওভার মূল সড়কের সাথে যুক্ত করা হবে। এতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ফ্লাইওভার ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। শুরুতে চারটি পৃথক ধাপে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হলেও পরবর্তীতে কাজের সুবিধার জন্য ১৬ কিলোমিটার এলাকাকে পাঁচটি বিশেষ ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে লালখান বাজার-বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম ধাপ, বারিক বিল্ডিং-সল্টগোলা ক্রসিং দ্বিতীয় ধাপ, সল্টগোলা ক্রসিং-সিমেন্ট ক্রসিং তৃতীয় ধাপ, সিমেন্ট ক্রসিং-কাঠগড় চতুর্থ ধাপ এবং কাঠগড় থেকে পতেঙ্গার ল্যান্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত পঞ্চম ধাপ চিহ্নিত করা হয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল শেষ ধাপ থেকে। বর্তমানে ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত দুটি ধাপের (৪র্থ ও ৫ম) কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে এই দুই ধাপে গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ফ্লাইওভারের এই অংশের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের ওই অংশটির পিলারের উপর গার্ডার স্থাপিত হয়েছে। প্রকল্পের তৃতীয় ধাপ সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত অংশের কাজও দ্রুত চলছে। গতকাল এলাকায় কার্যক্রমের সাথে জড়িত প্রকৌশলীরা বলেছেন, এই অংশের কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পটির দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে চিহ্নিত সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় কাজ শুরুর ব্যাপারে আপত্তি ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের। আপত্তির কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, বিমানবন্দর সড়কের এই অংশটিতে বিদ্যমান সড়কের উপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে তা বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। সড়কের মাঝ দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে গেলে বন্দরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। আইএসপিএস কোড অনুযায়ী বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করে।
এর প্রেক্ষিতে বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিদ্যমান রাস্তার উপর নির্মাণ না করে ত্রিশ ফুট বাইরে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭ একর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ৫ একর মিলে মোট ১২ একর জায়গা হুকুম দখল করতে হবে। কয়েকটি বহুতল ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা এতে ভাঙা পড়বে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়ায় প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। গত সপ্তাহে বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বন্দর ভবন পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশে কাজ শুরুর অনুমোদন দেওয়া হয়। সিডিএ আগামী সপ্তাহে এই অংশের কাজ শুরু করবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে আগ্রাবাদ এলাকার যানজটের আশংকায় নগর পুলিশ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করার ব্যাপারে অনুমোদন দিচ্ছিল না। সিডিএর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বিষয়টি নিয়ে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের সাথে বৈঠক করেন। অবশেষে নগর পুলিশও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যাপারে গত সপ্তাহে অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদনের পর বারিক বিল্ডিং থেকে লালখানবাজার অংশের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড এলাকায় শুরু হয়েছে কাজ।
বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত অংশটিতে কাজ শুরু করার আগে সিডিএ রাস্তার দুই পাশের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে রাস্তা বড় করার কাজ শুরু করেছে। রাস্তার মাঝখানে ২০ ফুটের মতো অংশ সিডিএ ঘিরে ফেললেও দুই পাশে জায়গা ঠিক করে দিচ্ছে। এতে রাস্তার উভয় পাশে কমপক্ষে ২৪ ফুট করে জায়গা গাড়ি চলাচলের জন্য নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা গতকাল আজাদীকে বলেন, শেখ মুজিব রোডের রাস্তার দুই পাশের একটি অংশ মোটর পার্টস ব্যবসায়ীরা দখল করে রাখে। তা উদ্ধার করে গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এতে করে সড়কের আইল্যান্ডসহ মাঝের ২০ ফুট জায়গা আমরা নিয়ে নিলেও যান চলাচলে খুব একটা সমস্যা হবে না। সড়কের এই অংশের অবৈধ দখলদারদের অপতৎপরতা ঠেকাতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান সিএমপি শীর্ষ একজন কর্মকর্তা।
দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজারের দিকে আসার সময় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দেওয়ানহাট ওভারপাসের উপর দিয়ে যাবে (ষোলশহর দুই নম্বর গেটের মতো)। দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে টাইগারপাসের দিকে যাবে। আগে ওভারব্রিজের দুই পাশ দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত থাকলেও বর্তমানে ডিজাইন পাল্টানো হয়েছে। এতে শুধুমাত্র দুই-তিনটি ভবন ভাঙা পড়বে এবং ঝামেলাও কম হবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। টাইগারপাস থেকে পাহাড়ের কোনো ক্ষতি না করে ফ্লাইওভার লালখানবাজারে এসে দুদিক থেকে বিদ্যমান আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে বলে গতকাল আজাদীকে জানান প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে বর্তমানে আর কোনো সমস্যা নেই। প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামের যান চলাচলের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তনের ফলে খরচ কিছু বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। তিনি জানান, মাত্র বিশ মিনিটে বহদ্দারহাট থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হওয়ার ব্যাপারটি এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫০ লাখ টিকার অগ্রিম ৬০০ কোটি টাকা আজ ভারতে পাঠাবে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধজাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছা দূত তাহসান খান