বঙ্গবন্ধু ও ১৬ ডিসেম্বর উন্নয়ন যুদ্ধের ঘোষণা

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | বুধবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে জাতীয় বিজয় দিবস উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘ষোলই ডিসেম্বরের সঙ্গে আমাদের অনেক ব্যথা, বেদনা, আনন্দ, গৌরব এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা জড়িত। এই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় এক লাখ পাকিস্তানী শত্রু আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আরো শক্তিশালী শত্রু, এই শত্রু হলো অভাব, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অশিক্ষা, বেকারী ও দুর্নীতি। এই যুদ্ধের জয় সহজ নয়। অবিরাম এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে এবং একটি সুখী, সুন্দর, অভাবমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তবেই হবে আপনাদের সংগ্রাম সফল, আপনাদের শেখ মুজিবের স্বপ্ন ও সাধনার সমাপ্তি।’ আমরা সম্যক অবগত আছি যে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক মুক্তি ও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বহুবার তিনি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করলেও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠিন নতুন সংগ্রামে জয়ী হতে হবে।
দৃঢ়কন্ঠে বঙ্গবন্ধুর দাবী ছিল; সুখী ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতার অর্থবহতা নিদারুণ অসারে পরিণত হবে। স্বাধীনতা তখনই প্রকৃতপক্ষে উপলব্ধি করা যাবে, যখন দেশের কৃষক-মজুর ও দু:খী মানুষের সকল দু:খের অবসান হবে। এটি সর্বজনবিদিত যে, বাংলা নামক এই জনপদের সমাজ-ইতিহাস সুদীর্ঘ অতীত-প্রাচীনকে ধারণ করেই সামগ্রিক বিকাশ ও বিস্তার লাভ করেছে। প্রায় তিন হাজার বছরের সমৃদ্ধ পরম্পরায় এই অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের ‘স্বয়ং-সম্পূর্ণ গ্রাম ব্যবস্থার’ অন্যতম দৃষ্টান্ত ছিল। ‘গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু ও পুকুর ভরা মাছ’ দিয়ে বিশেষায়িত এই অঞ্চল অনেকখানি বিশ্বখ্যাত ছিল। কিন্তু কৃষি উৎপাদনে অত্যুজ্জ্বল এই অঞ্চল দীর্ঘ সময় ব্যতিক্রম ধারায় অনগ্রসরতার পরিচয় বহন করে আসছে। এর পেছনে যে কারণটি প্রণিধানযোগ্য, তাহলো ঔপনিবেশিক তথা ভিনদেশী শাসকদের শাসন ও শোষণ এবং এই অঞ্চলের সম্পদের প্রচন্ড অমানবিক লুন্ঠন।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য কৃতি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার জনাব আবুল মনসুর আহমদ’র মতে, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ১৯৪০-এ লাহোরে যা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে তা সমাপ্ত করেছেন। বিশ্বের সর্বত্রই জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আত্ননির্ভরশীল স্বয়ম্ভর রাষ্ট্রকাঠামো গঠনের অঙ্গীকার রাজনীতিক দূরদর্শিতার মধ্যেই নিহিত থাকে। ফরাসী বিপ্লবের দর্শন তথা সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার যে চিরায়ত অনুপ্রেরণা, তা কিন্তু শুধুমাত্র ভৌগোলিক ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা, বহুমাত্রিকতায় তা ছিল সকল জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা জাতির পরিপূর্ণ উন্নয়নের মৌলিক উৎস প্রেরণা।
বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বস্তুতঃ মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল; এই অঞ্চলের শোষিত-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা নয়, দারিদ্রমুক্ত-ক্ষুধামুক্ত, কর্মচঞ্চল আত্মপ্রত্যয়ী, গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক-মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। বঙ্গবন্ধু নিরন্তর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে দীর্ঘ জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে যে বিষয়সমূহ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছেন; তা ছিল পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদীদের নির্দয় শোষণ-শাসনের নানা অনুষঙ্গ। ১৯৬১ সালের জরিপ অনুযায়ী – এ অঞ্চলে জনসংখ্যা ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ, রপ্তানি আয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ৩০-৫০ শতাংশের বিপরীতে ৫০-৭০ শতাংশ, আমদানি ব্যয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ৫০-৭০ শতাংশের বিপরীতে ২৫-৩০ শতাংশ, বেসামরিক চাকরির ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের ৮০-৮৪ শতাংশের বিপরীতে ১৬-২০ শতাংশ, সামরিক চাকরির ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বিপরীতে ১০ শতাংশ, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পুঁিজ বিনিয়োগ ২.১ শতাংশের বিপরীতে পূর্ব বাংলায় ০.৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মঞ্জুরী ও আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রে ১০.২ শতাংশের বিপরীতে পূর্ব বাংলায় ছিল ১.৪ শতাংশ। বৈদেশিক সাহায্য বিতরণের ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের ৭০-৮০ শতাংশের বিপরীতে পূর্ব বাংলায় ছিল মাত্র ২০-৩০ শতাংশ, শিক্ষা অনুদানের ক্ষেত্রে ১.৫ শতাংশের বিপরীতে পূর্ব বাংলায় ছিল ০.২ শতাংশ এবং সামরিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৪.৭ শতাংশের বিপরীতে পূর্ব বাংলায় ০.১ শতাংশ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি পাকিস্তান ও তাদের মিত্র শক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানামুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ আর্থ-সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত একটি জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে নিরলস সংগ্রামে ব্রতী হতে হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন পিএল ৪৮০’র তথাকথিত পরনির্ভরশীলতার ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তির শর্ত অবজ্ঞা করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিউবায় পাট রপ্তানির বিষয়কে ঘিরে ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশে খাদ্য শস্য নিয়ে আসা জাহাজগুলোর পথ ঘুরিয়ে দিয়ে ১৯৭৪ সালে চক্রান্তমূলক নৃশংস দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাসন্তী নামক এক বাঙালি মেয়েকে মাছ মারার জাল পরিয়ে দুর্ভিক্ষের ছবি বিশ্বব্যাপী প্রচার এবং এদেশকে অকার্যকর করার নানাবিধ অপচেষ্টাসমূহকে অসীম সাহসিকতা, বিচক্ষণতা ও দেশ পরিচালনার দূরদর্শিতায় বঙ্গবন্ধু সামগ্রিক সংকট উত্তরণে বহুলাংশে সফল হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আত্ননির্ভরশীল দেশকে পরনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও পরবর্তিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও অগ্রযাত্রার ইতিহাসকে পাল্টে দেওয়ার যে ঘৃণ্য অপচেষ্টা তা কিন্তু এখনও যে অব্যাহত রয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশকে নেতৃত্ব শূন্য করে সামষ্টিক উন্নয়ন ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার বিভিন্ন পরিসংখ্যান এখনও তুলনামূলক বিচারে অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৭৪ পূর্বে যেখানে ব্যক্তিগত খাতে ঋণদানের পরিমাণ ছিল বার কোটি টাকা, সেটি ১৯৭৫-৮১ সালে রাষ্ট্রখাত বাদে ৮৭৬ কোটি টাকায় এবং ১৯৮২ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে উন্নীত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৭৮-৮২ সালে ঋণ গ্রহণকারী চার হাজার শিল্প প্রকল্পের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। পুঁজি বিনিয়োগ বোর্ডের এক জরিপে দেখা যায়, কেবল ৮৫-৯০ সালে (পাঁচ বছরে) গড়ে ৭,৫৩১ টি অনুমোদিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪,৪২২ টি শিল্পের কোন অস্তিত্ব ছিলনা। এভাবেই শিল্প বিকাশের সকল সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনাশ করে সামরিক শাসকরা দেশের অর্থ-সম্পদ লুন্ঠনে কদাচার-মিথ্যাচার-পাপাচার-প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে। সহিংস পন্থায় উগ্রসাম্প্রদায়িক-অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে রাষ্ট্রকে দুর্বৃত্তায়নের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। এখনো তাদের বশংবদ অনুসারী-ক্ষমতার সুবিধাভোগী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ছলচাতুরীর অপকৌশলে ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারে অনুপ্রবেশকারী-বর্ণচোরা-অভিনয় শৈলীতে পারঙ্গম কদর্য-নষ্ট চরিত্রগুলো ছদ্মবেশে দেশকে ধ্বংসের অদৃশ্য ষড়যন্ত্রে প্রতিনিয়ত সম্পৃক্ত থাকার প্রবল জনশ্রুতি রয়েছে।
করোনা অতিমারির এই দু:সময়েও বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে নেওয়ার অব্যাহত অভিযাত্রায় নতুন মাইলফলক প্রদর্শিত হচ্ছে। অতিসম্প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি লড়াইয়ে বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতির অভিযোগকে নস্যাৎ করে দেশীয় নিজস্ব অর্থায়নে দৃশ্যমান পদ্মা সেতু যুগান্তকারী উন্নয়ন অধ্যায় রচনা করেছে। ১৯৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমান ছিল এক কোটি মেট্রিক টন। বিগত পাঁচ দশকে প্রায় সাতাশ শতাংশ ভূমির পরিমাণ হ্রাস পেলেও বর্তমান সতের কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় পাঁচগুন। মানব উন্নয়ন সূচকে ২০৩০ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম অবস্থানে অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি এখন আর অমূলক স্বপ্ন নয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবদান হবে এক শতাংশ। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার রূপকল্প যে অচিরেই দৃশ্যমান বাস্তবতায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলবে তা নিঃসন্দেহে বিশ্বাসযোগ্য।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২০ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭ শতাংশ, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১২৫ জন, প্রতি ১০০০ জনে স্থূল জন্ম ও মৃত্যুহার যথাক্রমে ১৮.১ ও ৪.৯ জন, শিশু মৃত্যুহার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) ২১ জন, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল উভয় ৭২.৬ বছর (পুরুষ ৭১.১, মহিলা ৭৪.২ বছর), সুপেয় পানি গ্রহণকারী ৯৮.১ শতাংশ, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারকারী ৮১.৫ শতাংশ এবং সাক্ষরতার হার (৭ বছর +) ৭৪.৭ শতাংশ। ২০১৮-১৯ সালে প্রাক্কলিত দারিদ্র্যের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ১০.৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চলতি মূল্যে জিডিপি ২৭,৯৬,৩৭৮ কোটি টাকা, স্থির মূল্যে জিডিপি ১১,৬৩,৭৪০ কোটি টাকা, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৫.২৪ শতাংশ, মুদ্রাস্ফীতি ৫.৬৫ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু জিডিপি ১৯৭০ মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমান ৩৩,৬৭৪.০৯, আমদানির পরিমান ৫৪,৭৮৪.৭০ ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় ৩২.৮৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩০ জুন’ ২০২০ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৩৬.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বর্তমানে প্রায় ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উর্ধ্বে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ধারণায় বাংলাদেশ উন্নয়নের বহু সূচকে প্রতিবেশি ভারতকে ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। ভারতের প্রভাবশালী ‘দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া’র ১৫ অক্টোবর ২০২০ সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল ‘ভারত, পূর্ব দিকে তাকাও: বাংলাদেশ ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। আমাদের জন্য শিক্ষনীয়’। বিখ্যাত আনন্দবাজার পত্রিকার ১৪ অক্টোবর ২০২০ শিরোনাম ছিল – “পড়ছে ভারত ! মাথাপিছু উৎপাদনে ‘অচ্ছে দিন’ ‘যাচ্ছে বাংলাদেশে’।” আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অক্টোবর ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক’ প্রতিবেদন অনুসারে ভারতের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) দাঁড়াবে ১ হাজার ৮ শত ৭৭ মার্কিন ডলার। বিপরীতে বাংলাদেশের মাথাপিছু উৎপাদন হবে ১ হাজার ৮ শত ৮৮ মার্কিন ডলার। এই দৃশ্যপট অনুধাবনে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সমালোচনায় কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘এটাই বিজেপির হিংসাত্মক রাজনৈতিক সংস্কৃতির অর্জন।’
পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক কৌশিক বসু ভারতকে ‘শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতি’ চালু করার আহবান জানান। দি প্রিন্ট’র প্রধান সম্পাদক খ্যাতিমান সাংবাদিক শ্রী শেখর গুপ্ত ১৫ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আইএমএফ এর চলতি অর্থবছরের প্রতিবেদন ভারতের অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল স্থান চিহ্নিত করে দিয়েছে। এই সংস্থার আয়না ভারতের জন্য বড়ই নিষ্ঠুর !’ উক্ত প্রতিবেদনের পূর্বাভাস অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানের অগ্রভাগে থাকবে। মূলত: ক্ষুধা-নারীর ক্ষমতায়ন-বিশ্ব সুখ-টিকাদান-শিশুমৃত্যু রোধ ইত্যাদির সূচকেও বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। আত্মবিশ্বাস-আত্মসম্মান-আত্মপ্রত্যয়বোধে সমুজ্জ্বল বাংলাদেশ উদ্ভূত সকল সমস্যার সমাধানে অবশ্যই সার্থক হবে – নি:সন্দেহে তা বলা যায়। অর্থবহ স্বাধীনতার মর্মার্থবোধে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে জাতির অধিকতর নিষ্ঠা ও পরিশ্রম সার্বিক সাফল্য অর্জনে গৌরবোজ্জ্বল হউক – আজকের দিনে এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈজ্ঞানিক মানসচিন্তা ও বঙ্গবন্ধু
পরবর্তী নিবন্ধসেকান্দর মিয়া