ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে…, মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে, মধুর মলয়সমীরে মধুর মিলন রটাতে… আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে…ওরে গৃহবাসী খোল, দ্বার খোল, লাগল যে দোল..আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে.. আজি নূতন রতনে ভুষনে যতনে প্রকৃতি সখীরে সাজিয়ে দাও..হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূয়ের মতো নাচে রে, হৃদয় নাচে রে…, ওগো দখিন হাওয়া, ও পথিক হাওয়া, দোদুল দোলায় দাও দুলিয়ে… এমনি অনেক ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী গীতিতে আজ পহেলা ফাল্গুন বসন্ত বরণের বর্ণিল আয়োজনের পসরা বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম সাজিয়ে ছিলো নগরীর পাহাড়তলী আমবাগান রেলওয়ে জাদুঘর সংলগ্ন শেখ রাসেল পার্কে। যেখানে গান, কবিতা, নৃত্য, যন্ত্রানুষঙ্গ ও কথামালায় বসন্তের রঙিন আবহ মুখর হয়ে ওঠে। সকালের অধিবেশনের শুরুতে ছিলো বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম সহ সভাপতি আবৃত্তিশিল্পী সুবর্ণা চৌধুরী আবৃত্তি। এরপর ক্রমশঃ সূর্যের প্রখরতা আরো একটু উৎসুক হতেই একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী কান্তা দে ও সুতপা চৌধুরী।এরপর রঙের বাহার নিয়ে মঞ্চে এলো নানান গানের তালে নৃত্যরূপ একাডেমী, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, মাধুরী ডান্স একাডেমী, স্কুল অব ওরিযেন্টাল ডান্স। তবে কথামালায় ফাগুনের বার্তায় সকালের অধিবেশনে ছিলেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, নাট্যজন সুচরিত দাশ খোকন, কবি জিন্নাহ চৌধুরী, সংগঠক সাজ্জাদ হোসেন।
এরই মধ্যে বসন্ত ও ভালোবাসার কথন আবৃত্তিতে জানিয়ে দেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান জাহাঙ্গীর, তাসকিয়া-তুন-তানিয়া, মাহবুবুর রহমান মাহফুজ, এহেতাশামুল হক। এ পর্বে দলীয় সংগীত পরিবেশনায় বসন্তের আগমনী লু-হাওয়া সমবেত কণ্ঠে জানান দেয় শিল্পী শ্রেয়সী রায়ের পরিচালনায় অভ্যুদয় সংগীত একাডেমীর শিল্পীরা। একক সংগীতে ছিলেন শিল্পী মাহবুবুর রহমান সাগর, শুভাগত চৌধুরী, তাসনিম যারীন ইসমি, মধুলিকা, পৃথুলা বিশ্বাস, হিমু দাশ প্রমুখ।
বিকেলে উৎসব অঙ্গন থেকে বর্ণাঢ্য বসন্তবরণ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বিকেলের অধিবেশন সূচনা হয়। এসময় নানান রঙের প্ল্যাকার্ড ও ছন্দময় ঢোলবাদনে বোধনের আবৃত্তিকর্মীরা নেচেগেয়ে উল্লসিত আবেগ রাজপথ রাঙিয়ে তুলে। বিকেলের অধিবেশনে অতিথি ছিলেন সিএমপি উত্তর উপ পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক, প্রফেসর ড. গাজী সালাউদ্দিন, ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক ছাত্রনেতা শওকত হোসাইন। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি উপ-পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক বলেন, “সংস্কৃতিচর্চা মানুষকে উন্নত মনন গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য নিজস্ব সংস্কৃতি ধরে রাখা খুবই জরুরী। তেমনই এক আয়োজন এ বসন্ত উৎসব কারণ একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে সংস্কৃতিচর্চা অনন্য।”
কথামালায় বক্তরা আরো বলেন, বাঙালির প্রাণের এ আয়োজন বোধন আবৃত্তি পরিষদ প্রতি বছরের মতো এবারো আড়ম্বরভাবে সমৃদ্ধ করেছে যা হৃদয় উজাড় করে মুখর এক আয়োজন নাগরিক শ্রোতাদের উৎফুল্ল সময় বয়ে দেয়।
কথামালার ফাঁকে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বসন্তঋতু সুন্দর সুনিপুণতার বিশদ কণ্ঠে তুলে ধরেন শিল্পী কেশব জিপসী, রিষু তালুকদার, তুলি দাশগুপ্তা, সাদেকুল ইসলাম ছন্দ, বাহার আহম্মেদ, অর্ণব ভট্টাচার্য, চন্দ্রিমা ভৌমিক ও ঋতু সাহা। একক আবৃত্তিতে এ সর্বজনীন বাঙালির উৎসবের প্রাণসঞ্চার করেন আবৃত্তিশিল্পী মিলি চৌধুরী, দেবাশীষ রুদ্র, ইসমাইল চৌধুরী সোহেল, সঞ্জয় পাল, বিপ্লব কুমার শীল, পলি ঘোষ, সাজ্জাদ হোসেন, বীথিকা বসাক ও ঈশা দে।
নৃত্যে ফাগুনের সমীরণে উদ্বেলিত জয়গানে মঞ্চ দাঁপিয়ে বেড়ায় নৃত্য নিকেতন, এ.বি. নৃত্যাঙ্গন, চিটাগাং ডান্স একাডেমী।এসময় প্রকৃতির মায়াজালে সুরের পরশ বুলিয়ে দেন যন্ত্রসংগীতে ভায়োলেনিষ্ট চিটাগাং, শোভন দাশ ও প্রিয়ম চক্রবর্তী, আনিস মাহমুদ।দলীয় সংগীতে জীর্ণ সময়কে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতির অনন্য মুহূর্ত তুলে ধরেন ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীরা।
এবারের বসন্ত উৎসবের আবির রঙা মুহূর্ত অন্তরে ধারণ করে দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনে আঁধার ভেঙে আলোর বুনন উৎসারিত করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম এর একঝাঁক আবৃত্তিশিল্পীরা।