বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে নিরস্ত্র বাঙালি হয়ে ওঠে সশস্ত্র

উত্তর জেলা আ. লীগের আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৭ মার্চ, ২০২১ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাঙালি একটি নিরস্ত্র জাতি ছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের একটি ভাষণের মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বললেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। সেদিন নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে গতকাল শনিবার উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এমন একটি ভাষণ ছিল, যার লাঠি আছে সে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল, যার ঘরে দা আছে, লাইসেন্স করা বন্দুক আছে, তা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিল। যে ভাষণ আজও যে কেউ শুনলে যেভাবে উদ্দীপ্ত হয়, গায়ের লোম যেভাবে খাড়া হয়ে যায়, এমন কোনো নেতার ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে কেউ দেননি।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো এমন আবেদনময় ও উদ্দীপ্ত করার ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ দেননি। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর কোনো নোট ছিল না, তিনি একনাগাড়ে বলে গেছেন। পৃথিবীতে অনেক ভাষণ আছে অনেক অর্থবহ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর এ ভাষণে একটা নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীকে সশস্ত্র জনবাহিনীতে রূপান্তর করে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, চতুর শেখ মুজিব প্রকৃত অর্থে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য তাকে অভিযুক্তও করা যাচ্ছে না। এমনভাবে বঙ্গবন্ধু বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এখনো এই ভাষণ শুনলে মানুষ থমকে দাঁড়ায়। এজন্য বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ অসাধারণ ও অনন্য বিধায় জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর অপপ্রচার চালানো হয় জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ দলীয় নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বড় বড় স্লোগান ও ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়ার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে অপপ্রচারগুলোর বিরুদ্ধে সুপ্রচার চালানো, উন্নয়ন ও অর্জনের প্রচার করা। সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রপচারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো তুলে ধরা। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের ভালো প্রচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার কর্মীদেরও মূল্যায়ন করব।
বিএনপি ৭ই মার্চ পালন করবে ঘোষণা দেয়ায় তাদের অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এতদিন পরে তাদের বোধোদয় হলো। মির্জা ফখরুল সাহেব এটিও বলেছেন ৭ই মার্চ ইতিহাস, এই ইতিহাসকে আমাদের স্বীকার করতে হবে। আমি ফখরুল সাহেবদের বলব বাকি যে ইতিহাস বিকৃতি করেছিলেন, সেটাও ভুল স্বীকার করে বাকি ইতিহাসগুলো স্বীকার করে নেন। তাহলে জাতি আপনাদেরকে সাধুবাদ দেবে।
তিনি বলেন, বিএনপির এখন নানা ধরনের মিছিল আছে, দৌড় মিছিল, চোরাগোপ্তা মিছিল, হঠাৎ মিছিল। গতকাল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ নাকি একটি চোরাগোপ্তা মশাল মিছিল করেছেন। তাদের বলব এভাবে চোরাগোপ্তা মিছিল ও মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা করে লাভ হবে না। সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে যদি যেতে চান তাহলে ইতিহাসকে মেনে নিন, যেভাবে ৭ই মার্চকে মেনে নিয়েছেন। এতদিনের অপরাজনীতির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর জন্য মায়াকান্না করছে। তার মৃত্যুতে আমি নিজেও ব্যথিত। কিন্তু মুশতাক আহমেদ কেন গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি করোনা মহামারি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছিলেন। একটি পেজ থেকে নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছিলেন, সেই কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জামিন কেন পাননি, সেটি কোর্ট বলতে পারবে, এই এখতিয়ার কোর্টের। তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক মৃত্যু-তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এভাবে ছেলেধরা নিয়েও গুজব ছড়ানো হয়েছিল।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে যখন কোনো অর্জন হয়, আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলাম, তখন একটি পক্ষ লেগে গেল অন্য বিষয় নিয়ে মাঠ গরম করার জন্য। অথচ এটি নিয়ে একটি অভিনন্দন তাদের মুখ থেকে আসেনি। এটি তাদের একপেশে ও চিন্তার দৈন্য। দেশের অর্জন যে তাদের চোখে পড়ে না, কানে যায় না সেটিরই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি উন্নত রাষ্ট্র রচনা করার জন্য। সেই স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজকে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আগেই বাংলাদেশ নাম লিখাত উন্নত দেশের কাতারে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছরে জাতিসংঘ ফাইনাল রিকমেন্ডেশন দিয়েছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। এটি আমাদের দেশের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় অর্জন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক মো. শামসুল হক, সংগঠনের সহসভাপতি অধ্যাপক মো মঈনউদ্দিন, অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, মহিউদ্দিন রাশেদ, মো. আবুল কালাম আজাদ, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, জসিম উদ্দিন, স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু, নজরুল ইসলাম তালুকদার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান সিকদার, আলী শাহ, মোহসীন জাহাঙ্গীর, ইদ্রিচ আজগর, আলাউদ্দিন সাবেরী, ডা. মো. মোস্তাফা, জাফর আহমেদ, বেদারুল আলম চৌধুরী, প্রদীপ চক্রবর্ত্তী, ইঞ্জিনিয়ার মেজবা উল আলম লাভলু, নাজিম উদ্দিন তালুকদার, ডা. মো সেলিম, মো. নুর খান, ব্যারিস্টার প্রিয়াংকা আহসান, আ সা মো. ইয়াছিন মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য শওকত আলম, মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, মো. সেলিম উদ্দিন, আকতার হোসেন খান, সাহেদ সরোয়ার শামীম, এস এম গোলাম রব্বানী, বখতেয়ার সাঈদ ইরান, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, উত্তর জেলা কৃষক লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দিলোয়ারা ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, যুব মহিলা লীগ আহ্বায়ক রওশন আরা রত্না, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জুবাইদা সরোয়ার নিপা, উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হোসেন তপু ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন দাবি
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬