ফাঁকা সৈকতে অল্প সংখ্যক পর্যটকের সমুদ্র বিলাস

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র রমজান মাসে অনেকটায় জনশূন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। ৬০ শতাংশ বিশেষ ছাড়েও খালি পড়ে আছে পাঁচ শতাধিক হোটেলমোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। একই সাথে বন্ধ রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক রেস্তোরাঁ।

সরেজিমন সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সাগরতীরে নেই পর্যটকের চিরচেনা আনাগোনা। বালিয়াড়িতে সারি সারি বসানো কিটকট চেয়ারগুলো খালি পড়ে আছে। শৈবাল পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা পর্যন্ত হাজারো কিটকট চেয়ারে বসে আছেন মাত্র ১০ জনের মতো ভ্রমণ পিপাসু। আর সমুদ্র স্নানে দেখা গেছে ১০ জনের মতো পর্যটক। বালুচরে নেই উচ্ছ্বাস, চারদিক সুনশান নীরবতা। ঘোড়া নিয়ে এদিকসেদিক ঘোরাঘুরি করছে ঘোড়াওয়ালা। অলস সময় পার করছেন লাইফগার্ড ও চিত্রগ্রাহকেরা।

সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী ওসমান গণি বলেন, রমজানের আগে প্রতিদিনই লাখো পর্যটকের আগমন ছিল কক্সবাজার সৈকতে। কিন্তু এখন পর্যটক একদম নেই বললেই চলে। তারপরও আমরা নিয়মিত দায়িত্বপালন করে যাচ্ছি। পর্যটকের চাপ না থাকায় খুবই অলস সময় পার করছি। ঘোড়াওয়ালা ফরিদ বলেন, রমজান আসার পর থেকে সৈকতে পর্যটক নেই। আমাদের ব্যবসাও খারাপ। এখন ঘোড়াকে খাবার দেওয়ার টাকাও পাচ্ছি না।

বিচ বাইক চালক রিয়াদ বলেন, রমজান পর্যটক খুবই কম। লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সবমিলিয়ে ১০০ জনের মতো পর্যটক দেখা যাচ্ছে।

পর্যটকরা বলছেন, বিশেষ ছাড়ের মধ্যে কক্সবাজার ভ্রমণে এসে ফাঁকা সমুদ্রসৈকত বেশ উপভোগ করছেন। রমজানের কারণে খাবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়লেও সৈকতে নেই হকার ও ভিক্ষুকের উৎপাত। গাজীপুর থেকে আসা পর্যটক সোহেল শর্মা বলেন, যেভাবেই হোক একটু ছুটি ম্যানেজ করে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার আসলাম। এসে এখন ভালো লাগছে। একদম সমুদ্রের আসল সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারছি। একদম ফাঁকা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। এছাড়াও হোটেলগুলোতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে, একদম দামে হোটেল থাকছি। আয়েশা রহমান নামের এক পর্যটক বলেন, অসম্ভব ভালো লাগছে। কারণ এই মুহূর্তে সৈকতে ভিক্ষুক বা হকারদের উৎপাত নেই। একদম নিরিবিলিতে সাগরকে যেভাবে আপন করে পেতে চাই, সেভাবেই পাচ্ছি। আরামবাগ থেকে আশা শাপলা দাশ বলেন, ফাঁকা সৈকতে ঘোরাঘুরি করে অনেক ভালো লাগছে। সৈকতে হাতেগোনা মানুষজন দেখা যাচ্ছে। তবে রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ, তাই খাওয়া দাওয়া করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সৈকতে নামার মুখে রয়েছে শামুকঝিনুকসহ বার্মিজ পণ্যের সহস্রাধিক দোকানপাট। যা এখন পুরোপুরি বন্ধ। তবে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত হচ্ছেন তারা।

হোটেল সীগালের ফ্রন্ড ডেস্ক ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ বলেন, হোটেলের ১৭৯টি কক্ষ রয়েছে। পর্যটক না থাকায় সব রুম খালি পড়ে রয়েছে। আর ৬০ শতাংশ ছাড় দিয়েও পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। হোটেল কক্সটুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে সবমিলিয়ে একশো থেকে দুশো পর্যটক রয়েছে। তাও আবার কাল থেকে আর দেখা যাবে না। তবে রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের টানা ৭ থেকে ৮ দিনের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামবে, তখন ব্যবসাবাণিজ্যও চাঙা হবে। এখন তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারের রোজাতেও মাত্র ৫টি রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হয়েছে। বাকি সমিতির আওতাভুক্ত ১২০টি রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। সমিতির আওতাভুক্ত ছাড়াও সবমিলিয়ে ৪ শতাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে। এগুলোও রমজান উপলক্ষে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এসব রেস্তোরার কর্মচারীদের এক মাসের বেতনবোনাস অগ্রিম দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আর ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন থেকে খোলা হবে সব রেস্তোরাঁ।

কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সব কটি হোটেল, রেস্তোরাঁয় সংস্কারের কাজ চালানো হচ্ছে। এগুলোর ৬০ শতাংশ কর্মচারীকে ঈদের অগ্রিম বেতনবোনাস দিয়ে বাধ্যতামূলক এক মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। পুরো রমজান মাসে পর্যটক টানতে হোটেলগেস্ট হাউস ও রিসোর্টগুলোর কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কক্ষের ভাড়া পড়ছে। তবে আশা করছি, ঈদের ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটবে কক্সবাজারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাফ নদীতে মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রশস্ত হচ্ছে ৫৬ কিমি সড়ক