ফেসবুকে মুখোমুখি ছাত্রলীগ-ছাত্রদল

প্রতিরোধের ঘোষণা আর কঠোর পদক্ষেপের হুমকি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১২ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও চট্টগ্রামে এই দুই সংগঠনকে সর্বশেষ কয়েক বছরে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায়নি। সংগঠন দুটির নেতারা নিজেদের মতো করে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও অনেকটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এই দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের। তবে হঠাৎ করেই সে সম্পর্কে যেন চিড় ধরেছে, যার প্রকাশ ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
জানা গেছে, গত শনিবার রাতে নগরে ২৬ ইউনিট কমিটি ঘোষণা করে নগর ছাত্রদল। এর মধ্যে আছে ১৪টি কলেজও। ওইসব কলেজে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছাত্রলীগ। অনেকটা একক আধিপত্য তাদের। মূলত ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর ওইসব কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। এতে অবশ্য নগর ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারাও যোগ দিয়েছেন। কয়েকজন ফেসবুকে পোস্ট করে কলেজে ছাত্রদলকে ‘প্রতিরোধ’ করারও ঘোষণা দেয়। অবশ্য পাল্টা পোস্টও করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে তারা নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিতে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেয়া হবে বলেও হুমকি দেন। এ অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে আতংকিত তারা। ফেসবুকের হুমকি-ধমকি যদি কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছুয় তা সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
জানা গেছে, বর্তমানে নগরে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থানে থাকা কলেজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ওমরগণি এমইএস কলেজ, কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজ। ইতোমধ্যে এসব কলেজের ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা ফেসবুকে পোস্ট করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী লিখেন, ‘২০০৪ সালে তারেক জিয়ার নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের লাল্টু পল্টুর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরে প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিল করেছিল সেই সময়ও বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও ওমরগণি এমইএস কলেজে মিছিল করার দুঃসাহস ছাত্রদল করে নাই, আর এখন এসে ফেসবুকে কলেজের কমিটি দিয়ে হস্যরসের সৃষ্টি করলো। যাদের নাম কমিটিতে দেওয়া হয়েছে কলেজে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল যে দেউলিয়া সংগঠন তার প্রমাণ ফেসবুকে অস্তিত্ব বিহীন নাম দিয়ে কমিটি গঠন।’
মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দীন মামুন ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘মহসীন কলেজ ক্যাম্পাসে জিয়ার সৈনিকদের তথাকথিত কমিটিকে প্রতিরোধ করবে মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ’। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম লিখেন, ‘কলেজে যদি কোন ধরনের…জিয়ার সৈনিকদের গন্ধ পায় তাহলে খেলা হবে..!’
জানতে চাইলে মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দীন মামুন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ফেসবুকে দেখলাম মহসীন কলেজে ছাত্রদলের কমিটি দিয়েছে। কমিটিতে যাদের নাম আছে তাদের অনেকেই কলেজ থেকে পাশ করে বের হয়ে গেছে। এদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সংযোগ নেই। এতে বুঝা যাচ্ছে ছাত্রদল কলেজে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা যদি কলেজে অস্থিতিশীল কিছু করে এবং কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চায় তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের প্রতিরোধ করবে। সাংগঠনিকভাবে যে নির্দেশনা থাকবে সে আলোকে ব্যবস্থা নিবে কলেজ ছাত্রলীগ। তিনি বলেন, ছাত্রদলের কমিটিতে যারা আছে তাদের যদি ছাত্রত্ব থাকে তাহলে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অবশ্যই কলেজে আসতে পারে।
এ বিষয়ে নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন গতকাল এক বিবৃতি বলেন, নবনির্বাচিত বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের উপর ছাত্রলীগ হামলা করে ও সোশ্যাল মিডিয়ায়সহ ফোন করে হুমকি দেয়। ছাত্রলীগের এই অযৌক্তিক হামলা ও হুমকি অগণতান্ত্রিক। অবিলম্বে হামলা-হুমকির রাজনীতি পরিহার করে সুষ্ঠু রাজনীতিতে ফিরে আসতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানাই। অন্যথায় গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে শিক্ষাঙ্গণে ছাত্রদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য ছাত্রদল যেকোন কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। তারা বলেন, ছাত্রদল সবসময় ছাত্রদের অধিকার আদায় ও মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা শিক্ষাঙ্গণে ছাত্রদের স্বতন্ত্র গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা ও সকল দলের সহ অবস্থানে বিশ্বাসী। সম্প্রতি বিভিন্ন কলেজ নেতৃবৃন্দের উপর ছাত্রলীগের হামলা ও হুমকি দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রতিহিংসার চূড়ান্ত অবস্থান প্রমাণ করে তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা ও শিক্ষাঙ্গণে সহ অবস্থানে বিশ্বাস করে না।
এদিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে গতকাল পদত্যাগ করেছেন কমার্স কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. মেহেদী হাসান (রায়হান)। অবশ্য পদত্যাগের কারণ হিসেবে পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেন, ‘সদ্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় ছাত্রদলের সাংগঠনিক যোগ্যতা হারায়।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধশক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছি না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত