বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন প্রকল্পে গতি

চালু হয়েছে বন্ড লাইসেন্স অ্যাপ্লিকেশন মডিউল ।। লাইসেন্সের আবেদন ঘরে বসেই

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে রপ্তানিমুখী সকল বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন প্রকল্প হাতে নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর আক্ষরিক অর্থে সেই প্রকল্পের গতি এসেছে। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ মাস আগেই অনলাইন বন্ড লাইসেন্স অ্যাপ্লিকেশন মডিউল উদ্বোধন করেছে এনবিআর। চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকে বন্ড লাইসেন্সের আবেদন নেয়া হচ্ছে অনলাইনে। ফলে সেবাগ্রহীতাদের আর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নথিপত্র নিয়ে ছুটতে হচ্ছে না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছরের মার্চের মধ্যে প্রকল্পের ই-বন্ড রেজিস্ট্রার ম্যানেজমেন্ট মডিউলসহ বাকি ২৩টি মডিউলের কাজ সম্পন্ন হবে। এরপর ট্রায়াল রান শেষে জুলাই থেকে থেকে বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম চালু হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে সাড়ে ৬ হাজারের কাছাকাছি বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হলে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি ঠেকানো যাবে। এ ছাড়া পুরোপুরি অটোমেশন চালু হলে বন্ড কাস্টমসের কর্মকর্তারা বন্ডের রেজিস্ট্রার মডিউলে কোন প্রতিষ্ঠানের গুদামে কি পরিমাণ পণ্য আছে সেটি দেখতে পারবেন। এ ছাড়া কি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, সেটিও যাচাই করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্ড ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন চালু হয়ে গেলে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। প্রায় সময় বিভিন্ন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের গুদাম পরিদর্শন করে অনিয়মের চিত্র দেখা যায়। দেখা যায়, বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য গুদামে পাওয়া যায় না। প্রায় সময় প্রতিষ্ঠান মালিক পণ্য অন্যত্র সরিয়ে নেন কিংবা খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। ফলে সরকারও প্রচুর রাজস্ব হারায়। এ ছাড়া কাস্টমস বন্ড অফিসেও জনবলের সংকট রয়েছে। তাই নিয়ম করে সকল প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বন্ড ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অটোমেশন করা গেলে কম্পিউটারে বসেই কোন প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় কি পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, মজুদ কত এবং তা রপ্তানি করেছে তা সহজেই নজরদারি করা সম্ভব হবে।
বন্ডেড প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ড অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় সময় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ তুলেন। এটি কিন্তু ঠিক না। পোশাক কারখানা মালিকদের রেজিস্ট্রার চেক করলে সহজে দেখা যায় পণ্য সরানো হয়েছে কিনা। আমরা বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করি এবং পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করি। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সবাই খারাপ হতে পারে না। রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সহজ ও স্বচ্ছ হতে হবে। তাই অটোমেশন সিস্টেম যতদ্রুত সম্ভব চালু করা যাবে ততই ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার একেএম মাহাবুবুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্ড অটোমেশনের প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে বন্ড লাইসেন্স অ্যাপ্লিকেশন মডিউল চালু করা হয়েছে। এখন থেকে বন্ড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে চাইলে অনলাইনে করতে হবে। এ ছাড়া ধাপে ধাপে মডিউলের কাজগুলো সম্পন্ন করা হচ্ছে। বন্ড ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি অটোমেশন হয়ে গেলে তখন আর কেউ সহজে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করতে পারবে না। বন্ড কর্মকর্তাদের তদারকির কাজটাও সহজ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, এনিবআরের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে- বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন প্রজেক্টটি হাতে নেয়া ২০১৭ সালে। প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সেই মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩০১ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফাইনালের ড্রেস রিহার্সালে শ্রীলংকার জয়
পরবর্তী নিবন্ধএলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ