বদজ্বীন

ইলিয়াছ হোসেন | বুধবার , ২২ জুন, ২০২২ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

গ্রামের নাম মোড়লগঞ্জ। এই গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় নয় বছর বয়সী রাতুলদের বাড়ি। পাড়ার মধ্য দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে উত্তর পাড়ায়। উত্তর পাড়ায় রাতুলের নানা বাড়ি। সে এই রাস্তা দিয়ে তার মা জাহানারা খানমের সাথে প্রায়ই নানা বাড়ি বেড়াতে যায়। এই রাস্তার পাশে আছে একটি কবরস্থান। সেই কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাতায়াতের সময় অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মনের ভেতরে আতঙ্ক বিরাজ করে। তাই কবরস্থানের কাছে এলে ভয়ে কোনো কোনো বাচ্চারা তাদের মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে।

এক দিনের কথা, রাতুল সকালে তার মা জাহানারা খানমের সাথে নানা বাড়ি বেড়াতে যায়। নানা বাড়িতে সে সারা দিন তার সমবয়সী মামাত ভাই রবির সাথে আনন্দ ফুর্তিতে কাটায়। অন্যদিকে নানির সাথে গল্প করতে করতে তার মা জাহানারা খানম রাত নয়টা বাজিয়ে দেন। সে দিন ছিলো পূর্ণিমার রাত তাই জাহানারা খানম ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় বাপের বাড়ি থাকেন। তাই রাতুল তার মাকে বলে, মা আর দেরি করো না। এখনি বাড়ি চলো। অনেক রাত হয়েছে।
আর একটু থাকি না বাবা। আবার কবে আসি? তোর বাবা তো আসতেই দিতে চায় না। না মা এখনি চলো। আর আমি থাকবো না। জানো না পথে কবরস্থান আছে, সেখানে গেলে ভয় লাগে। ঠিক আছে বাবা আর দেরি করবো না। আচ্ছা মা আসি। তোমরা বেড়াতে যেও।

যাবো মা তুই আবার জামাই বাবাকে নিয়ে আসিস।
আচ্ছা আসবো।

রাতুল আর তার মা জাহানারা খানম বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কবরস্থানের কাছে আসতেই রাতুলের চোখ এমনিতেই চলে যায় কবরস্থানের দিকে। পূর্ণিমার আলোতে রাতুল দেখতে পায় তার আবুল কাকার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ একজন মৃদু স্বরে কাঁদছে। তাকে দেখেই ভয়ে রাতুলের গা শিহরে ওঠে। সে তার মা জাহানারা খানমকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে থাকে। তবে তার চোখ কিন্তু যে কান্না করছে তার দিকেই থাকে। পরবর্তীতে রাতুলের কাছে মনে হয় এতো জাহেদা কাকি! রাতুল তার মা জাহানারা খানমকে বলে, মা দেখো এতো রাতে কবরের পাশে জাহেদা কাকি দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আবুল কাকাকে মনে হয় কাকি ভুলতে পারছে না (উল্লেখ্য যে, আবুল হোসেন এক সপ্তাহ আগে মৃত্যুবরণ করেছেন)।

ঠিক বলেছিস বাবা জাহেদা অল্প বয়সে স্বামী হারিয়েছে, তাই হয়ত স্বামীকে ভুলতে পারছে না। তিন বছর বয়সী ছেলেটাকে নিয়ে কি যে করবে!

চলো মা আমরা কাকিকে বাড়ি দিয়ে আসি।
না বাবা কান্না করুক। কেঁদে কেঁদে মনের সব কষ্ট দূর করুক।
ঠিক আছে মা চলো আমরা বাড়ি যাই।

বাড়ি গিয়ে রাতুল তার বাবা রহিম শেখের কাছেও আবুল হোসেনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জাহেদা কাকির কান্নার কথা বলে। রহিম শেখও জাহানারা খানমের মত একই কথা বলে তাকে সান্ত্বনা দেয়।

দু’দিন পরের কথা। জাহানারা খানম রাতুলকে সাথে নিয়ে জাহেদা বেগমকে দেখতে যায়। জাহেদা বেগম তাদেরকে বসতে দেন। জাহানারা খানম জাহেদা বেগমকে জিজ্ঞেস করেন, জাহেদা কেমন আছো?

কেমন আর থাকবো আপা। জামিলের বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক চিন্তায় আছি। জমিজমা তেমন নেই, দুধের বাচ্চাটা নিয়ে কি ভাবে যে বাঁচবো!
তা ঠিকই বলছো। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। আল্লাহই সব ব্যবস্থা করবেন।

জাহানারা খানম আর জাহেদা বেগম কথা বলার মাঝখানে রাতুল জাহেদা কাকিকে জিজ্ঞেস করে, কাকি আপনি কি গত পরশু রাতে কবরস্থানে আবুল কাকার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। রাতে পূর্ণিমার আলোতে দেখলাম আপনি সেখানে একা একা কাঁদছেন।

না তো রাতুল! আমি তো গত পরশু কবরস্থানে যাইনি। আমি তো ঐ দিন বাপের বাড়িতে ছিলাম।

বলেন কি কাকি আমরা তো আপনাকেই দেখলাম! আর আপনি এখন বলছেন কবরস্থানে যাননি। তাহলে কাকে দেখলাম! তবে কি বদজ্বীন আপনার রূপ ধারণ করে সেখানে দাঁড়িয়েছিলো? মা ভয়ে আমার গা শিহরে উঠছে। এরপর নানা বাড়ি গেলে আর রাত করে বাড়ি ফিরবা না। তাহলে আমি তোমার সাথে নানা বাড়ি যাবো না।

রাতুল বলে ভালো করেছো। আমিও রাতে আর ঐ কবরস্থানের কাছে যাবো না।
হ্যাঁ কাকি তাই ভালো হবে।
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে অনেকেই ভয়ে ঐ কবরস্থানের পাশ দিয়ে রাতে একা একা যাতায়াত করে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাকলিয়ায় পানিবন্দিদের মাঝে যুবলীগ নেতার রান্না করা খাবার বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধএকটা বাবা