ফিনসেন ফাইলস কী

দুই লাখ কোটি ডলার লেনদেনের আড়াই হাজার দলিল ফাঁস

| বুধবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

দুই লাখ কোটি ডলারের লেন-দেনের এমন কিছু গোপন দলিল ফাঁস হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কিছু ব্যাংক কীভাবে অপরাধীদেরকে বিশ্বজুড়ে কালো টাকা পাচার করতে দিয়েছে। এসব দলিলে আরও দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার অলিগার্ক বা ক্ষমতাবলয়ের সঙ্গে যুক্ত ধনী গোষ্ঠীপতিরা কিভাবে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাচার করেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা জারিই করা হয়েছিল যাতে তারা পশ্চিমা দেশগুলোতে টাকা পাচার করতে না পারে। গত পাঁচ বছর ধরে গোপন লেন-দেন, অর্থ পাচার এবং আর্থিক অপরাধ বিষয়ে যেসব গোপন দলিল ফাঁস হয়েছে, তা থেকে সর্বশেষ এসব ঘটনার কথা জানা গেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
ফিনসেন ফাইলস হচ্ছে ফাঁস হয়ে যাওয়া আড়াই হাজার দলিল। ২০০০ সাল হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছিল এসব দলিল। ব্যাংকের গ্রাহকরা আসলে যা করছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এসব দলিলে। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সবচেয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়, এমন ধরনের দলিল এগুলো। ব্যাংকগুলো যখন কোন গ্রাহকের আচরণে সন্দেহজনক কিছু দেখে, তখন তারা এরকম রিপোর্ট পাঠায় মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু এসব দলিল অপরাধ বা বেআইনি কোন কাজের প্রমাণ।
এই দলিলগুলো ফাঁস করা হয়েছিল বাজফীড নিউজের কাছে। এরপর সারা বিশ্বের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব দলিল শেয়ার করা হয়। ৮৮টি দেশের ১০৮টি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব দলিল বিতরণ করা হয়। বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানও এই অনুসন্ধান কাজে যুক্ত ছিল। ফিনসেন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফাইনান্সিয়াল ক্রাইমস ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্ক’ (ঋরহঈঊঘ) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এরা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে আর্থিক অপরাধ দমনে কাজ করে। মার্কিন ডলারে যত লেন-দেন হয়, সেটা যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ঘটে থাকে, সেই লেন-দেন নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তা ফিনসেনের কাছে পাঠাতে হয়। কেউ যদি কোন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে লাভবান হওয়ার পরিকল্পনা কষে থাকে, তাহলে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগে তাকে ঠিক করে রাখতে হয়। সেটা হচ্ছে, অর্জিত অবৈধ কালো অর্থ কিভাবে ‘সাদা’ করা হবে। মানি লন্ডারিং মানে হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া। নিয়ম ভেঙ্গে কোনো গ্রাহক যেন এভাবে অর্থ পাচার করতে না পারে, বা কালো অর্থ সাদা করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা ব্যাংকগুলোর কাজ।
ফিনসেন ফাইলসের দলিলগুলোতে আছে প্রায় দুই লক্ষ কোটি ডলারের লেন-দেনের কথা। সামপ্রতিক বছর গুলোতে এরকম আরও অনেক আর্থিক দলিল ফাঁস হয়েছে। এর মধ্যে ছিল : ২০১৭ সালের প্যারাডাইস পেপার্স, ২০১৬ সালের পানামা পেপার্স, ২০১৫ সালে সুইস লিকস, ২০১৪ সালের লাঙ-লিকস, ইত্যাদি। তবে ফিনসেন ফাইলস আগের ফাঁস হওয়া দলিলপত্র থেকে একটু আলাদা। এগুলো কেবল একটি বা দুটি কোম্পানির দলিলপত্র নয়। এসব দলিল এসেছে বহু ব্যাংক থেকে। এই দলিলপত্রে ধরা পড়েছে অনেক সন্দেহজনক লেন-দেন যার সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান। যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে এসব লেন-দেন হয়েছে, তাদের চোখে বিষয়টি ধরা পড়ার পরও কেন তারা ব্যবস্থা নেয়নি, সে প্রশ্নও উঠেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইতালিতে পার্লামেন্টের আকার এক-তৃতীয়াংশ কমানোর পক্ষে জনরায়
পরবর্তী নিবন্ধযুদ্ধে যাবেন রাজকন্যা!